বিশ্বের সবচেয়ে সক্রিয় এবং শক্তিশালী সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক এখন আর্থিকভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠছে। ২০১২ সালের সবশেষ ত্রৈমাসিকে ৪০ ভাগ বিজ্ঞাপনী আয়ে অনলাইনের গুরুত্ব সে কথাই জানান দিয়েছে।
এ অর্জনে ফেসবুকের কোনো দ্বিমত নেই। ২০১২ সবশেষ ত্রৈমাসিকে ফেসবুকের রাজস্ব আয় বেড়ে ১৫৯ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এতে ৪০ ভাগ বাড়তি অবদান রেখেছে স্মার্টফোন এবং ট্যাবভিত্তিক মোবাইলনির্ভর বিজ্ঞাপন। সংবাদমাধ্যম সূত্র এ তথ্য দিয়েছে।
এ বাড়তি আয় ২০১২ সালের যেকোনো ত্রৈমাসিকের তুলনায় সর্বোচ্চ। এ প্রবৃদ্ধিও আসল কারণ অনুসন্ধানে ফেসবুকের শীর্ষ কর্তারা মোবাইল বিজনেস এবং বিজ্ঞাপনের নিত্যনতুন টুলসের কথা স্বীকার করেছেন। ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে এসে এ প্রবৃদ্ধি ৭৯ ভাগ বেড়েছে। এ অপ্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির পেছনে স্মার্টফোন এবং ট্যাব অ্যাডই সহায়ক চালিকা।
এ হিসাবে ফেসবুকের বার্ষিক অর্জিত প্রবৃদ্ধি ৪১ ভাগ বেড়ে ১৩৩ কোটি ডলার হয়েছে। আর এ ৪১ ভাগ প্রবৃদ্ধির মধ্যে ২৩ ভাগই এসেছে অনলাইন বিজ্ঞাপনের বদৌলতে। ২০১২ সালের চতুর্থ এবং সবশেষ ত্রৈমাসিকে শুধু মোবাইল বিজ্ঞাপন থেকে ১৪ ভাগ রাজস্বের হিসাবে ১৫৩ কোটি ডলার ঘওে তুলেছে ফেসবুক।
এ প্রসঙ্গে ফেসবুক সিইও মার্ক জুকারবার্গ জানান, রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ফেসবুকের জন্য বিজ্ঞাপনে অনলাইনের অবদানই সবচেয়ে বেশি। এ সত্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ খবওে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে ফেসবুক। তাৎক্ষণিকভাবে ইনডেস্কে ১.১৯ ডলার বেড়ে ফেসবুকের শেয়ারমূল্য ৩১.২৪ ডলারে উন্নীত হওয়া তারই প্রমাণ।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং গবেষক রিচার্ড গ্রিনফিল্ড জানান, এখন ফেসবুকে প্রতিদিন ৩০ লাখ ডলারের মোবাইল বিজ্ঞাপন প্রচার হয়। এ অঙ্কটা ২০১২ সালের তৃতীয় এবং চতুর্থ ত্রৈমাসিকে এসে হঠাৎ করেই নতুন আয়ের খাত নিজেকে মেলে ধরে।
স্মার্টফোন এবং ট্যাবে অনলাইন সংবাদ পাঠকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে নতুন বিজ্ঞাপনের চাহিদা তৈরি হয়েছে। শুরুতেই এ সাফল্য এ খাতের সূচনা মাত্র। আর তাতেই অনলাইন বিজ্ঞাপনে যে জোয়ার তৈরি হয়েছে তা থেকে এ বিজ্ঞাপনী বাজারের সীমা-পরিসীমা নির্ধারণ করা সত্যিই কঠিন।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের মে মাসে পাবলিক শেয়ারের তালিকাভুক্ত হয় ফেসবুক। এরপরই নানামুখী আর্থিক টানাপোড়েন আর জবাবদিহিতার তোপের মুখে পড়ে ফেসবুক। কিন্তু অনলাইন বিজ্ঞাপনে মোবাইল অ্যাডের নতুন তত্ত্ব ফেসবুককে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করে। বাজার গবেষকেরাও এ সত্যের পক্ষেই রায় দিয়েছেন।
২০১২ সালে মোবাইল বিজ্ঞাপন থেকে আয় হয় ৪০০ কোটি ডলার। এরই মধ্যে ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে এসে এ আয় তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে। আলোচ্য বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে এসে এ আয় ৭০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। নির্ভরযোগ্য বাজার গবেষক প্রতিষ্ঠান ই-মার্কেটার সূত্র এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার বিজ্ঞাপনী এজেন্সি ডিজিটাসের সিইও কলিন কিনসেলা জানান, এ মুহূর্তে স্মার্টফোন এবং ট্যাবে পণ্যভিত্তিক বিজ্ঞাপনের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। আর ফেসবুককে ২০১২ সালে আর্থিক সফল প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যেতে মোবাইল বিজ্ঞাপনই সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
আর্থিক এ বিজ্ঞাপনী সাফল্যের কথা বেশ ঘটা করেই জানালো ফেসবুকের হর্তাকর্তরা। এ নিয়ে বিস্তর এবং রিয়েল টাইম গবেষণা করেছে ই-মার্কেটার। গত বছরের পুরোটা সময়ে ১ কোটি অনলাইন অ্যাড শুধু ফেসবুকের মাধ্যমেই প্রচার হয়।
এ অনলাইন বিজ্ঞাপন তৈরি এবং প্রচার কাজ করেছে বিশ্বের ১ হাজার তিনশরও বেশি বিজ্ঞাপনী সংস্থা। এতে আঞ্চলিক অ্যাডের সংখ্যাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও কান্ট্রি ব্র্যান্ডিংয়ের প্রচারণা বাণিজ্যিকভাবে সফল প্রমাণিত হয়েছে।
সানফ্রানসিসকোর আর্থিক গবেষণা প্রতষ্ঠিান ট্রিগিটের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ক্রিস জেরিয়াস জানান, ফেসবুকের কারণে মোবাইল অ্যাডের অভূতপুর্ব এক বাজার তৈরি হয়েছে। ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই এর সুফল সমভাবে উপভোগ করছেন। এতে বাজার অর্থনীতির চাহিদা এবং সরবরাহের নীতিগত প্রতিফলনের বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গ ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসার সেরলি স্যান্ডবার্গ জানান, নতুন মোবাইল বিজ্ঞাপনী ধারণায় সঠিক ভোক্তাদের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাওয়া ছাড়াও পণ্য সম্পর্কে সরাসরি মতামত জানান অবারিত সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে বিপণন চ্যানেলের অতীতের সমস্যাগুলো দ্রুত অনুধাবন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ হয়েছে। ফলে এ কার্যক্রমের পুরোটাই সফল হচ্ছে। দ্রুত সঠিক গ্রাহকের কাছে পণ্য বিপণনে অনলাইন বিজ্ঞাপনদাতারাও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সক্রিয় ফেসবুক গ্রাহক স্মার্টফোন এবং ট্যাবের মাধ্যমে ৬৮ কোটি সোশ্যাল অ্যাপ ব্যবহার করেছেন। গত বছরের তুলনায় এ প্রবৃদ্ধি ৫৭ ভাগের ঘরকে ছাপিয়ে গেছে।
অনলাইন বিজ্ঞাপনীর এ সাফল্য প্রসঙ্গে ফেসবুকের চিফ ফিন্যান্সিয়্যাল কর্মকর্তা ডেভিড ইবারসম্যান জানান, আগের দুটি ত্রৈমাসিকে এ খাত থেকে আয়ের ব্যাপারে কোনো চিন্তাই ছিল না। কিন্তু এ খাতই মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব আর নজরদারি আদায় করে নিয়েছে।
শুরুতেই এ সাফল্য অনলাইন বিজ্ঞাপন দাতাদের অনুপ্ররণা জুগিয়েছে। আর এ পথ চলার এটা সবে শুরু। সামনে অনেক এগোনোর পথ আছে। কারণ অধিকাংশ বিজ্ঞাপনের বাজারই চলে যাচ্ছে অনলাইনের নিয়ন্ত্রণে। ক্রেতারা কাগুজে আর শারীরিক উপস্থিতি ছেড়ে ইন্টারনেটনির্ভর পণ্য বিকিকিনিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এটাই অনলাইন বিজ্ঞাপন সাফল্যের অন্যতম কারণ হয়ে ধরা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময় ১২৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৩