ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত, আকাশপথও বন্ধ করে দিল পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত, আকাশপথও বন্ধ করে দিল পাকিস্তান

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়।

পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বাণিজ্য স্থগিত, কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং আকাশসীমা বন্ধসহ একাধিক কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়। বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধানসহ দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। খবর ডনের

পাকিস্তান সরকার জানায়, ভারতের ২৩ এপ্রিলের পদক্ষেপগুলোকে একতরফা, আইনবিরোধী ও আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি অশ্রদ্ধা বলে বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করাকে তারা ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ বলে উল্লেখ করে।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তান জানায়, পানি পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থ। দেশের ২৪ কোটির বেশি মানুষের জীবনজীবিকা পানি নির্ভর। কেউ তা বন্ধ বা অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে তা যুদ্ধের সমতুল্য বিবেচনা করে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেওয়া হবে।

এনএসসির বৈঠকে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো হলো- ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি সাময়িক স্থগিত; ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা বাতিল, তবে শুধুমাত্র শিখ তীর্থযাত্রীদের ব্যতিক্রম; ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা- ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ভারত থেকে আগতদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ; ভারতে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ‘পারসনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা; ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা ত্রিশে নামিয়ে আনা; ভারতীয় এয়ারলাইনের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ ও ভারতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের বাণিজ্য স্থগিত।

পাশাপাশি পাকিস্তান সরকার ভারতের মিডিয়ার ‘উস্কানিমূলক ও যুদ্ধবাজ’ মনোভাবের কঠোর সমালোচনা করেছে। এ ধরনের প্রচারকে ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি’ বলে আখ্যাও দিয়েছে দেশটি।

এর আগে পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেন, যেখানেই হামলাকারীরা বা তাদের পৃষ্ঠপোষকরা থাকুক, তাদের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাড়া করে শাস্তি দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এই হামলার জবাব এমনভাবে দেওয়া হবে, যা কল্পনারও অতীত।

তা ছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে থাকা ভিসা বাতিল করে। আগামী ২৯ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তানি নাগরিকদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের উচ্চ কমিশনে কর্মরত পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাদেরও বহিষ্কার করা হয়েছে।

কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশে কাশ্মীরি মুসলিম শিক্ষার্থীদের বাসা ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৯ সালের বালাকোট-উত্তর সংকটের পর এই উত্তেজনা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। সিন্ধু চুক্তি স্থগিত হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ায় জলসম্পদ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী বিরোধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মলিহা লোধি বলেন, ভারত চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।

তিনি সতর্ক করেন, ভারতীয় মিডিয়া যেভাবে যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছে, তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।