ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ফরেনসিকের বেহাল দশা: অযোগ্যদের দেয়া হয় পদোন্নতি

মাজেদুল নয়ন; স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৪
ফরেনসিকের বেহাল দশা: অযোগ্যদের দেয়া হয় পদোন্নতি ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: শিক্ষক সংকটে দেশের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রাপ্তদের মাধ্যমে হাতুড়ে করে রাখা হয়েছে এ বিভাগকে।

অথচ রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগ।

ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্বল ও অবৈজ্ঞানিক পাঠ্যসূচি, মনিটরিং’র অভাব, যোগ্যদের মূল্যায়ন না করা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে দুর্বল হয়ে রয়েছে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ।

গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টিতে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে রয়েছে শিক্ষক সঙ্কট। দেশে ফরেনসিক মেডিসিনের অধ্যাপক রয়েছেন মাত্র ১ জন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চক্রবর্তীর চাকুরির বয়সসীমা রয়েছে আর ৩ বছর।

দেশের অনেক মেডিকেল কলেজে এ বিষয়ে কোন শিক্ষক না থাকলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সবগুলো পদই সম্পূর্ণ রয়েছে। এখানে চলতি অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক হাবিবুজ্জামান ও মোস্তাক রহিম স্বপন।

আইনশৃঙ্খলায় গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরাধ ও অপরাধী চিহ্নিত করতে গুরুত্বপূর্ণ হওয়াতে এ বিভাগের পদোন্নতিগুলোও হয়ে থাকে রাজনৈতিক বিবেচনায়। আর তাই ডিগ্রি না থাকলেও দেয়া হয় পদোন্নতি। অথচ ডিগ্রিধারী লেকচারার হিসেবেই রয়েছেন বছরের পর বছর।

এ বিষয়ে ডিপ্লোমা এবং এমসিপিএস ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা ৩০ এর বেশি নেই। তবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিবেচনায় থাকে রাজনৈতিক দিকটি। আবার অনেক শিক্ষকেরই উন্নত কোনো প্রশিক্ষণ নেই।

সর্বশেষ গত মাসের প্রথম সপ্তাহে ১৬৯৫ জন চিকিৎসকের পদোন্নতির সঙ্গে ফরেনসিকের ৫ জন চিকিৎসকেরও পদোন্নতি হয়। দুজন সহকারী অধ্যাপককে সহযোগী অধ্যাপক এবং নতুন তিনজনকে সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।  

নতুন পদোন্নতি মিলিয়ে এ বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যা ১৩ জন এবং সহকারী অধ্যাপক মাত্র ১৫ জন। এরআগে গত ৩১ মার্চ পদন্নোতি পেয়ে সহযোগী অধ্যাপক হয়েছেন ৮ জন এবং সহকারী অধ্যাপক হয়েছেন ৪ জন।

এখানে চিকিৎসকদের নিয়ে এমনই রাজনীতি চলে যে, ২০০১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ড. নাসিমুল ইসলামকে। আওয়ামী শাসনামলে নিয়োগ হওয়ার কারণে ২০০২ সালে বিএনপি ও চার দলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে পিএসসি তাকে না জানিয়েই । সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি কখনোই কোন দল করিনি। সব সময় যোগ্যতার বিচার করেছি। ’

দেশের উপর অভিমান এই অধ্যাপকের। তিনি বলেন, ‘দেশের জন্যে করার ইচ্ছে ছিল। তাই ইউএনডিপি’র মোটা অংকের বেতন ছেড়ে দেশে চাকুরি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হলে আমাকে না জানিয়েই পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) আমার সুপারিশ বাতিল করে। ’

দেশের ফরেনসিক বিভাগ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে এই অধ্যাপক বলেন, ওদের মিশন নেই, ভিশন নেই। এতে এ বিভাগের কোন উন্নতি হবে না। অথচ এ বিষয় ছাড়া দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে আসবে না। যেসব দেশে ফরেনসিক বিভাগ দৃঢ়, তাদের আইনশৃঙ্খলাও ভালো।

দেশের চাকুরির অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, যেখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি হয়, সেখানে উন্নতি হবে না। অনেক সময় যোগ্যরা লেকচারার হিসেবে পড়ে থাকে আবার অনেক অভিজ্ঞ ও মেধাবীরা বছরের পর বছর লেকচারার হিসেবে কর্মরত থাকে।

খোজ নিয়ে এমন চারজন শিক্ষকের কথা জানা গেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে একই পদে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের শিক্ষক ডা. মোজাহারুল ইসলাম শাওন গত ১৮ বছর ধরে প্রভাষক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমে এনাটমির শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হলেও, ২০০১ সাল থেকে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে শিক্ষকতা করছেন তিনি।

অথচ ডিএফএম এবং এমসিপিএস, দুটো ডিগ্রীই রয়েছে তার। একই সঙ্গে খুলনা মেডিকেল কলেজের ডা. আতাউর রহমান এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডা. জোবায়দুর রহমান দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রভাষক পদে রয়েছেন। তবে এই দুই চিকিৎসক বর্তমান সরকারের সময়ে এসে চলতি দ্বায়িত্বে সহকারী অধ্যাপকের দ্বায়িত্ব পালন করছেন।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন, ডা. ফজলুল করিম। বয়জ্যেষ্ট হলেও তার চেয়ে নিয়োগের, দক্ষতায় এবং কর্মে কনিষ্ঠ অনেকেই এখন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পদোন্নতি পেয়েছেন।

বাংলাদেশ সময় ১১০৮ ঘন্টা; জানুয়ারি ০৯, ২০১৩
এমএন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।