ফিলিস্তিনি লেখক, সাংবাদিক, চিত্রশিল্পী ও রাজনৈতিক কর্মী গাসসান ফায়েজ কানাফানির মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭২ সালের ৮ জুলাই বৈরুতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক গাড়িবোমা হামলায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে নিহত হন তিনি।
কানাফানি ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এক উজ্জ্বল নাম। সাহিত্যকর্ম ও রাজনৈতিক সংগ্রাম মিলিয়ে তাকে মনে করা হয় প্রতিরোধের প্রতিচ্ছবি। তিনি এমন এক যোদ্ধা যিনি অস্ত্র নয়, কলম দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন।
১৯৩৬ সালের ৯ এপ্রিল বর্তমান ইসরায়েলের আক্কা শহরে (তৎকালীন ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিন) জন্মগ্রহণ করেন গাসসান কানাফানি। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় সৃষ্ট ‘নাকবা’ বা ‘বিপর্যয়ের’ ফলে তার পরিবার আশ্রয় নেয় লেবাননের টাইরে, পরে সিরিয়ার দামেস্ক শহরে।
এই উদ্বাস্তু অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে কানাফানির চিন্তা, সাহিত্য ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
কানাফানি ফিলিস্তিনি সাহিত্যে পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত। তার গল্প ও উপন্যাসে বারবার উঠে এসেছে শরণার্থী জীবনের কষ্ট, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি, রাজনৈতিক সংগ্রাম ও আত্মপরিচয়ের সন্ধান।
গাসসান কানাফানির সাহিত্যকর্ম
Returning to Haifa (1969) – এই উপন্যাসে একটি দম্পতির মাধ্যমে নাকবার মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ও অস্তিত্ববাদী দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছেন কানাফানি এই উপন্যাসে। Men in the Sun (1963) – ফিলিস্তিনি তিন যুবকের কুয়েত যাওয়ার প্রচেষ্টা, তাদের নিঃসঙ্গতা ও আত্মসমর্পণের করুণ পরিণতির চিত্র উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। নিঃসঙ্গতা ও প্রতিবাদের মাঝে একজন ফিলিস্তিনির আত্মঅনুসন্ধানের চিত্র কানাফানি তুলে ধরেছেন তার All That’s Left to You (1966) উপন্যাসে।
সাংবাদিকতা ও রাজনীতি
গাসসান শুধু একজন সাহিত্যিকই ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন মার্কসবাদী, প্যান-আরববাদী এবং বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী। তার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রাম। পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
আল হুরিয়া, আল আনওয়ার, আল হাদাফ (কানাফানির প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক)-সহ অনেক পত্রপত্রিকায় কাজ করেছেন গাসসান কানাফানি। তিনি ফিলিস্তিনিদের স্বর তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, বিশেষ করে পশ্চিমা ও আরব বিশ্বে।
গাসসান কানাফানিকে হত্যা
১৯৭২ সালের ৮ জুলাই গাসসান কানাফানি বৈরুতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক গাড়িবোমা হামলায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে নিহত হন। সেদিন কানাফানির সঙ্গে তার ১৭ বছর বয়সী ভাতিজি লেমিস নাজিমও নিহত হয়। মৃত্যুর পরও কানাফানির লেখা মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধের এক স্থায়ী অনুপ্রেরণা হিসেবে বেঁচে আছে।
গাসসান কানাফানির সাহিত্য এখনো স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজনৈতিক পাঠচক্রে অধ্যয়ন করা হয়। তার জীবনী ও গল্পের ওপর চলচ্চিত্র, নাটক ও গবেষণা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সাহিত্য বলতে গেলে আজও যাদের নাম প্রথমসারিতে উচ্চারিত হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম গাসসান কানাফানি। তিনি ছিলেন সেই লেখক, যিনি নিজের পরিচয়কে অস্ত্র করে তুলেছিলেন।
এমজেএফ