ঢাকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেছেন, রোগীদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই নিতে হবে। রোগী ও তাঁদের অভিভাবকবৃন্দ চিকিৎসাসেবা নিয়ে যাতে দুশ্চিন্তায় না থাকেন তা নিশ্চিত করতে হবে।
মঙ্গলবার (১২ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকের নীচতলায় শহীদ ডা. মিলন হলে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এবারে দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘স্বল্পমূল্যে সর্বোত্তম সেবা’ (নার্সেস: এ ফোর্স ফর চেঞ্চ; কেয়ার ইফেক্টিভ, কস্ট ইফেক্টিভ)।
কামরুল হাসান খান বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাতক বিভাগের এনআইসিইউ’র চিকিৎসাসেবার উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে মুমূর্ষু ও নানা রোগে আক্রান্ত নবজাতকদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।
যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ চিকিৎসাসেবার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, আধুনিক নার্সিংয়ের জননী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল শুধু নার্সদের কাছে নয়; তিনি ছিলেন মানবজাতির আদর্শ।
যিনি মুখের আহার রোগীর মুখে তুলে দিতেন। নিদ্রাহীন সেবা দিয়ে সারাজীবন অসুস্থ মানুষদের সুস্থ করে তুলতেন।
ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে সকল বাধা ও কষ্টকে জয় করে হাসিমুখে কথা বলে, নিজের হাতে ওষুধ খাইয়ে রোগীদেরকে সুস্থ করে তাঁদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।
মানুষ নিজেই তাঁর ভবিষ্যত নির্মাতা। নার্সগণ নিজ পেশার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার মাধ্যমেই এ পেশার ও নিজের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি করতে পারেন।
বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নার্সগণ এ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
বিএসএমএমইউ’র ভারপ্রাপ্ত সেবা তত্ত্বাবধায়ক সান্তনা রানী দাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জুলফিকার রহমান খান, নার্সিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহানা আখতার রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগে. জেনারেল (অব.) আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকের নীচে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূরালে পুষ্পস্তক অর্পণ করা হয়। এরপর বটতলা হতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য ৠালি বের হয়। ৠালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে। শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য আরো বলেন, পেশা হিসেবে নার্সিং অত্যন্ত সম্মানিত ও মহৎ পেশা। রোগীকে সুস্থ করে তুলতে নার্সদের ভূমিকা চিকিৎসকদের তুলনায় কোনো অংশেই কম নয়। তাই সেবক-সেবিকাদের আর্তপীড়িতের সেবায় আরো বেশি সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। তিনি নার্সিং সেবার গুণগত মানবৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের ব্যবস্থাসহ যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার কথাও উল্লেখ করেন।
১৮২০ সালের ১২ মে ইটালির ফ্লোরেন্স শহরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আধুনিক নার্সিং শিক্ষা ও সেবার পথিকৃত মহিয়সী নারী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল। যিনি তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন সৃষ্টিকর্তার সেরা সৃষ্টি মানুষের সেবায়। তাঁকে বলা হয়, লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প।
বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইটেড হসপিটালেও পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নার্সেস দিবস। দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে ছিল হসপিটালের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের নার্স, ডাক্তার ও কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে সকলবেলা হসপিটাল চত্বরে ৠালি, কেক কাটা, মিষ্টিমুখ ও উন্নত মানের খাবার পরিবেশন।
দিবসটি উপলক্ষে বিকেলবেলা অনুষ্ঠিত হয় অলোচনা অনুষ্ঠান। এ সময় চিফ নার্সিং অফিসার সকল নার্সদের নিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করেন এবং নার্সিং পেশার মহত্ব তুলে ধরেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ফিলিপিনের রাষ্ট্রদূত ভিনসেট ভিভেনসি টি বানডিলও।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন নার্সরা হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার মেরুদন্ড কিন্তু সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের দেশের মেয়েরা নার্সিং পেশায় আসতে চায় না। শুধু আমাদের দেশেই নয় বাইরের দেশেও দক্ষ এবং অভিজ্ঞ নার্সদের অনেক চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময় ১৯২৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৫
এমএন/কেজেড