ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২১ মে ২০২৫, ২৩ জিলকদ ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত-মৃত্যু, সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:৪৮, মে ২১, ২০২৫
বাড়ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত-মৃত্যু, সমন্বিত উদ্যোগের তাগিদ ফাইল ফটো

ঢাকা: গত কয়েক মাসের তুলনায় চলতি মাসে এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুরোগী এবং মৃত্যুর সংখ্যা।

চলতি বছর ডেঙ্গু রোগের অবস্থা আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে দ্রুতই কার্যকরী সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে আক্রান্তের হার বেশি হবে এবং বাড়বে মৃত্যুর সংখ্যা। চলতি বছরে ঢাকার বাইরেও রোগীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ছে। সিটি করপোরেশনের, পৌরসভা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগ গ্রহণ না করলে ডেঙ্গুতে আশঙ্কাজনক হারে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্যে দেখা যায়, মঙ্গলবার (২০ মে) গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ১০১ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে, চলতি বছরে এ যাবত ডেঙ্গুতে ২৩ জন মারা গিয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৫ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে) ছয় জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১০ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৪ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুই জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) এক জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন রয়েছেন।  

চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ৬৩৭ জন। এর মধ্যে ৬০ দশমিক শূন্য শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক শূন্য শতাংশ নারী রয়েছেন।  

গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ মে পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল দুই হাজার ৬৫৫ জন এবং একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৩৩ জন।

২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এক হাজার ৪১৪ জন এবং একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১২ জন।

২০২২ সালের ১ জানুয়ারি ২০ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ২৩৪ জন এবং একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি।  

উপরোক্ত তিন বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরে গত তিন বছরের থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেশি। এছাড়াও মৃত্যুর সংখ্যাও ২০২৪ সাল বাদে বাকি দুই বছর থেকে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছরে যেহেতু ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, তাই এখন থেকেই ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর বা তার আগের বছর ডেঙ্গুর যে ধরন সেরোটাইপ ডেন-২ সক্রিয় ছিল এবং কিছু ডেন-৩, সেটা যদি এবছরও থাকে তাহলে অত বেশি ডেঙ্গুরোগী পাওয়া যাবে না। আর নতুন কোন সেরোটাইপ ডেন-১, ৪ বা তিনও যদি বেশি থাকে, তাহলে ডেঙ্গুরোগী বেশি পাওয়া যাবে এবং গুরুতর রোগীর সংখ্যাও বাড়বে।

আইইডিসিআর এর উপদেষ্টা বলেন, প্রাকৃতিক কারণে এখন থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের লোকালয় শহর নগর পরিচ্ছন্নতার হার একটুও উন্নতি হয়নি। লোকালয় পরিষ্কার না করলে, বৃষ্টির পানি জমলে, আর্দ্র ও উত্তপ্ত পরিবেশ ডেঙ্গুর প্রজনন ত্বরান্বিত করে।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণ হয় নাই। গরিব মানুষের ডেঙ্গু হলে তাকে সেকেন্ডারি হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি এভাবে যদি চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় তাহলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমে যাবে।
   
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক কবিরুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, এখন থেকে নিয়মিত এডিস মশা বাড়বে। বৃষ্টি হলে যখন বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় পাত্রে পানি জমা হবে এবং সেই পানি যদি আমরা নিয়মিত অপসারণ করতে না পারি তাহলে এডিস মশার প্রজনন বাড়বে। এডিস মশার প্রজননের সাথে ডেঙ্গুও বাড়বে।

বর্তমানে এডিস মশার ঘনত্ব কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন এডিসের যে ঘনত্ব পাচ্ছি তা গতবছর এই সময়ের থেকে কিছুটা বেশি রয়েছে, তাই আমরা ধারণা করছি আগাম ব্যবস্থা না নিলে চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি আছে।

অগ্রিম কি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে জানতে চাইলে এ গবেষক আরও বলেন, প্রথমত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে করতে হবে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভাগুলো তার কাজগুলো সঠিকভাবে করবে। নিশ্চিত করতে হবে কোথায় যেন কোনো পাত্র পরে না থাকে, পরে থাকা পাত্রে যেন পানি না জমে। যদি এমন হয় পাত্রগুলো অপসারণ করা যাচ্ছে না, তাহলে সেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া ব্যক্তিপর্যায়ে বাড়িঘরেও গ্যারেজে পার্কিংয়ে ফুলের টবে যেন পানি জমে না থেকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

আরকেআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।