ঢাকা: গত কয়েক বছরের মতো ২০১২ সালটিও ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কারে ভরপুর। বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি আবিষ্কারের নেশায় মেতেছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্র-অধ্যাপক থেকে শুরু করে সাধারণ বিজ্ঞানপ্রেমীরা।
কৃত্রিম মেঘ
চলতি বছরের সেরা আবিষ্কার- কৃত্রিম মেঘ। পেশায় শিল্পী হলেও এ অসাধ্য সাধন করেছেন ডেনমার্কের বার্নট স্মিল্ড। একটি কক্ষে পরিমিত তাপমাত্রা, জলীয় বাষ্প ও আলো নিশ্চিত করার পর একধরনের বিশেষ স্প্রে ব্যবহার করে কৃত্রিম মেঘ তৈরি করেন তিনি, যাতে আসল মেঘের মোটামুটি সব বৈশিষ্ট্যই ছিল। যদিও তার তৈরি করা এ মেঘ মাত্র কয়েক মুহূর্ত স্থায়ী হয়, তারপরও এটি গবেষণার নতুন দরজা খুলে দিয়েছে। এমনকে এখান থেকে আবহাওয়া নিয়ে গবেষণায়ও নতুন দিদন্ত উন্মোচিত হতে পারে। টাইম ম্যাগাজিন একে ২০১২ সালের সেরা আবিষ্কার বলে নির্বাচিত করেছে।
কিউরিওসিটি রোভার
চাঁদে মানুষ যাওয়ার পর থেকে প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় মাইলফলক অর্জিত হয়েছে চলতি বছরই- সফলভাবে মঙ্গলগ্রহে অবতরণ করেছে নাসার মঙ্গলযান কিউরিওসিটি। এজন্য এযাবৎকালের জটিলতম অবতরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় একে। প্রায় ২৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত প্রযুক্তির সর্বাধুনিক এ নিদর্শন বিজ্ঞানীদের একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত। মঙ্গল সম্পর্কে জানা যাচ্ছে অজানা অনেক তথ্য।
প্রজেক্ট গ্লাস
গুগলের এই অভিনব প্রযুক্তিটি এক কথায় ব্যাখ্যা করতে গেলে বলতে হয়- চশমার ভেতর কম্পিউটার। হ্যাঁ, সায়েন্স ফিকশনের কল্পনা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে গুগলের বহুমূল্য এ প্রজেক্টের মাধ্যমেই! এর ফলে চশমার কাঁচেই কম্পিউটার/ফোনের ডিসপ্লের মতো যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য ভেসে উঠবে, ব্যবহারকারীরা সেখান থেকে ফটো শেয়ার, ভিডিও চ্যাট, ইন্টারনেট চালানো, ম্যাপ দেখা থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজই করতে পারবেন। বর্তমানে এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার চলছে, ২০১৪ সাল নাগাদ বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে পারে।
৪কে টিভি
চলতি বছরের শুরুর দিকে জনপ্রিয় হতে থাকা ত্রিমাত্রিক টিভির (থ্রিডি টিভি) রেশ না কাটতেই বাজারে এসেছে এলজি’র ৮৪ ইঞ্চি আলট্রা এইচডি ৪কে টিভি। বর্তমানে প্রচলিত ফুল এইচডি ও থ্রিডি টিভির ছবির কোয়ালিটিই যেখানে হতবাক করে দেওয়ার মতো, সেখানে ৪কে টিভির রেজুল্যুশন এসবের চেয়েও চারগুণ বেশি! এমনকি এতে চলার মতো উপযুক্ত কোনো মিডিয়া ফরম্যাটও তৈরি হয়নি এখনও। তবে ইতোমধ্যেই এ নিয়ে কাজ করা শুরু করেছে সনি, প্যানাসনিক, শার্পের মতো অন্যান্য টেক জায়ান্টরা। তাই দানবাকৃতির এ যন্ত্রই যে পরবর্তী প্রজন্মের টিভি হতে যাচ্ছে, তার আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রোজেকশন কিবোর্ড
২০১২ সালের শেষনাগাদ বাজারে এসেছে পরবর্তী প্রজন্মের অপটিক্যাল বা প্রোজেকশন কিবোর্ড। ছোট্ট দেশলাইয়ের মতো একটি বাক্সের মধ্যেই এবার কিবোর্ড নিয়ে ঘুরতে পারবেন। যে কোনো সমতল স্থানে সেখান থেকে আলো ফেললেই লেজারের তৈরি কিবোর্ড হয়ে যাবে, যা কাজ করবে ঠিক প্রচলিত কিবোর্ডের মতোই। গত কয়েক বছরে ব্লুটুথ প্রযুক্তি ও আলোকবিদ্যার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে এটি সম্ভব হয়েছে বলে নির্মাতারা মন্তব্য করেছেন।
লিট্রো ক্যামেরা
ডিজিটাল ক্যামেরা বিপ্লবের পর ফটোগ্রাফির জগতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন চলতি বছর আবিষ্কৃত এ ক্যামেরা। এতোদিন পর্যন্ত ক্যামেরায় ছবি তোলার সময় আলোর কেবল একটি তল প্রবেশ করতো, যার ফলে ছবিকে উপযুক্ত করে তোলার জন্য কৃত্রিম জুম, ফোকাস ইত্যাদি ব্যবহার করতে হতো। কিন্তু এ লিট্রো ক্যামেরার লেন্সে সামনে থাকা বস্তুর সম্পূর্ণ আলোর ক্ষেত্রটি প্রবেশ করে, যার ফলে ছবির শতভাগ কোয়ালিটি অক্ষুণ্ণ রেখে ফোকাস, জুমসহ নানা পরিবর্তন করা সম্ভব। টেলিস্কোপে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাকাশবিজ্ঞানে নতুন মাত্রা আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। খুব শিগগিরই একে কেন্দ্র করে পরবর্তী প্রজন্মের ক্যামেরা বাজারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বয়ংক্রিয় টায়ার
টায়ার পাংচারের যুগ শেষ হলো বলে। চলতি বছরের শেষদিকে বাজারে এসেছে স্বয়ংক্রিয় সংকোচন-প্রসারণ টায়ার। এর ভেতরে একটি বিশেষ ধরনের প্রেসার রেগুলেটর ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে টায়ারের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে বাতাস সংকুচিত হয়ে একটি চেম্বারে ঢুকে যাবে। চাপ কমে গেলে পুনরায় বাতাস এসে টায়ারকে সাধারণ অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে। এর ফলে টায়ার পাংচার হওয়া তো বন্ধ হবেই, পাশাপাশি অন্তত দশগুণ বেড়ে যাবে গাড়ির টায়ারের স্থায়ীত্ব।
ডিপ-সি চ্যালেঞ্জার সাবমেরিন
বিখ্যাত হলিউড চিত্রপরিচালক জেমস ক্যামেরনের ডিজাইন করা এ সাবমেরিনটির ফলে এ মাধ্যম এ বছর মানুষ সমুদ্রের গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। ১২ টন ওজনের ২৪ ফুট লম্বা সাবমেরিনটি এক হাজার অ্যাটমবস্ফিয়ার চাপ (৩টি যুদ্ধের ট্যাঙ্কের সমান) সহ্য করে ক্যামেরনকে নিয়ে নিয়ে সেখানে পৌঁছায়। থ্রিডি ক্যামেরার মাধ্যমে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের ছবি ধারণ করেন ক্যামেরন।
লিপ মোশন
কিবোর্ড আর মাউস যুগ শেষ করার জন্য পুরো বিশ্ব উঠেপড়ে লেগেছে। তার সর্বশেষ প্রমাণ লিপ মোশন নামক প্রযুক্তি। ছোট্ট একটি ডিভাইস কম্পিউটারের ইউএসবি পোর্টে যুক্ত করলেই প্রবেশ করতে পারবেন ইশারার জগতে। মনিটরের সামনে হাত ও আঙ্গুল নড়াচড়া করেই সারতে পারবেন সব কাজ। হাতের বিভিন্ন নড়াচড়া ও ইঙ্গিত বোঝার জন্য বিশেষ সেন্সর ব্যবহার করে থাকে যন্ত্রটি। ২০১৩ সালেই কিবোর্ড-মাউসের বদলে এ লিপ মোশন সংবলিত কম্পিউটার বাজারে আসতে পারে।
টকিং গ্লাভস
প্রতিবন্ধীদের জন্য গত কয়েক বছরে যেসব নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে, টকিং গ্লাভ তাদের নতুন সংযোজন। ইউক্রেনের একদল ছাত্রের গবেষণায় শ্রবণ, বাক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এ গ্লাভস তৈরি হয়েছে। এটি স্মার্টফোনের সঙ্গে যুক্ত করে কথা বলা ও শোনার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
বাংলাদেশন সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১২
আরআর