মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টা দিকে নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪০ বছর।
তিনি স্ত্রী শাহ্দিল-ই-আফরোজ (আলো), দুই মেয়ে তাজবিতা ও তানবিতা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার বাড়ি নাটোর শহরের প্রাণকেন্দ্র কানাইখালী পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তানভীর নাটোর চৌধুরী বাড়ির শামসুল আলম খান চৌধুরীর দ্বিতীয় ছেলে।
নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
পারিবারিক সূত্র জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ মে সকাল পৌনে ৬টার দিকে দেশ ট্রাভেলসের একটি যাত্রীবাহী কোচে ঢাকা যাওয়ার পথে জেলা গুরুদাসপুরের কাছিকাটা এলাকায় বিপরীতগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মকভাবে আহত হন তানভির। এরপর থেকে এ ফুটবলার পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছর পঙ্গুত্ব জীবন-যাপন করছিলেন।
এই সময়ের মধ্যে কয়েক দফা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর আর্থিক সংকটের কারণে আর এগোয়নি চিকিৎসা। এরপর থেকে নাটোর শহরের চৌধুরী বাড়ির নিজ বাসভবনে শয্যাশায়ী অবস্থায় ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালের দিকে তার অবস্থার অবনতি ঘটনলে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানেই চিকিৎসাধীন তানভীরের অবস্থায় মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি আর্থিক সংকটে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হয়েছে খ্যাতিমান এ ফুটবলারের।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানা যায়, ১৯৯৫ সালে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ঢাকার মাঠে পেশাদারি খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন এক সময়ের জাতীয় দলের দাপটে ফুটবল খেলোয়াড় তানভীর চৌধুরী।
১৯৯৮ সালে এশিয়া কাপ খেলার মাধ্যমে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। ২০০০ সালে দেশ সেরা ফুটবলারের খ্যাতি পান তিনি। এরআগে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন উত্তর বঙ্গের খ্যাতিমান ফুটবলার আল মামুনের নজর কাড়েন তানভীর। এরপর থেকে আল মামুনের তত্বাবধায়নে দক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।
ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, ওমান, উজবেকিস্তান, কাতার, লন্ডনসহ প্রায় ১৪টি দেশের মাটিতে জাতীয় দলের হয়ে বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন তিনি। খেলতেন লেফট মিডফিল্ডার হিসাবে।
মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্র, ফেনী সকার, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, আবাহনী ক্রীড়া চক্র, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মতো নামি-দামি ফুটবল টিমে খেলে তানভীর কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০০৫ সালে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের প্রথম প্রতিষ্ঠার বছরেই রানার্সআপ ট্রফি জিতিয়ে দেওয়া ছিল তার ক্যারিয়ারের সেরা অবদান।
জানা যায়, মঙ্গলবার বাদ এশা শহরের কাচারী মাঠে (কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ) তার জানাজা শেষে গাড়িখানা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হবে। শেষবারের মতো দেখতে প্রিয়জনসহ ভক্তরা তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে।
এদিকে সেরা ফুটবলার ও জাতীয় দলের সাবেক মিডফিল্ডার রিয়াজ আলম খান চৌধুরী তানভীরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন- স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান খান, পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, প্রেসক্লাব সভাপতি জালাল উদ্দিন, জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার সোহেল রেজাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৮
জিপি