ঢাকা: মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথ নামে আমাদের গ্যালাক্সিটি প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডার সঙ্গে একসময় একীভূত হয়ে যাবে। কিন্তু সেই শিহরণ জাগানিয়া ঘটনাটি কবে ঘটবে এতোদিন তার সঠিক সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
পারস্পরিক মহাকর্ষ বলের টানে এই দুই গ্যালাক্সি একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী চারশ’ কোটি বছরের মধ্যে বলে অনুমান করছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। আর সম্পূর্ণ একীভূত অবস্থায় ছায়াপথ দু’টি দুইশ’ কোটি বছর থাকবে এবং তাদের তখন একক গ্যালাক্সি বলেই মনে হবে।
এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো- একীভূত হওয়ার এই প্রক্রিয়ায় আমাদের পৃথিবী ও সৌরজগৎ সর্বোপরি ছায়াপথের ভাগ্যে কী ঘটবে? বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত করে বলেছেন, সূর্যের অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন হলেও অন্যান্য নক্ষত্র ও গ্রহ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা খুব কম।
অবশ্য মহাকর্ষের টানে অ্যান্ড্রোমেডা গ্যালাক্সি সোজা আমাদের দিকেই ছুটে আসবে নাকি পাশ কাটিয়ে চলে যাবে সে সম্পর্কে এখনো সুনিশ্চিত তথ্য দিতে পারেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কারণ শত বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ছায়াপথের পার্শ্বগতি নির্ণয় করার চেষ্টা করেও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে সফল হতে পারেনি।
তবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার ফলে এই প্রথমবারের মতো অ্যান্ড্রোমিডার পার্শ্বগতি নির্ণয় করা যাবে বলে জানিয়েছেন বাল্টিমোরের স্পেস টেলিস্কোপ সায়েন্স ইনস্টিটিউটের প্রধান গবেষক রোল্যান্ড ভ্যান ডার মারেল।
তিনি জানান, পরিষ্কার আকাশে অ্যান্ড্রোমিডাকে এখনো আবছা পিণ্ডের মতই দেখায়। চার বিলিয়ন বছর পর যদি গ্যালাক্সি দু’টি মিশে যায় তবে এরা একসাথে একটি ডিমের আকার ধারণ করবে। বর্তমানে এরা পরস্পর থেকে ২৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। আর ঘণ্টায় আড়াই লাখ মাইল বেগে এরা একে অপরের দিকে ছুটে আসছে। ধারণা করা হয়, আড়াই লাখ আলোকবর্ষ আগে এ দু’টি গ্যালাক্সি আলাদা হয়ে যায়।
বিজ্ঞানীরা আরো জানিয়েছেন, অ্যান্ড্রোমিডার অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের এক প্রতিবেশী গ্যালাক্সি ট্রায়াঙ্গুলাম বা এম৩৩ এ যাত্রায় মিলিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অবশ্য গ্যালাক্সিগুলো এভাবে একীভূত হলেও নক্ষত্রগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বাধবে না কারণ তখনো তাদের মধ্যে দূরত্ব থাকবে অনেক বেশি। তবে মহাকর্ষের কারণে সোলার সিস্টেমে অবস্থানগত কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস।
এখানে আরেকটা সম্ভাবনা হলো- গ্যালাক্সি একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে নতুন নক্ষত্র সৃষ্টিরও সূচনা হবে কারণ বিশাল আয়তনের গ্যাসের মেঘ তখন পরস্পরের ওপর চুপসে যাবে। সেই সঙ্গে একীভূত গ্যালাক্সিটির কেন্দ্রে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরও থাকবে একটি।
বিজ্ঞানী ড. ভ্যান ডার মারেল বলেন, চারশ’ কোটি বছর সময়ের মধ্যে আমাদের ছায়াপথের নক্ষত্র সূর্যের পরমাণু জ্বালানি পোড়ানোর হার অনেক ধীর হয়ে যাবে এবং সূর্য স্ফিত হয়ে উঠবে। আর স্বাভাবিক বিবর্তনের ধারায় সূর্য তখন অনেক বেশি উত্তপ্ত হবে। আর কয়েক কোটি বছর পরে তা এতো বেশি উত্তপ্ত হবে যে এই পৃথিবী জীবনধারণের জন্য আর উপযুক্ত থাকবে না।
আর একারণেই ছুটন্ত ছায়াপথগুলো যখন পরস্পরকে অতিক্রম করবে অথবা একীভূত হবে তখনকার সেই অভাবনীয় দৃশ্যটি দেখার জন্য পৃথিবী নামক গ্রহে মানুষ নামে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব থাকবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান অনেক বিজ্ঞানী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১২
সম্পাদনা: শামসুন নাহার ও জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর