কলকাতা: কলকাতার সবচেয়ে বড় ইফতার মাহফিলে অংশ নিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) পার্ক সার্কাস ময়দানে কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে আয়োজিত ‘দাওয়াত-এ ইফতার’ এ সাধারণ মানুষের সঙ্গে ইফতার করলেন তিনি।
কলকাতা করপোরেশনের আয়োজিত ইফতারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনোকালেই রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন না। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবুও তার উপস্থিতি যে সম্প্রীতির বার্তা দেয় সেটি সহজে বোঝা যায়। এবারও তাকে ঘিরে এক উন্মাদনা এবং উৎসাহ তৈরি হয়েছিল সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে।
মঙ্গলবার ইফতার মজলিশে মুখ্যমন্ত্রীকে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে অভ্যর্থনা জানান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ইফতার মজলিশে মুখ্যমন্ত্রী কিছু না বললেও পরে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, সকলকে জানাই পবিত্র রমজান মাসের আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। আজ, কলকাতা পৌরসংস্থা আয়োজিত রমজান উপলক্ষে দাওয়াত-এ-ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সকলের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিলাম। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের- এই ধারা চিরকাল অক্ষুণ্ন থাকুক। একতাই সম্প্রীতি - এটাই আমাদের মন্ত্র। সর্বধর্ম সমন্বয়বাদ প্রতিটি মানুষের মননে ছড়িয়ে পড়ুক। সব ধর্মই আমার কাছে সম্মানের এবং শ্রদ্ধার। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-বর্গের ঊর্ধ্বে, আমাদের সকলের এই অচ্ছেদ্য বন্ধনের গ্রন্থন যেন অটুট থাকে এই প্রার্থনা আমার। এই বাংলা কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের এবং এই বাংলার মাটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাটি। শান্তি-সৌহার্দ্যের বন্ধনে একত্রিত হয়ে বাংলার সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য, মন্ত্রী জাভেদ খান, মন্ত্রী গোলাম রব্বানি, মন্ত্রী শশী পাঁজা, বিধায়ক সুজিত বসু, মোশারফ হোসেন, দেবাশিস কুমার, অতীন ঘোষ, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মল মাঝি, সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, বৌদ্ধ ধর্মগুরু অরুনজ্যোতি ভিক্ষু, সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্য সতনাম সিং আলুওয়ালিয়া, রেড রোডের ঈমামে ঈদাইন ক্বারী ফজলুর রহমান, কলকাতা মেয়রপত্মী ইশমাতআরা হাকিম, পশ্চিমবঙ্গের ইমাম সংগঠনের মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, বাকিবিল্লাহ সরদার, মানিকতলা দরবারের কুতুবউদ্দিন তরফদার, পীরজাদা কাসেম সিদ্দিকী, মিল্লি কাউন্সিলের সাহুদ আলমসহ প্রমুখ।
নাখোদা মসজিদের ইমাম মাওলানা শফিক কাসেমি রমজানের গুরুত্ব নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ যে সম্প্রীতির পীঠস্থান সে বিষয়টি তুলে ধরেন ইমাম। ইফতারের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। এছাড়া এদিনের ইফতার মজলিশে, কলকাতার পার্ক সার্কাস, রাজার বাজার ও এন্টালি এলাকার প্রচুর সংখ্যক রোজাদার ব্যক্তি ইফতারে অংশ নেন।
এর আগে সোমবার পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় অবস্থিত ফুরফুরা শরিফে ইফতার অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল ইফতারের আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এলেই আমাকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে কেন। আমি তো সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেই যাই। আমি যখন দুর্গাপূজা করি বা কালীপূজা করি তখন তো এই প্রশ্ন করেন না। আমি যেমন খ্রিস্টানদের অনুষ্ঠানেও যাই, তেমনি আমি ইফতারেও অংশ নিই। একইভাবে আবার পাঞ্জাবিদের ধর্মস্থান গুরুদুয়ারাতেও যাই, গুজরাটিদের ডান্ডিয়া, হোলিতেও অংশ নিই। কই তখন তো প্রশ্ন ওঠে না। আমি মনে করি, বাংলার মাটি সম্প্রীতির মাটি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০২৫
ভিএস/এসএএইচ