সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার পর এসব ঘটনার ছবি, ভিডিওক্লিপ বা ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এরপর থেকে নেটিজেনদের কেউ কেউ বলছেন, বিমান ভ্রমণে দুর্ঘটনা বেড়েছে।
গত জানুয়ারিতে ঘটা দুটি বিমান দুর্ঘটনা বেশ আলোচিত। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের সঙ্গে মার্কিন সেনাবাহিনীর ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়। তারপর ফিলাডেলফিয়ায় আবাসিক এলাকায় একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আছড়ে পড়ে। আলাস্কা অঙ্গরাজ্যেও একটি যাত্রীবাহী ছোট বিমান বিধ্বস্ত হয়। তারপর কানাডার টরন্টোতে খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে অবতরণের পর একটি বিমান উল্টে যাওয়ার ফুটেজ অনলাইনে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়।
এসব খবর ও ভিডিও বিমানে ভ্রমণকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। একের পর এক এমন খবরে প্রশ্ন জেগেছে, বিমান দুর্ঘটনা কি বেড়ে গেছে?
তবে বিমান দুর্ঘটনা বাড়েনি বলে দাবি করেছেন মার্কিন পরিবহন সচিব শন ডাফি। সিবিএস নিউজে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনাগুলো ‘নজিরবিহীন’।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের জরিপ বলছে, দুর্ঘটনাগুলো মার্কিন নাগরিকদের একাংশের মনে অনাস্থার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের আর সব দেশের সাম্প্রতিক সব দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে বিবিসি ভেরিফাই যে তথ্যে উপনীত হয়েছে তাহলো, গত দুই দশক ধরে বিমান দুর্ঘটনা কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন সুরক্ষা বোর্ড চলতি বছরের জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত বিমান দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তৈরি করেছে। সেই তথ্য বলছে, ২০০৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বিমান দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে। তবে একই সময়ে সামগ্রিকভাবে ফ্লাইটের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ৫২ জন, গত বছরের (২০২৪ সাল) জানুয়ারিতে ৫৮ জন বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ৭০ জন।
মার্কিন পরিবহন বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবহন সম্পর্কিত মৃত্যুর মধ্যে ৯৫ শতাংশের বেশি সড়কে ঘটেছে। এক শতাংশেরও কম দুর্ঘটনা বিমান ভ্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা বিশ্বজুড়ে বিমান দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে। সংস্থাটির তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতি মিলিয়ন বিমানযাত্রায় বিশ্বজুড়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা স্পষ্টভাবে কমে গেছে। এমন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও একই সময়ে কমেছে। তবে কয়েকটি বড় বিমান দুর্ঘটনা মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০১৪ সালের মার্চ মাসে, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ-৩৭০ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে ২৩৯ জন আরোহীসহ নিখোঁজ হয়। একই বছর জুলাই মাসে, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের আরেকটি বিমান এমএইচ-১৭ পূর্ব ইউক্রেনের ওপর দিয়ে ওড়ার সময় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়। এ দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়।
বাকিংহামশায়ার নিউ ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার সাবেক পাইলট মার্কো চ্যান বিবিসি ভেরিফাইকে বলেছেন, বিমান দুর্ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কারণেই বেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে সাড়া ফেলে। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এমন একটি বিমান ওড়ার মাঝে একটি দরজা ভেঙে গেলে তা উদ্বেগ বাড়ায়। তখন অনেকে বোয়িং কোম্পানির তৈরি বিমান বয়কট করেছিলেন। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম পড়ে গিয়েছিল।
গত কয়েক মাসের বিমান দুর্ঘটনাগুলোর সম্পর্কে ফিনল্যান্ডের সাবেক প্রধান বিমান দুর্যোগ তদন্তকারী ইসমো অ্যাল্টোনেন বিবিসি ভেরিফাইকে বলেছেন, এগুলো বিমানে চলাচলে নিরাপত্তা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত নয়।
দুর্ঘটনাগুলো দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, এসব দুর্ঘটনার ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্তে আসা উচিত হবে না। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
তবে বিমান কোম্পানিগুলো প্রতিটি দুর্ঘটনা থেকে দেখে শেখে বলে জানান তিনি।
ইসমো অ্যাল্টোনেন বলেন, ছোট-বড় যেকোনো দুর্ঘটনা কর্তৃপক্ষ কড়া তদন্ত করে। দুর্ঘটনার নতুন বিবরণ এবং তথ্যগুলো পাইলট প্রশিক্ষণ সিমুলেটরগুলোতে সরবরাহ করা হয়। এতে ভবিষ্যতে একই ধরনের পরিস্থিতির জন্য সবাই প্রস্তুত হতে পারে। ফলে এখনকার সিমুলেটরগুলো বাস্তব বিমানের মতোই উন্নত।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫
এসএএইচ