রোববার (২২ জুলাই) আগারগাঁওয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সম্মেলনে কক্ষে ‘জাতিসংঘ ই-গভর্নমেন্ট র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ’শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট র্যাংকিংয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমরা নেপাল এবং ভুটানকে বরং শিক্ষিত করতে পারি। আমরা যখন ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড করি তখন একটি কনফারেন্সে মালদ্বীপের মন্ত্রী এসেছিলেন, আমাদের কনফারেন্স থেকে বেরিয়ে তিনি এটুআই অফিসে যান।
মন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের সঠিক চিত্রটা তুলে ধরতে পারিনি। আমি যেটা বুঝেছি, আমাদের তথ্য প্রদান এবং তথ্যগুলো যারা গ্রহণ করেন, এর মধ্যে কোনো একটা শুভঙ্করের ফাঁকি। এই শুভঙ্করের ফাঁকির মধ্যে পড়ে আমাদের এই অবস্থানটা তৈরি হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করার আমাদের যে প্যারামিটার, আইটিইউ (আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন) যে প্যারামিটার ব্যবহার করে সেটা বোধ হয় এক নয়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং এটুআই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্বের দেশগুলোর ডিজিটাল গভর্নমেন্ট তৈরি করে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ করতে ২০০১ সাল থেকে জরিপের মাধ্যমে জাতিসংঘ দেশগুলোর অবস্থান পরিমাপ করে আসছে। সম্প্রতি ‘জাতিসংঘ ই-গভর্নমেন্ট সার্ভে রিপোর্ট’ প্রকাশ করে।
জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনাইটেড নেশন্স ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার এই কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। জাতিসংঘের অন্যান্য সাহায্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থা এবং ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্টাটিস্টিকস এর সহায়তায় তথ্য এবং ডাটা সংগ্রহ করে ইউএনডিইএসএ (ইউনাইটেড ন্যাশন্স ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স) এই র্যাংকিং করে থাকে। প্রতি দুই বছর পর পর এই সার্ভে বা জরিপ করে র্যাংকিং করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, ২০০১ সাল থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০টি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এই কার্যক্রমের শুরু থেকে ডাটা দিয়ে আসছে।
এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ২৪ ধাপ এগিয়ে ১৪৮তম অবস্থান থেকে ১২৪তম স্থান লাভ করে। ২০১৮ সালে আরো ৯ ধাপ উপরে উঠে ১১৫তম অবস্থানে পৌঁছায়।
তিনি বলেন, আইসিটি টুলকে ব্যবহার করে বিভিন্ন অনলাইন সেবা তৈরি এবং মোবাইল বা ওয়েব অ্যাপের মাধ্যমে তা উপস্থাপনের মাধ্যমে অনলাইন সেবা সূচকে বাংলাদেশের মূল অগ্রগতি সূচিত হয়েছে।
টেলিকমিউনিকেশন সূচক এবং হিউম্যান ক্যাপিটাল সূচকেও বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান আনীর চৌধুরী।
তিনি বলেন, হিউম্যান ক্যাপিটাল সূচকে বাংলাদেশ ২০১৬ সালে শূন্য দশমিক ৩৯৭৩ অবস্থান থেকে উন্নীত হয়ে ২০১৮ সালে শূন্য দশমিক ৪৭৬৩-তে পৌঁছায়। অন্যদিকে টেলিকমিউনিকেশন সূচকে বাংলাদেশ ২০১৬ সালে শূন্য দশমিক ১১৯৩ পয়েন্ট অর্জন করে, যা ২০১৮ সালে উন্নীত হয়ে শূন্য দশমিক ১৯৭৬-এ পৌঁছায়। মূলত ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ১১৫-তে আসতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, উপদেষ্টার সুদক্ষ উপদেশ ও পরামর্শ এবং জনগণের অংশগ্রহণ ও সবার পরিশ্রমে সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতা নেওয়ার আগে দেশের ই-সার্ভিসের কিছু ছিল না। এখন ৪০ শতাংশের উপর সার্ভিস অনলাইনে দিতে পেরেছি। আমাদের বর্তমানে ৫ হাজার ২৭২টি ইউনিয়ন ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টারের মাধ্যমে ৫০-৬০ লাখ মানুষ প্রতি বছর সেবা নিতে পারছেন। দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ সার্ভিস এখন অনলাইনে আছে।
পলক বলেন, ডিজিটাল অ্যাক্সেলেটর প্রোগ্রামের মাধ্যমে এবছর আরো ৪০-৫০টি গুরুত্বপূর্ণ সেবা যুক্ত হবে। ৩২৯টি পৌরসভায় চার ধরনের সার্ভিস অনলাইনে আনবো। আমাদের টার্গেট ২০২১ সাল নাগাদ ৯০ শতাংশ সরকারি সেবা অনলাইনে নিয়ে আসবো।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব জুয়েনা আজিজ, একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এর প্রকল্প পরিচালক মো. মুস্তাফিজুর রহমান এসময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৮
এমআইএইচ/জেডএস