ঢাকা, বুধবার, ২ আশ্বিন ১৪৩২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

কাতারের ভিলাজিও মলে ভয়াবহ আগুনে ১৩ শিশুসহ ১৯ জন নিহত

তামীম রায়হান, কাতার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৩৭, মে ২৯, ২০১২
কাতারের ভিলাজিও মলে ভয়াবহ আগুনে ১৩ শিশুসহ ১৯ জন নিহত

কাতারের রাজধানী দোহার জন্য সোমবার ছিল চরম ভীতিকর ও দুশ্চিন্তার একটি দিন। এদিন দুপুরের আগে রাজধানী দোহার পশ্চিম প্রান্তের ভিলাজিও উপসাগরীয় বিপণি ও বিনোদন কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।



এ ঘটনায় ১৩ শিশুসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত ১৩ শিশুর মধ্যে ছয়জন ছেলে ও সাতজন মেয়ে। নিহত বয়স্কদের মধ্যে চারজন বিভিন্ন দেশের শিক্ষিকা। এছাড়া আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন দুজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী।

সরকারি তরফ থেকেএ সর্বমোট ১৯ জনের মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ১৭ জন।

নিহত শিশুদের মধ্যে ইউরোপিয়, জাপানি, স্প্যানিশ এবং সাউথ আফ্রিকান শিশু রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের বয়স ১৮ মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত।

ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডেন ১৭জন আহতের অধিকাংশই ফায়ার সার্ভিস কর্মী। তবে কোনও বাংলাদেশি হতাহতের সংবাদ এখনও পাওয়া যায়নি।

যেভাবে শুরু
ঘটনার শুরু সকাল এগারটা দুই মিনিটে। দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে ভিলাজিও মল। খবর পেয়ে মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যায় ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স এবং আল ফাজআ বাহিনীর চৌকস সদস্যরা। শুরু হয় আগুন নেভানোর কর্মযজ্ঞ।
দ্রুত তারা আগুনের উৎপত্তিস্থলের সন্ধান চালাতে থাকে। ভিলাজিও মলের একটি শিশুদের ডে কেয়ার সেন্টারের কাছেই আগুনের সূত্রপাত। তারা সেখান থেকে শিশুদের উদ্ধার করা শুরু করেন। সিঁড়ি এবং করিডোরে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় তারা ছাদ ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করেন।

ততক্ষণে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ শিশুর। এছাড়া ২জন দমকলকর্মীসহ আরও ৬ জন মারা যান।

সারাদিন নানা গুজব এবং ঘটনা নিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া নানা গুজব-গুঞ্জনের ধূম্রজাল শেষে রাত আটটার পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে কাতারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন নাসের খলীফাহ আল থানী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন খালেদ আল কাহতানী উপস্থিত ছিলেন। তারা নিহতদের পরিবারের জন্য গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা দিনের পুরো ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তবে তথ্য সরবরাহে বিলম্বের বিষয়টি অস্বীকার করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, ফায়ার সার্ভিসের দু’জন কর্মী বিসর্জন দিয়েছি। যাদের মৃত্যু হয়েছে তারা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। ঘটনার দশ মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সসহ চিকিৎসকদের টিম সেখানে পৌঁছেছে এবং এগারটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে প্রথম আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। দিনভর অ্যাম্বুলেন্স ৩৭ টি ট্রিপের মাধ্যমে আহতদেরকে হাসপাতালে পৌঁছিয়েছে। সাথে ছিল আরও দ্রতগামী যান এবং একটি হেলিকপ্টার।

ফায়ার অ্যালার্ম বন্ধ থাকা এবং এক্সিট ম্যাপ এর অভাবসহ বিভিন্ন কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করা হলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারাই এর সঠিক কারণ বের করবেন।
সর্বশেষ সোমবার রাত বারটায় এ প্রতিবেদক সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, পুরো এলাকা তখনও আগুনে পোড়া গন্ধ আর ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে। পুলিশ বাহিনী মলটি ঘেরাও করে রেখেছে। ক্যামেরা নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক তখনও রাস্তার ওপারে অপেক্ষা করছিলেন।

অসমর্থিত সূত্র থেকে জানা যায়, এ ঘটনা সূত্রে ভিলাজিও মলের দু’জন ম্যানেজারকে আটক করা হয়েছে এবং তাদেরকে আদালতে পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য, রাজধানী দোহার পশ্চিম প্রান্তে আল ওয়াব রোডে অবস্থিত ভিলাজিও মল। প্রায় এক লাখ স্কয়ার মিটার আয়তনের এ মলে দোকানের সংখ্যা ২২০টি। বিশ্বখ্যাত ব্রান্ডের ভোগ্যপণ্যসমূহের প্রায় সবগুলোর শাখা বা শো-রুম এ মলে অবস্থিত।

বাংলাদেশ সময় : ১১০০ ঘণ্টা, ২৯ মে, ২০১২
সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।