স্কলারশিপ ছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা বেশ ব্যয়বহুল। একথা সবারই জানা।
এ বছরের নভেম্বর মাসেই বিল গেটস এবং ম্যালিন্ডা গেটসের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে অনলাইন ক্লাসরুম ‘ইডিএক্স (edX)’। এ উদ্যোগকে সহযোগিতা করছে বিখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেস্ট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন, ২০১৩ সালে অনলাইন এ ক্লাসরুমে শিক্ষার্থী সংখ্যা লাখে চলে যাবে।
অলাভজনক এ প্ল্যাটফর্মের স্লোগান হচ্ছে ‘ভবিষ্যতের জন্য অনলাইন এডুকেশন: সবার জন্য, যেকোনো জায়গা থেকে, যেকোনো সময়’। অনলাইনে পড়াশোনার উদ্যোগ ধীরে ধীরে এগিয়েই যাচ্ছে।
বিশেষ করে ডিজিটাল যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয় এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে উঠছেন। যেমন আরেক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অনলাইন ক্লাসরুমে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করছেন। অন্যদিকে অনলাইন ক্লাসরুমের পাইওনিয়ার ‘খান একাডেমি’ তো এখনও এগিয়ে চলছে বীরদর্পে।
অন্যদিকে অনেকেই এমন শিক্ষাকে খুব একটা কার্যকরি বলতে নারাজ। তথ্য মতে, এমন শিক্ষার ফলে শুধু প্রযুক্তি ব্যবহারে মানুষের জ্ঞান বাড়ছে। নন কমিউনিকেটিভ ক্লাসরুম কখনও একজন শিক্ষার্থীর উজ্জল প্রতিভা বিকাশে কাজ করতে পারে না। যেমন বিখ্যাত লেখক ও প্রযুক্তির তত্বগত বিজ্ঞানী আয়ান বোগোস্ট এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এ যুগে লেকচার যদি হয় বাজে। তখন সেটা ক্লাসরুম হোক কিংবা ডিজিটাল পদ্ধতি হোক; এতে কোনোই লাভ নেই।
আয়ান আরও বলেন, ডিজিটাল লেকচার এখনও লেকচার নামেই পরিচিত। অনলাইন পরীক্ষা এখনও পরীক্ষা নামেই পরিচিত। অর্থাৎ এখনও খুব একটা পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি। ক্লাসরুমকে চিন্তা করেই ডিজিটাল ক্লাসরুমের কনসেপ্ট তৈরি হয়েছে। নতুনত্ব নেই। ডিজিটাল মাধ্যমে পড়াশোনার পদ্ধতি হতে হবে সম্পূর্ণ আলাদা। ভিন্ন ধরনের কনসেপ্ট। সেটা নিয়েই সবার ভাবা উচিত।
অন্যদিকে সুগতা মিত্রর উদ্যোগ অনেকটাই ভিন্ন। সুগতা মিত্রকে দেয়াল ভেদের কারিগর বলা হয়। তিনি দেয়াল ভেঙ্গে সেখানে কম্পিউটার আটকিয়ে দেন। এরপর কম্পিউটারে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ। নয়া দিল্লি থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালির বিভিন্ন জায়গায় তিনি এ গবেষণা পরিচালনা করেন।
তার মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া। এ থেকে শিশুরা নিজেরাই কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিত্যনতুন বিষয় শেখার সুযোগ পায়। এ ঘটনাটি সুগতা মিত্রের কাছে শিশু বিপ্লবের মতো। সুগতার এ কাজটিকেও অনলাইন মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ বলা যায়। তবে তার স্টাইলটি ভিন্ন।
ইথিউপিয়াতে নিকোলাস নিকগ্রোপন্টি নামে একজন ‘ওয়ান ল্যাপটপ পার চাইল্ড’ নামে একটি ফাউন্ডেশন চালান। তিনি প্রতিটি শিশুর হাতে ল্যাপটপ তুলে দিতে চেষ্টা করেন। সঙ্গে দেন অক্ষর জ্ঞান নিয়ে বিভিন্ন গেমস, ছবি, কার্টুনসহ বিভিন্ন ই-বুক।
পুরো প্রোগ্রামটি ইথিউপিয়ার দরিদ্র শিশুদের মধ্যে চালানো হয়। এই প্রোগ্রামের ফলাফল সারাবিশ্বে যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে এ ল্যাপটপ নিয়েও আছে বিতর্ক। অনেকেই বলছেন মূলধারার শিক্ষা থেকে বাইরে গিয়ে খুব একটা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
সমালোচকদের উদ্দেশ্য করে নিকোলাস বলেন, যদি একটি শিশু বিনা খরচায় ঘরে বসে শিক্ষক ছাড়াও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তাহলে অন্যের এ নিয়ে এতো মাথাব্যথার কোনো কারণ নেই। শিক্ষার জন্য স্কুলেই যেতে হবে এমন কোনো নীতিও নেই।
নিকোলাস বলেন, এ পৃথিবীতে শিক্ষাও যেন ধনীদের দখলে চলে গেছে। বিজ্ঞাপনের এ বিশ্বে শিক্ষাও বিজ্ঞাপনের পণ্য হয়ে যাচ্ছে। আমি মনে করি, শিক্ষা হতে হবে অবাধ, বিনা খরচে। শিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত। এজন্যই আমি মনে করি, অনলাইন ক্লাসরুম হবে ফ্রি। বিনা খরচে প্রতিটি মানুষ নিজের ইচ্ছামত পড়াশোনা করবে কম্পিউটারের সামনে বসেই। ভবিষ্যতের ক্লাসরুম হবে এমনই।
তবে শিক্ষাখাতে পরিবর্তন শুধু প্রযুক্তির পরিবর্তন নয়। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কে জড়ানোরও কিছু নেই। তবে এও সত্যি স্ক্রিনে পড়াশোনায় তৈরি হয় না কোনো কমিউনিটি। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কও তৈরি হয় না। দুজনের মধ্যে ডায়লগও হয় না। আলোচনাও তেমন হয়ে ওঠে না।
তবে লাভ একটাই। সেটা হলো, যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে নিজের পছন্দমত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। এও বা কম কি! মূল ধারার শিক্ষামাধ্যমকে বন্ধ করে কখনও অনলাইন শিক্ষা সামনের সারিতে আসবে না। তবে অনলাইন শিক্ষা হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের বিকল্প শিক্ষার আরেকটির নতুন ধারা।
বাংলাদেশ সময় ২০২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর- eic@banglanews24.com