ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

২০১২: সেরা দশ প্রযুক্তিপণ্য

হাসান শাহরিয়ার হৃদয়, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১২

ঢাকা: প্রযুক্তির জন্য ২০১২ সালটি অত্যন্ত সফল বললেও অত্যুক্তি হবে না। বছরের প্রথম থেকেই নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্য বাজার মাত করেছে, যা শেষদিকে এসে রীতিমতো প্রযুক্তির লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

এ লড়াইয়ে হাতিয়ার হিসেবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করেছে নিজ নিজ সেরা পণ্য। বাজারে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা এমনই সেরা দশ পণ্যের তালিকা তুলে ধরা বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য:

স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৩
গত কয়েক বছরে নাটকীয়ভাবে স্মার্টফোনের বাজার দখল করে নেওয়া স্যামসাং চলতি বছর তাদের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ফোনটি বাজারে ছেড়েছে- গ্যালাক্সি এস৩। ৪.৮ ইঞ্চির অ্যান্ড্রয়েড আইসক্রিম স্যান্ডুইচ চালিত ফোনটি প্রথমবারের আইফোনকে হারিয়ে বাজারের শীর্ষস্থান দখল করেছে। মুক্তির প্রথম তিন মাসে এটি বিক্রি হয় ১ কোটি ৮০ লাখ ইউনিটি, যেখানে আইফোন ৫ বিক্রি হয় ১ কোটি ৬২ লাখ ইউনিট।

আইফোন ৫
এলাম, দেখলাম, জয় করলাম- কথাটি আইফোনের জন্যই প্রযোজ্য। আইফোনের অন্যান্য সংস্করণের মতোই পঞ্চম সংস্করণও প্রযুক্তি বিশ্বকে কাঁপিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে বাজারে আসে। ৪ ইঞ্চি রেটিনা ডিসপ্লে, এ৬ প্রসেসর, আইওএস ৬, কোয়াড কোর গ্রাফিক্স প্রসেসর একে আইফোন পরিবারের সেরা ফোনে পরিণত করেছে। এখন পর্যন্ত বিক্রির দিক দিয়ে গ্যালাক্সি এস৩’র চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও ২০১৩ সালের প্রথম প্রান্তিকেই আবার শীর্ষস্থান দখল করতে পারে এটি।

আইপ্যাড ৩
চলতি বছর নিজেদের অন্যান্য পণ্যের মতোই আইপ্যাডকেও পরিপূর্ণ রূপ দিয়েছে অ্যাপল। যার ফলস্বরুপ সেপ্টেম্বরে বাজারে আসে তৃতীয় প্রজন্মের আইপ্যাড। রেটিনা ডিসপ্লে, কোয়াড কোর গ্রাফিক্স, ফুল এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং, এ৫এক্স চিপসেট একে দ্রুত ট্যাবলেট বাজারের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। বাজারে আসার প্রথম তিন দিনেই ৩০ লাখ ইউনিট বিক্রি হয় আইপ্যাড ৩।
আইপ্যাডের ক্ষুদ্র সংস্করণ (ফ্যাবলেট) আইপ্যাড মিনিও চলতি বছর একই সময়ে বাজারে এসেছে।

মাইক্রোসফট সার্ফেস
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য চলতি বছর নিজেই হার্ডওয়্যার নির্মাণে নেমে গেছে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। বছরের শেষদিকে বহু প্রতীক্ষার পর বাজারে আসে উইন্ডোজ ৮ আরটি চালিত মাইক্রোসফট সার্ফেস। কিবোর্ড-মাউসের যুগ পেরিয়ে যে সামনে টাচ যুগের শুরু হচ্ছে, তারই ইঙ্গিত পরবর্তী প্রজন্মের এই ট্যাবলেট।

তবে এর উইন্ডোজ ৮ প্রো চালিত মূল সংস্করণ সার্ফেস প্রো আগামী জানুয়ারিতে বাজারে আসবে, যা ট্যাবলেট হলেও ক্ষমতার দিক দিয়ে একটি পরিপূর্ণ কম্পিউটারের মতোই হবে। মাইক্রোসফটের মতে, আশির দশকের পর থেকে কম্পিউটার ব্যবহারধারায় এতোবড় পরিবর্তন আর আসেনি।

ম্যাকবুক প্রো উইথ রেটিনা ডিসপ্লে
আইফোনের বিখ্যাত রেটিনা ডিসপ্লে ল্যাপটপেও আনতে যাচ্ছে অ্যাপল, এমন গুজব শোনা গিয়েছিল আগেই। চলতি বছরের মাঝামাঝি তা বাজারে আসে। বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্ক্রিন রেজ্যুলুশনের ল্যাপটপ এটি। উচ্চমূল্য সত্ত্বেও তাই দারুণ পাতলা ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের ল্যাপটপটি প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইন্টেল কোর আই ৭ আইভি ব্রিজ প্রসেসর, ইউএসবি ৩.০, বিল্ট-ইন স্টোরেজ সংবলিত উচ্চগতির ল্যাপটপটিকে প্রযুক্তিবিদরা এযাবৎকালের সবচেয়ে ‘পারফেক্ট’ ল্যাপটপ বলে মন্তব্য করেছেন।

নোকিয়া লুমিয়া ৯২০
মোবাইল বাজারের প্রাক্তন সম্রাট নোকিয়াকে চলতি বছর দেখা গেছে নতুন রূপে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনের উন্মাদনার বিপরীতে তারা জোর লড়াই চালিয়ে গেছে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ফোন নিয়ে। বছর শেষে বাজিমাত করেছে উইন্ডোজ ফোন ৮ চালিত লুমিয়া ৯২০ দিয়ে। আকর্ষণীয় ডিসপ্লে, ওয়্যারলেস চার্জিং, এনএফসি (নেয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন), সেন্সিসিটিভ টাচ ইত্যাদি সেরা ফিচার নিয়ে বাজারের অন্যান্য স্মার্টফোনের সঙ্গে ভালোই পাল্লা দিচ্ছে এটি।
 
আসুস তাইচি
উইন্ডোজ ৮’র নতুন সব বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে যেসব ব্যতিক্রমধর্মী ডিভাইস বাজারে আসতে শুরু করেছে, তাদের মধ্যে আসুস তাইচি অন্যতম। অত্যন্ত পাতলা এ ডিভাসিটি একই সঙ্গে ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট। এর দুই পাশে রয়েছে দুটি স্ক্রিন, যাদের ব্যবহার করে একই ডিভাইসে দুই কম্পিউটার চালানোর স্বাদ পাওয়া যাবে। বাইরের স্ক্রিনটি টাচ হওয়ায় ল্যাপটপের ডালা বন্ধ করলেই তা ট্যাবলেট হয়ে যাবে। কিংবা দুটো স্ক্রিনকে আয়নার মতোও (মিরর মোড) ব্যবহার করা যাবে।

নোকিয়া পিওরভিউ ৮০৮
২০১২ সালের আরেকটি সাড়া জাগানো ফোন নোকিয়া পিওরভিউ। এমনিতে সাধারণ গড়নের এই ফোনটির একটি বৈশিষ্ট্যই চোখ কপালে তোলার মতো- এর ক্যামেরা ৪১ মেগাপিক্সেল! বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে ঝড় তোলার জন্য নোকিয়ার এ প্রয়াসটি আরও জনপ্রিয় হতো, যদি এতে অ্যান্ড্রয়েড বা উইন্ডোজ ফোন ব্যবহার করা হতো। তারপরও এযাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্যামেরা ফোন হিসেবে এটি শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে।

গুগল নেক্সাস
আগামী বছর অ্যান্ড্রয়েডকে বিশ্বব্যাপী আরও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য গুগল নিজেই তৈরি করা শুরু করেছে সবচেয়ে কম মূল্যের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস। তাই চলতি বছর পরপর বাজারে এসেছে নেক্সাস ৪ (ফোন), নেক্সাস ৭ (ফ্যাবলেট) ও নেক্সাস ১০ (ট্যাবলেট)। তুলনামূলক শস্তা এই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে অ্যাপলের ডিভাইসগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে গুগল আশা করছে। তবে দাম কম হলেও কনফিগারশনের ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করেনি গুগল, যার ফলে অ্যান্ড্রয়েডের শতভাগ পাওয়া যাবে প্রতিটি ডিভাইস থেকেই।

আসুস প্যাডফোন ২
প্যাডফোন ২ দিয়ে আবারও নিজেদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছে আসুস। অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের দারুণ এই সমন্বয় প্রযুক্তিপ্রেমীরা ভালো না বেসে পারেননি। গ্রাহকদের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজস্ব পণ্য ব্যবহার করানোর জন্য তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠানটির এ চমৎকার আইডিয়ারও প্রশংসা করেছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।