ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

অনলাইনে উত্ত্যক্তকরণ রোধে গ্রামীণফোনের উদ্যোগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৬
অনলাইনে উত্ত্যক্তকরণ রোধে গ্রামীণফোনের উদ্যোগ

ঢাকা: আগামী পাঁচ বছরে এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, পাকিস্তান এবং থাইল্যান্ডের বাজারে ৫০ কোটি তরুণ-তরুণী প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হবে।
 
তারা যেন অনলাইনের সুফল ভোগ এবং ইন্টারনেটের নেতিবাচক দিক থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে সে বিষয়ের ওপর শিক্ষা প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে গ্রামীণফোন এবং তার অভিভাবক কোম্পানি টেলিনর।

 
 
মঙ্গলবার (২১ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় গ্রামীণফোন।
 
সাইবারবুলিং বা সাইবার উত্ত্যক্তকরণ মূলত ইলেক্ট্রনিক কমিউনিকেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হয়ে থাকে, যার মূল উদ্দেশ্যই হলো উত্ত্যক্ত করা। বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী কোনো না কোনো সময়ে সাইবার বুলিংয়ের শিকার। ফলে অনলাইন নির্যাতন হ্রাসে শিক্ষার ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
 
গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস নেহাল আহমেদ বলেন, তরুণদের প্রতি বিশেষ নজর দিয়ে ইন্টারনেটে নিরাপত্তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গ্রামীণফোন ও টেলিনর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। টেলিনরের এশিয়া অঞ্চলের আওতায় আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে আনুমানিক ১০ কোটি তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তৈরি হবে। আর তাই সাইবার বুলিং কমানোর লক্ষ্যে এখন থেকেই এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমাদের উদ্যোগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
 
অনলাইন ওয়ার্ল্ড
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ওপর সাইবার হুমকি চিহ্নিত করতে ‘বি স্মার্ট ইউজ হার্ট’ শীর্ষক প্রোগাম নিয়েছে টেলিনর। প্রোগ্রামের আওতায় অনলাইন হুমকি সম্পর্কে শিশু ও অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে টেলিনর, যাতে কম্পিউটারের পাশাপাশি মোবাইলেও নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
 
তরুণদের নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহারবিধি সম্পর্কে আরও জানতে টেলিনর গ্রুপের প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে ‘প্যারেন্ট গাইড: হাউ টু টক টু ইওর চিল্ড্রেন অ্যাবাউট দ্য ইন্টারনেট’-এ।
 
এছাড়া (https://www.cybersmile.org/stop-cyberbullying-day) ওয়েবসাইটে সাইবার বুলিং ডে সম্পর্কে জানা যাবে।
 
গ্রামীণফোন বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাইবার বুলিংয়ের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে, যাতে সাইবার বুলিংয়ের তথ্য ও প্রতিরোধ নিয়ে তথ্য পাওয়া যায়।
 
বাংলাদেশ
বাংলাদেশের প্রায় ৪৯ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী কোনো না কোনোভাবে সাইবার বুলিংয়ের শিকার। তারা হয় নিজেরা উত্ত্যক্তকরণের শিকার অথবা নিজেরাই অন্যকে উত্ত্যক্ত করেছে। একই সংখ্যক শিক্ষার্থী বন্ধু-বান্ধবের চাপে এসব কাজ করে থাকে।
 
পাশাপাশি অর্ধেকেরও কম হুমকির শিকার তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হুমকি কিংবা অনলাইন নির্যাতনের বিষয়টি অভিভাবক কিংবা স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রকাশ করে। এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অনলাইনের বিভিন্ন সমস্যার কথা অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করে না বললেই চলে।    
 
ভারত
প্রয়োজনীয় তথ্য এবং জ্ঞান অর্জন করতে আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে ভারতে প্রায় ১৩৪ মিলিয়ন শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করবে। ৮-১৭ বছর বয়সী শিশু (৫৩ শতাংশ) বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, যারা কোনো না কোনোভাবে একবার হলেও সাইবার হুমকির শিকার হয়েছে। শারীরিক হুমকি কিংবা নির্যাতনের চেয়ে অনলাইন হুমকি নিয়ে সে দেশের অভিভাবকরা চরম দুঃচিন্তায় ভুগছেন। বিশ্বের তুলনায় ভারতীয় অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের ইন্টারনেট ব্যবহার সীমাবদ্ধ করার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ বেশি।  
 
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার ৯০ শতাংশেরও বেশি স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন সাইবার হুমকির শিকার। তবে গত ২০১৫ সালের জরিপে দেখা গেছে, মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অনলাইনের এসব হুমকি, নির্যাতনের ব্যাপারে সচেতন। সহযোগীদের মাধ্যমে অনলাইনে হুমকির মুখে পড়লে তারা সঙ্গে সঙ্গে প্রাইভেট সেটিং অথবা ব্লক অপশন ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া তারা বিষয়টি স্কুলের শিক্ষক কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে থাকেন। তবে বিশ্বস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে আলোচনা না করে সাইবার হুমকি নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে চিন্তা করে অনেক তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী চুপ করে বসে থাকতে পারেন, যার সম্ভাবনাও অনেক।
   
মালয়েশিয়ার শিক্ষার্থীদের মধ্যেই অধিকাংশই ইন্টারনেটে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য আচরণের বিষয়ে সচেতন এবং তারা অভিভাবকদের স্থির করা অনলাইন রীতি মেনে চলে। সার্বিকভাবে ৬৭ শতাংশ তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারীরা মনে করেন, তারা সাইবার হুমকির বিষয়টি নিজেরাই অথবা প্রাপ্তবয়স্কদের সহায়তায় সমাধান করতে পারবেন। টেলিনরের আওতাধীন ডিজি’র সাইবারসেফ প্রোগ্রামসহ অন্যান্য উদ্যোগের কারণে মালয়েশিয়ার স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইন্টারনেট নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতার হার বেশি।
 
থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের ৩৩ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী অনলাইন কিংবা অফলাইনে উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়। এমনকি হুমকির শিকার যারা হচ্ছেন তারাই আবার অনলাইনে অন্যান্যদের হুমকি দেওয়ার মতো অন্যায় কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছেন। এছাড়াও অনভিপ্রেত ওয়েবসাইটে যাওয়া ও অনলাইনে কুরুচিপূর্ণ ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে ৩৫ শতাংশ থাই শিক্ষার্থী সহযোগিদের দ্বারা অনলাইন হুমকির শিকার হয়ে থাকেন।
 
হুমকির শিকার হয়ে পাল্টা হুমকি দেওয়ার মতো কাণ্ড ঘটিয়ে অনলাইনের এ ধরনের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারে থাইল্যান্ডের ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। এখানেও বিশ্বস্তপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেখানো পথ অনুসরণ করে থাকেন শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী অনলাইনে এ ধরনের হুমকি সমস্যার সমাধান নিজেরা করতে পারেন না। প্রায় ৫৫ শতাংশ এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সাহায্য নিয়ে থাকেন, যেখানে বাংলাদেশে মাত্র ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অভিভাবকদের কাছে এ ধরনের সমস্যার কথা প্রকাশ করে থাকেন। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত অনলাইনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে অনেকটাই নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।