ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বাংলাদেশের ইলিশ পেয়েও হতাশ কলকাতার ব্যবসায়ীরা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
বাংলাদেশের ইলিশ পেয়েও হতাশ কলকাতার ব্যবসায়ীরা! ফাইল ছবি

কলকাতা: চলতি বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশি ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার প্রথম ধাপে ১০ ট্রাক অর্থাৎ ৬০ টনের মতো ইলিশ বেনাপোল বন্দর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছ বাজার হাওড়া ফিশ মার্কেটে পৌঁছাবে মধ্য রাতে।

শুক্রবার (২২ সেপ্টম্বর) থেকে কলকাতার পাইকারি বাজারে জমে উঠবে বাংলাদেশের ইলিশের বেচাকেনা। সব ঠিক থাকলে শনিবার থেকে কলকাতার খুচরা বাজারে মিলবে সেই সব ইলিশ।

কিন্তু মোটেও খুশি হতে পারছেন না কলকাতার ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ। তিনি জানিয়েছেন, ইলিশ আমদানি সাথে সাথে ১২ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরা এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। ২২ দিন বন্ধ থাকলে এবারও অনুমোদন পাওয়া ইলিশ ভারতে সম্পূর্ণ আসবে না। ১১ অক্টোবর পর্যন্ত খুব বেশি হলে ৮০০ থেকে এক হাজার টন ইলিশ আসতে পারে কলকাতায়।

তবে বিগত বছরগুলোর মতো বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গবাসী পূজার মৌসুমে ফের একবার স্বাদ নিতে পারবেন বাংলাদেশের রুপালি ইলিশের। ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদের মতে এটাই যা সুখবর!

বাংলাদেশের উপহার হিসেবে ইলিশ আমদানিকে দেখতে চান না মাকসুদ। তিনি বলেন, আমার বহু বাংলাদেশি বন্ধু আছে। যাদের কাছে সংবাদমাধ্যমে ‘উপহার’ কথাটায় ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। গতবার অনেকে মনে করেছিলেন উপহার মানে বিনামূল্যে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসছে ভারতে। আদতে তা নয়। নির্দিষ্ট দামে আমরা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ইলিশ কিনছি। আমাদের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে সেসব মাছ কিনছে ইলিশপ্রেমী কলকাতাবাসী। আর উপহার হলে তো বিনামূল্যে পেতাম। তা তো নয়। তবে অবশ্যই এক ধরনের উপহার হিসেবে দেখব। কারণ, সারা বছর বাংলাদেশে ইলিশের চাহিদা থাকলেও ভারতে তার সুযোগ নেই। একমাত্র পুজার মৌসুমে মেলে।

কলকাতার বাংলাদেশ মিশনের তরফে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার প্রায় সারা বছর অনুমতি সাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানি করে থাকে পশ্চিমের দেশগুলোতে। উদ্দেশ্য, প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাতে বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত না হয়। সেদিক থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশি কোথায়? সে কারণেই সারা বছর বাংলাদেশের ইলিশ মেলে না পশ্চিমবঙ্গে। তবে বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে বাঙালির প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা। সেই উৎসবের বাড়তি আমেজ দিতে এই সময়টায় বাংলাদেশের ইলিশ আসে ভারতে। ফলে বাংলাদেশের ইলিশ অবশ্যই উপহারস্বরূপ।

উপহার বা শর্তসাপেক্ষে অনুমতি, যার মত থাকুক না কেন, সারা বছর এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করে থাকে ইলিশপ্রেমী বঙ্গবাসী। কারণ, একমাত্র পূজার মৌসুমেই কলকাতায় মেলে বাংলাদেশের ইলিশ।

ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, এক কেজি বাংলাদেশের ইলিশ পাইকারি বাজারে ১ হাজার থেকে ১২শ রুপি কেজি দরে বিক্রি হবে। ৭শ গ্রামের ইলিশগুলো ৭০০-৮০০ রুপির মধ্যে দাম থাকবে। তবে বাক্স খোলার পর খুচরা বাজারে দাম কত গুণ বেশি হবে, তা দুই-একদিনের মধ্যেই বোঝা যাবে।

কলকাতাবাসী সঞ্জয় দে বলেন, আমার পরিবার অসম্ভব ইলিশপ্রেমী। ইলিশের সিজনে হামেশাই ইলিশ ওঠে আমাদের হেঁসেলে। তবে পশ্চিমবঙ্গের ইলিশের যা দাম। ইচ্ছা থাকলেও সব সময় সাধ্যে কুলায় না। বাংলাদেশের ইলিশ বাজারে এলে একবার হলেও অবশ্যই কিনব।

ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মকসুদ জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এবার সেরকম ইলিশ ধরা পড়েনি। বঙ্গবাসী যেগুলো বাংলার ইলিশ ভাবছে, তা আসলে ভারতের গুজরাট এবং মিয়ানমারের ইলিশ।

প্রসঙ্গত, কলকাতার বাজারে এক কেজি থেকে সোয়া কেজি ইলিশ মিলছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ রুপিতে। এখন দেখার কত দামে কলকাতাবাসীর পাতে ওঠে বাংলাদেশের ইলিশ!

বাংলাদেশ বাণিজ্য মন্ত্রালয়ের বিবৃতি থেকে জানা গেছে, শর্ত সাপেক্ষে ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেককে ৫০ টন করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমতির মেয়াদ আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। দুর্গাপূজা সামনে রেখে গত বছর ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টন। আগের বছরগুলোতেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। অনুমোদনের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিগত বছরগুলোতে যে সব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে অনেকে নির্ধারিত পরিমাণ মাছ রপ্তানি করতে পারেননি। অনেকে একেবারেই রপ্তানি করতে পারেননি।

তবে এবার আশা করা যাচ্ছে, অনুমোদনের নির্দিষ্ট পরিমাণ মাছ আসবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বৃহস্পতিবার আনোয়ার মাকসুদ ফের রপ্তানি সময়সীমা বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রালয়ে আবেদন করেছেন। তবে আনোয়ার এটাও জানিয়েছেন, সবটাই নির্ভর করছে কী পরিমাণ মাছ ধরা পড়বে এবং প্রতিষ্ঠানের রপ্তানির সক্ষমতার ওপর। কারণ, এবার বাংলাদেশেও বিগত বছরগুলোর মতো ইলিশ ধরা পড়েনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টম্বর ২১, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।