ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

আখাউড়া থেকে পরীক্ষামূলক ট্রেন গেল নিশ্চিন্তপুরে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২৩
আখাউড়া থেকে পরীক্ষামূলক ট্রেন গেল নিশ্চিন্তপুরে

আগরতলা (ত্রিপুরা): দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আখাউড়ার গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুরের আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে পৌঁছেছে পরীক্ষামূলক ট্রেন।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে স্থানীয় সময় ১২টা ৩০ মিনিটে পাঁচটি বগিযুক্ত বাংলাদেশের একটি ট্রেন সীমান্ত অতিক্রম করে ত্রিপুরায় প্রবেশ করে।

সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা ট্রেনটি তল্লাশি করে সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেনটি ত্রিপুরায় প্রবেশের অনুমতি দেন।  

ধীরগতিতে ট্রেনটি নিশ্চিন্তপুরের আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশনের এক নাম্বার প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ায়। ট্রেনটি দেখতে ভিড় করে স্থানীয় জনতা। সকাল থেকে নানা বয়সী নারী-পুরুষ কাঁটাতারের বেড়ার ওপারের দিকে তাকিয়ে ছিলেন কখন আসছে এ বাংলাদেশি ট্রেন। স্টেশনে এসে ট্রেনটি দাঁড়ানো সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষ ট্রেনের সঙ্গে সেলফি তুলে আবার কেউ ভিডিও কলে দূরে থাকা আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবদের দেখান বাংলাদেশের ট্রেন এসে পৌঁছেছে। এ সময় ট্রেন থেকে একে একে নামেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্ব জোনের পরিচালক আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, এদিন ট্রেনটি আগরতলায় আসার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল ও ভারতের মধ্যে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হলো। এর আগে থেকেই বাংলাদেশ-ভারত রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এ অঞ্চলে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য যোগাযোগ এবং চিকিৎসাক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি আশা করেন।

তিনি বলেন, ট্রেনটি বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে ছেড়ে প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যেই নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে এসে পৌঁছেছে। ট্রেনটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবার চালিয়ে আসা হয়েছে তাই ধীরগতিতে চালানো হয়েছে। স্বাভাবিক গতিতে চললে আরও অনেক কম সময়েই পৌঁছে যাবে।

অপরদিকে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার গুনিদ্র চৌধুরী সংবাদ মধ্যমকে বলেন, এদিনই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর স্টেশন থেকে ট্রেনটি কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই নিশ্চিন্তপুর স্টেশনে এসে পৌঁছেছে। প্রয়োজনীয় সরকারি কাজ সেরে আবার বাংলাদেশে ফিরে যাবে। মোট ছয়জনের একটি দল বাংলাদেশ থেকে এসেছেন বলেও জানান তিনি।

 তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর অবশেষে এ রুটে মিটার গেজ ট্রেন পরিষেবা চালু করা সম্ভব হলো। কারণ বাংলাদেশের এ অঞ্চলে মিটার গেজ ট্রেন চলছে। প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে পণ্যবাহী ট্রেন নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত আসবে। পরে যাত্রীবাহী ট্রেনের বিষয়টি পরিকল্পনা করা হবে।

আগামী ১ নভেম্বর এ পথে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন পরিষেবা চালু করার কথা রয়েছে বলেও জানান ইঞ্জিনিয়ার গুনিদ্র।

ভারত সরকার ইতোমধ্যে নিশ্চিন্তপুর স্টেশনটিকে উত্তর পূর্ব ভারতের প্রথম রেলওয়ে ইমিগ্রেশন স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের ছয়জন রেলওয়ে কর্মকর্তা আসার মধ্য দিয়ে এ ইমিগ্রেশন সেন্টারের কার্যক্রমের সূচনা হলো। সব মিলিয়ে এ পথে নিয়মিত ট্রেন চালু হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার।

আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেলপথে ট্রেনের চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু হলো।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে খালি বগি নিয়ে ট্রেনটি ভারতের নিশ্চিন্তপুরে যাত্রা করে। এ উপলক্ষে গঙ্গাসাগর রেলস্টেশনে কাস্টমস কার্যক্রম শুরু হয়।

রেলের পরিচালক, সহকারী পরিচালক, চালকসহ সাতজন সেখানে তাদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ট্রেনটি নিয়ে ভারতের নিশ্চিন্তপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের প্রকল্প পরিচালক মো. আবু জাফর মিয়া জানান, আগামী ১ নভেম্বর ভার্চ্যুয়ালি বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে আখাউড়া থেকে আগরতলা রুটের ট্রেনের উদ্বোধন করবেন। প্রথম দিকে পণ্যবাহী ট্রেন ও পরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে দুদেশের মধ্যে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আখাউড়া-আগরতলা রেলপথের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশ রয়েছে ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার। করোনা মহামারিসহ নানা সংকটের কারণে দেড় বছর মেয়াদি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে পাঁচ বছরেরও বেশি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০২৩
এসসিএন/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।