স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ঐতিহাসিক মুহূর্ত টিভিতে সরাসরি দেখার জন্য গাজীপুরে ব্যাপক প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। ইতিহাসের সাক্ষী হতে অনেকে বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দা টাঙিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগবে। সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ এ গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। এ উৎক্ষেপণ দেখতে হলে আগ্রহীদের উৎক্ষেপণ স্থানের তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থান নিতে হবে। ৭ মিনিটের কম সময় দেখা যাবে, তার পরপরই উচ্চগতির রকেট চলে যাবে দৃষ্টিসীমার বাইরে।
একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর রকেটের স্টেজ-১ খুলে নিচের দিকে নামতে থাকে, এরপর চালু হয় স্টেজ-২। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১ পৃথিবীতে এলেও স্টেজ-২ একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত স্যাটেলাইটকে নিয়ে গিয়ে মহাকাশেই থেকে যায়।
দু’টি ধাপে এই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপটি হলো লঞ্চ অ্যান্ড আরলি অরবিট ফেইজ (এলইওপি) এবং দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে স্যাটেলাইট ইন অরবিট। এলইওপি ধাপে ১০ দিন ও পরের ধাপে ২০ দিন লাগবে। উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে যাবে এ স্যাটেলাইট। ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রকেটের স্টেজ-২ খুলে যাবে। স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে। এই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্পট) স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশের স্যাটেলাইটটিতে লেখা থাকবে বিবি এবং থাকবে একটি সরকারি লোগো।
বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ যোগাযোগ ও সম্প্রচার কাজেই মূলত ব্যবহার করা হবে। এতে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার সক্ষমতা। প্রতিটি ট্রান্সপন্ডার প্রায় ৩৬ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গের সমপরিমাণ। অর্থাৎ, ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থেকে পাওয়া যাবে প্রায় এক হাজার ৪৪০ মেগাহার্টজ পরিমাণ বেতার তরঙ্গ। এরমধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। আর ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হবে।
৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২৬টি হচ্ছে কেইউ ব্যান্ডের এবং ১৪টি সি ব্যান্ডের। গাজীপুর ও চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় স্থাপিত দু’টি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এরমধ্যে গাজীপুর প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এবং বেতবুনিয়া বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে দু’টি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত হয়েছে আলাদা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিবছর অন্য দেশের স্যাটেলাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, উৎক্ষেপণের পর গাজীপুরে স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি। এ ধরনের আরেকটি গ্রাউন্ড স্টেশন চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় স্থাপন করা হলেও এটি হচ্ছে গাজীপুরে স্থাপন করা গ্রাউন্ড স্টেশনের বিকল্প। মূল নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হবে গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন। শিগগিরই গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। উৎক্ষেপণের দৃশ্যটি সরাসরি প্রদর্শন ও ব্যাপক প্রচারণা করতে ইতোমধ্যে গাজীপুরের সবক’জন ইউএনও সব ক্যাবল অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৮
আরএস/এএ