মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ঐতিহাসিক দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। এ সফরে থাকছে রাজকীয় আয়োজন, বাণিজ্য আলোচনা আর আন্তর্জাতিক রাজনীতির নানা কর্মসূচি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এয়ারফোর্স ওয়ানে রওনা হওয়ার আগে ট্রাম্প সফরকে বড় এক সম্মান বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। ’
ট্রাম্প বলেন, ‘তারা চায় বাণিজ্য চুক্তিটা আরেকটু ঝালিয়ে নিতে… আমি তাতে সাহায্য করতে প্রস্তুত। ’ সফরের শুরুতেই কয়েকশ কোটি ডলারের প্রযুক্তি বিনিয়োগের ঘোষণা আসে।
তবে ট্রাম্পের মতে, সফরের আসল উদ্দেশ্য তার ‘বন্ধু’ রাজা চার্লসের সঙ্গে দেখা করা। তিনি বলেন, ‘রাজা তার দেশকে দারুণভাবে উপস্থাপন করেন। তিনি ভদ্র ও মার্জিত একজন মানুষ। ’
স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে নামার পর রানওয়ের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান। তাদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেত্তে কুপারও।
প্রেসিডেন্ট রাত কাটাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসভবন ‘উইনফিল্ড হাউসে’। বুধবার উইন্ডসর ক্যাসেলে দিনভর রাজকীয় আয়োজন ও জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা থাকছে।
তাকে স্বাগত জানাবেন রাজা চার্লস ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা। এর মধ্যে থাকবেন রানি ক্যামিলাও। আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনার অংশ হবেন প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্সেস ক্যাথরিনও। সেখানে থাকছে তোপধ্বনির মাধ্যমে অভ্যর্থনা, সামরিক কুচকাওয়াজ।
মঙ্গলবার রাতে উইনফিল্ড হাউসে ট্রাম্প আবারও রাজপরিবারের প্রতি তার অনুরাগের কথা জানান। রাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিনি অনেকদিন ধরেই আমার বন্ধু। সবাই তাকে সম্মান করে, তাকে ভালোবাসে। ’
যুক্তরাজ্য সম্পর্কে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘এখানে এমন অনেক কিছু আছে যা আমার মন ভালো করে দেয়। আমি বলতে চাই, এটা আমার কাছে খুবই বিশেষ একটি জায়গা। ’
ট্রাম্পের এই সফরে যুক্তরাজ্য সরকারের মূল বার্তা হবে— যুক্তরাষ্ট্র যেন ন্যাটোর প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখে এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে। এ কারণেই এ রাষ্ট্রীয় সফরে থাকছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বড় সামরিক প্রদর্শনী।
সামরিক অভ্যর্থনায় অংশ নেবেন সেনাবাহিনী, রয়্যাল নেভি এবং রয়্যাল এয়ার ফোর্সের এক হাজার ৩০০ সদস্য। এটিই হবে যুক্তরাজ্যে কোনো রাষ্ট্রীয় সফরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গার্ড অব অনার।
উইন্ডসরের আকাশে উড়বে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং ব্রিটিশ রেড অ্যারোজের যৌথ ফ্লাইপাস্ট। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও এটি উপভোগ করবেন।
সফরের মূল আকর্ষণ হবে উইন্ডসরের সেন্ট জর্জ’স হলে জমকালো ভোজসভা। সেখানে বক্তব্য দেবেন রাজা চার্লস ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অতিথিদের জন্য সাজানো খাবারের তালিকায়ও থাকছে বিশেষ তাৎপর্য।
ট্রাম্পের সফরের শুরুতেই প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বড় আকারের বিনিয়োগের ঘোষণা আসে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ করবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড, যার মধ্যে মাইক্রোসফট একাই দেবে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড।
এই চুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও পারমাণবিক শক্তির উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমারেরের আশা, এর ফলে তৈরি হবে দক্ষ জনবল। পাশাপাশি মানুষের আয়ের সুযোগ বাড়বে।
সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটও যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড (৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল। সফরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে পারমাণবিক শক্তির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য একটি চুক্তি সই হবে।
যুক্তরাজ্যের ইস্পাত রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের প্রচেষ্টা আপাতত স্থগিত রয়েছে। যদিও এটি এখনো অনেক দেশের জন্য আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্কের তুলনায় কম।
এদিকে উইন্ডসরে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে শুরু করেছে। তারা উইন্ডসর ক্যাসেলের দেয়ালে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিশাল আকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যৌন অপরাধে দণ্ডিত জেফ্রি এপস্টেইনের ছবি তুলে ধরেন। পরে থেমস ভ্যালি পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় চারজনকে আটক করা হয়েছে।
ট্রাম্পের পুরো সফরে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা। সফর শেষ হবে বৃহস্পতিবার বিকেলে।
আরএইচ