জাতীয় প্রেসক্লাবের ‘টেলিকম নেটওয়ার্কভিত্তিক দেশীয় অ্যাপলিকেশন ও কনটেন্ট সার্ভিস শিল্প বিকাশের জন্য রোডম্যাপ’ শীর্ষক সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ৬টি শীর্ষ স্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসপাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য), বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) এবং কনটেন্ট প্রোভাইডারস অ্যান্ড এগ্রিগেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (সিপিএএবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন বেসিস সভাপতি একেএম ফাহিম মাসরুর।
এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিসিএস সভাপতি ফয়েজুল্লাহ খান, আইএসপিএবি সভাপতি আকতারুজ্জামান মঞ্জু, বাক্য সভাপতি আহমাদুল হক, বিএমপিআইএ সভাপতি মোস্তফা রফিকুল ইসলাম, সিপিএএবি সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং বিসিএসয়ের পরিচালক মোস্তফা জব্বার বক্তব্য রাখেন।
এ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিগত বছরগুলোতে দেশে টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এ মুহূর্তে দেশে ৯ কোটির বেশি টেলিফোন সংযোগ আছে। এর বড় অংশই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। দেশে বর্তমানে ২৫ হাজার কোটি টাকার মোবাইল সেবার বাজার আছে।
কিন্তু এর মাত্র ২ ভাগেরও কম কনটেন্ট ও অ্যাপলিকেশনের অংশ। যেকোনো উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে এ হার ১০ ভাগেরও বেশি। এ হিসাবে দেশে মোবাইল কনটেন্ট ও অ্যাপলিকেশনের বাজার ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
এটি আগামী ২ থেকে ৩ বছরে ৫ হাজার কোটি টাকায় নেওয়া যাবে। ফলে ন্যূনতম ১ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে বক্তারা জানান। এ মুহূর্তে দেশে ৩০ হাজারেরও বেশি আইটি প্রফেশনাল এবং উদ্যোক্তা দেশের বাইরের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে কাজ করছে। সঙ্গে নিজেদের দক্ষতারও প্রমাণ দিচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, দেশের অভ্যন্তরে এ বিশাল সম্ভাবনা যদি তরুণদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যায়, তাহলে একদিকে বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে দেশীয় কনটেন্ট ও অ্যাপলিকেশনের তৈরির মাধ্যমে ৯ কোটির বেশি টেলিকম গ্রাহক বিভিন্ন ধরনের ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভাস) সেবা উপভোগ করতে পারবেন।
প্রত্যাহিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এসব ভাস সেবা জরুরি। গত কবছরে টেলিকম শিল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও যথাযথ ও পরিপূর্ণ ব্যবহার সম্ভব হয়নি। এখনো ভাসের ব্যবহার (কনটেন্ট ও অ্যাপলিকেশনের) শুধু রিংটোন ও ওয়ালপেপারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দেশের মধ্যেই এ শিল্প গড়ে উঠলে ভবিষ্যতে দেশের বাইরেও এ সেবা রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
এ সম্মেলনে আয়োজক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বলেন, টেলিকম নেটওয়ার্কভিত্তিক দেশীয় অ্যাপলিকেশন ও কনটেন্ট সার্ভিস শিল্প বিকাশের জন্য উপযুক্ত ব্যবসায়িক পরিবেশ (ইকো সিস্টেম) সৃষ্টি হয়নি । এর প্রধান তিনটি কারণ অনফেয়ার রেভিনিউ শেয়ারিং, এন্ট্রি বেরিয়ার এবং ইন্টার অপারেবিলিটি।
এখনো পর্যন্ত ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভাস) তথা দেশীয় কনটেন্ট ও অ্যাপলিকেশনের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা গাইডলাইন বা নীতিমালা নেই। কোনো গাইডলাইন বা নীতিমালা না থাকতে এ শিল্পে দেশীয় নতুন উদ্যোক্তাদের প্রবেশের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না।
উদ্যোক্তাদের জন্য তাদের উদ্ভাবনের মেধাসত্ত্ব (আইপিআর) সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই টেলিকম নেটওয়ার্কভিত্তিক দেশীয় অ্যাপলিকেশন ও কনটেন্ট সার্ভিস শিল্প বিকাশে নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তার (আর্থিক বা প্রশিক্ষণ সহায়তা) কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেই বক্তারা বলেন।
প্রসঙ্গত, ৩১ জানুয়ারি ২০১২ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস (ভাস) গাইডলাইনের খসড়া প্রণীত হয়। যা সরকারের অত্যন্ত সময়পোযোগী পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট শীর্ষ অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রস্তাবিত ভাস গাইডলাইনের দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি তোলেন।
সরকারের পক্ষ থেকে তরুণ ও মেধাবী উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা বা স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন। সুশিক্ষিত, দক্ষ এবং চাহিদা অনুপাতে জনবল তৈরিতে সব বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল কনটেন্ট ও অ্যাপলিকেশনের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত বলে তারা মনে করেন।
সঠিক ও প্রয়োজনীয় নীতি বাস্তবায়ন ও সহায়তা প্রদান করা গেলে শুধু টেলিকমভিত্তিক স্থানীয় কনটেন্ট ও অ্যাপলিকেশন শিল্পে আগামী ৩ বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার স্থানীয় বাজার তৈরি করা সম্ভব।
তাই এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ৬টি তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠনের শীর্ষ নেতারা মোবাইল টেলিকম অবকাঠামো ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা (যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্যসেবা) প্রদান করে সাধারণ নাগরিকদেরও জীবন মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানান।
এ উদ্যোগে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সম্মেলনে উপস্থিত বক্তারা। এ ছাড়াও প্রস্তাবিত ভাস গাইডলাইনের দ্রুত বাস্তবায়নের জোর দাবিও উপস্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ সময় ১৮২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর