সবচেয়ে বাজে অবস্থা হয়েছে জেরার্ড পিকের। বেচারা।
বক্সের পা প্রান্তে থাকা পিকে তাকে অফসাইডের ফাঁদে ফেলার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারার খেসারত গুনতে হয় বার্সাকে। ২৮ মিনিটে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের সঙ্গে দল দখলের লড়াই করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন পিকে। অবস্থা দেখে মনে হয়েছে বেশ বড় চোটই পেয়েছেন। জন্মদিনের আনন্দটা এবার গেলং আর কি।
বার্সার ক্ষতি অবশ্য ম্যাচের আগেই হয়ে গেছে। ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন নিয়মিত গোলরক্ষক সিলেসেন। তার বদলে নামা আন্দ্রে টের স্টেগানকে বেশ বড় পরীক্ষায়ই ফেলে দেয় ভ্যালেন্সিয়া। তবে গোল হজম করলেও তাতে স্টেগানের দায় কমই দেওয়া যায়। বিশেষ করে বার্সার রক্ষণ এই ম্যাচে বেশ ছন্নছাড়াই মনে হয়েছে।
খেলার শুরুর ১ মিনিট পরই প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন ভ্যালেন্সিয়ার দানিয়েল পেরেজো। পুরো ম্যাচে বেশ কয়েকবার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যান বার্সা গোলরক্ষক। আবার সেই সঙ্গে কিছু ভাগ্যের ছোঁয়াও আছে। বেশ কয়েকবার ভ্যালেন্সিয়ার আক্রমণ বার্সার গোলবারে লেগে ফিরে আসে।
বার্সার প্রাণভোমরা মেসিও এই রাতে ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যুয়ে বেশ কিছু গোল মিস করেন। এরই ফাঁকে ৩০ মিনিটে নিজেদের পেনাল্টি অঞ্চলে দানিয়েল ওয়াসকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন বার্সা ডিফেন্ডার সার্জি রবার্তো। ডান পায়ের জোরালো শটে গোল আদায় করে নেন পেরেজো।
গোল খাওয়ার মিনিটখানেক পরেই খেলায় ফেরে বার্সেলোনা। নেলসন সেমেদোকে ফাউল করে বার্সাকে পেনাল্টি উপহার দেন ভ্যালেন্সিয়ার টনি লাটো। বাঁ পায়ের নিচু শটে গোল আদায় করে নেন মেসি। চলতি মৌসুমে লা লিগায় এটি তার ২০তম গোল। বলার অপেক্ষা রাখে না, চলতি আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা বার্সা অধিনায়ক। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তারই সতীর্থ লুইস সুয়ারেসের গোল তার চেয়ে ৬টি কম।
গোল দিয়ে উজ্জীবিত বার্সা বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছড়া করেছে। ৪২ মিনিটে মেসির করা কর্নার কিক থেকে বল পেয়েও গোলবারের বাঁ পাশে পাঠিয়ে দেন। এরপর মেসির শট ফিরিয়ে দেন ভ্যালেন্সিয়া গোলরক্ষক। মিনিট দুয়েক পর সবচেয়ে সহজ সুযোগটি মিস করেন মেসি। ক্রোয়েট মিডফিল্ডার ইভান রাকিতিচের উঁচু করে বাড়িয়ে দেওয়া বলে ঠিকমত পা ছোঁয়াতে পারলেই গোলের দেখা পেতেন এই আর্জেন্টাইন। পা লাগিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু টাইমিং গড়বড় হয়ে যাওয়ায় তা আর হয়নি।
ম্যাচে বার্সার ভুলত্রুটি অনেক। কিন্তু ভ্যালেন্সিয়ার প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে। নেহাত কপাল মন্দ তাই বেশ কয়েকটি গোল মিস হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ মিনিটে এক ম্যাচেই তৃতীয়বারের মতো বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। এবার ভ্যালেন্সিয়ার অ্যালেনার শট বার্সার গোলবারে প্রতিহত হয়। রক্ষণেও বেশ ভালো করেছে দলটি। বিশেষ করে গোলরক্ষক নেতো। একাই প্রায় ৮বার মেসি-কৌতিনহোদের গোলবঞ্চিত করেছেন তিনি।
ম্যাচের ৬১ মিনিটেই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিতে পারতো ভ্যালেন্সিয়া। পিকের অনুপস্থিতিতে দুর্বল হয়ে পড়া বার্সার রক্ষণকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন মোরেনো। দশ জনকে দিয়ে রক্ষণ সামলাতে থাকা ভ্যালেন্সিয়া এবার টের স্টেগানের মুন্সিয়ানার কারণে গোলবঞ্চিত হয়। পেরেজোর সাজিয়ে দেওয়া বলে আলতো টোকা মেরে গোল করতে গিয়েছিলেন মোরেনো। কিন্তু টের স্টেগানের কাছে প্রতিহত হয় সেই শট।
ম্যাচের ৬৪ মিনিটে সবচেয়ে জরুরি মানে সমতায় ফেরানোর কাজটা করেন মেসি। এবার নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ‘কাতালুনিয়ার রাজা’। ভিদালের হালকা পাস নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গোলবারের বিশ গজ দূর থেকে লক্ষ্যভেদ করে চলতি আসরে নিজের গোল সংগ্রহ ২১-এ নিয়ে যান মেসি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ১০ ম্যাচে গোল করার কীর্তি গড়েছেন তিনি। ২০১৩ সালের জানুয়ারির পর থেকে এটাই তার সেরা।
মেসির সমতাসূচক গোলটির পর দুই দলের খেলাই রঙ হারাতে থাকে। ভ্যালেন্সিয়া তাদের রক্ষণ আরো জমাট বাধিয়ে ফেলে। যে করেই হোক ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ার প্রবণতা পেয়ে বসে তাদের। বার্সাও আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেনি। ফলে ড্র নিয়েই খুশি হতে হচ্ছে তাদেরও।
এই ড্রয়ে লিগের শীর্ষে থাকা বার্সার পয়েন্ট হলো ২২ ম্যাচে ৫০। দুইয়ে থাকা অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের সংগ্রহ ২১ ম্যাচে ৪৪ পয়েন্ট। আর সমান ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে রিয়াল মাদ্রিদ।
বাংলাদেশ সময়: ০২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৯
এমএইচএম/টিএ