শেষ পর্যন্ত ঘরের সমর্থকদের সামনে বুক ফুলিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। দুই-দুইবার পিছিয়ে পড়েও অতিরিক্ত সময়ের গোলে ৩-২ ব্যবধানে কেরালাকে হারিয়ে ফাইনালে পা রেখেছেন জামাল ভূঁইয়ারা।
জয়ের জন্য ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে চট্টগ্রাম আবাহনী। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে ফ্রি-কিক নেন জামাল ভূঁইয়া। কিন্তু কেরালার রক্ষণভাগে সুযোগ খুঁজে নিতে পারেনি তার সতীর্থরা।
৫ম মিনিটে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের ভেতর ত্রাস সৃষ্টি করেন চট্টগ্রাম আবাহনীর মন্টেনিগ্রো ফরোয়ার্ড লুকা রতকোভিচ। ১১ মিনিটে আরিফুল ইসলামের ক্রস থেকে সতীর্থরা মাথা ছোঁয়াতে পারলে এগিয়ে যেতে পারতো স্বাগতিকরা।
১৬ মিনিটে লুকার শট বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে কেরালার ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে। ১৯ মিনিটে কেরালার দুর্বল শট লুফে নেন গোলরক্ষক মোহাম্মদ নেহাল। এর পরের মিনিটে লুকা-দিদিয়ের-চিনেদু ম্যাথিউ ওয়ান টু ওয়ান পাস খেলে ঢুকে পড়েন প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের ভেতর।
কিন্তু এবারও ফিনিশিংয়ের দুর্বলতায় গোলের সুযোগ নষ্ট করে কোচ মারুফুল হকের দল। ২৩ মিনিটে দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ে কেরালার রক্ষণ সাম্রাজ্যে ত্রাস তুলেও গোলের দেখা পাননি জামাল ভূঁইয়া। ২৪ মিনিটে অধিনায়ক মার্কাস জোসেফ বুলেট গতির শট নিয়েছিলেন। অবশ্য সেই শট চলে যায় চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে।
২৯ মিনিটে এগিয়ে যায় কেরালা। সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন হেনরি কিসেক্কা। তাকে ব্লগ করতে গিয়ে উল্টো পড়ে যান ডিফেন্ডার রিয়াদুল হাসান রাফি।
কিসেক্কা ডান পায়ের শটে পরাস্ত করেন গোলরক্ষক নেহালকে। এ নিয়ে চার ম্যাচে চার গোল করে টুর্নামেন্টের শীর্ষ তালিকায় ওঠে এলেন এই উগান্ডা স্ট্রাইকার। সমান গোল করে একই তালিকায় আছেন তেরেঙ্গানুর ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ব্রুনো সুজুকি।
গোল হজমের পরের মিনিটে সুযোগ হারায় জামাল ভূঁইয়ারা। ৩৬ মিনিটে আবার এগিয়ে যেতে পারতো কেরালা। তবে মার্কাস জোসেফের শটটি চলে যায় প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট ঘেঁষে। পরের মিনিটে জামালের পাস থেকে লুকা আবারও সুযোগ নষ্ট করেন। প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা প্রথমার্ধ শেষ করে ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে।
বিরতি থেকে ফিরেই জাল খুঁজে পায় চট্টগ্রাম আবাহনী। ৪৬ মিনিটে চার্লস দিদিয়েরের গোলে সমতায় ফেরে তারা। আরিফুলের ক্রস থেকে কেরালার জালে বল জড়িয়ে দেন এই আইভরিয়ান মিডফিল্ডার।
৬২ ও ৬৩ মিনিটে দুই দুইবার গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে স্বাগতিকরা। তারই ফল ভোগ করে ৮০ মিনিটে আবার পিছিয়ে পড়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। স্বাগতিকদের রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে বল নিয়ে দ্রুত গতিতে ডি-বক্সে ঢুকে ডান পায়ে কোনাকুনি শটে ব্যবধানটা ২-১ করেন অধিনায়ক জোসেফ।
দ্বিতীয়বার পিছিয়ে পড়ে প্রাণপণে লড়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী। একের পর এক আক্রমণের ঢেউ তুলে তারা। ৮৮ মিনিটে সহজ সুযোগ পেয়ে তা হাতছাড়া করে মারুফের দল। এর পরের মিনিটে স্বস্তির গোল পান জামাল ভূঁইয়ারা। এবারও চট্টগ্রাম আবাহনীকে বাঁচিয়ে দেন দিদিয়ের। আরিফুলের বদলি হিসেবে নামা কাউসার আলী রাব্বির পাস থেকে কেরালার জালে বল জড়িয়ে জোড়া গোল পূরণ করেন এই আইভরিয়ান তারকা। নির্দিষ্ট সময় ২-২ ব্যবধানে সতমায় থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে আক্রমণ চালায় দু’দল। ১০৫ মিনিটে ঘরের সমর্থকদের উল্লাসে ভাসান চিনেদু ম্যাথিউ। এবারও ক্ষিপ্রবেগে উপরে ওঠে বল ক্রস করেন রাব্বি। সেই বলে প্রথমে ভলি নেন ম্যাথিউ। কিন্তু বল বাধা পায় কেরালার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে।
ফিরতি বলে পুনরায় হেড দিয়ে গোলের আনন্দে মেতে ওঠেন নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডার ম্যাথিউ।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে মাঠ ছাড়েন চট্টগ্রাম আবাহনী অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন ডিফেন্ডার প্লেন পিটার। বাকি সময় গোল শোধের জন্য আক্রমণের ঢেউ তুলে কেরালা। ম্যাচ শেষের চার মিনিট বাকি থাকতে গোলের সহজ সুযোগ হারায় তারা। ১১৯ উল্টো দশ জনের দল হয়ে পড়ে কেরালা।
হঠাৎ মেজাজ হারিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার ইকবল জনকে মাথায় ঢুঁশ মেরে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন হেনরি কিসেক্কা। বাকি সময় জমাট রক্ষণভাগ দিয়ে কেরালাকে আর গোল শোধ করতে দেয় মারুফের দল। দুর্দান্ত জয়ে ফাইনালে ওঠে যায় শিরোপা পুনরুদ্ধারে নামা চট্টগ্রাম আবাহনী।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৯
এমএ