ঢাকা, সোমবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই, নিহত ৫৮ হাজার ছাড়াল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৩৩, জুলাই ১৪, ২০২৫
গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই, নিহত ৫৮ হাজার ছাড়াল

ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় রক্তাক্ত হয়ে উঠছে গাজা। রোববার গাজা সিটির একটি ব্যস্ত বাজার ও পানির সংগ্রহ পয়েন্টে হামলায় অন্তত ৯৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধের পর এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫৮ হাজার ২৬ জন।

গাজা সিটির বাজারে চালানো হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত হন। এর মধ্যে ছিলেন খ্যাতনামা চিকিৎসক আহমেদ কান্দিল। মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে পানির পয়েন্টে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মারা যান আরও অন্তত ১০ জন। নিহতদের মধ্যে সাতজন শিশু, যারা খাবার পানি সংগ্রহের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। আহত অন্তত ১৭ জন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, নুসেইরাতে তাদের হামলা এক ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল, তবে ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটির’ কারণে হামলা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এ দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে নেদারল্যান্ডসের ইউট্রেখট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ জেসিকা ডরসি বলেন, যুদ্ধে ভুল হতেই পারে, কিন্তু গত ২১ মাস ধরে ফিলিস্তিনে বেসামরিক হতাহতের যে ধারা দেখা যাচ্ছে, তাতে একে ‘ভুল’ বলে দায় এড়ানো চলে না। বরং এটিই যেন তাদের নিয়মিত কৌশল হয়ে উঠেছে। উন্নত প্রযুক্তি থাকার পরও এমন ভুল বাড়ছে, দায় এড়ানোর প্রবণতা বাড়ছে—এটা অগ্রহণযোগ্য।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন আরও অন্তত এক লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ জন।

অবরোধ ও খাদ্য সংকটে ২১ লাখ গাজাবাসী চরম দুর্ভিক্ষের মুখে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, রোববার অপুষ্টিতে আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সাত মাস বয়সী সালাম নামের ওই শিশুটি সংস্থাটির চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিতে অন্তত ৬৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ জানায়, শুধু জুন মাসেই গাজায় পাঁচ হাজার ৮০০ শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে এক হাজারের বেশি শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। সংস্থাটির ভাষায়, এটি আর শুধু পুষ্টির সংকট নয়, এটি শিশুদের বেঁচে থাকার সংকট।

জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও, বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউএফপি) আটটি সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলের জ্বালানি সরবরাহে বাধার কারণে হাসপাতাল, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, এমনকি অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ না হলে ত্রাণ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

গাজার সরকারের তথ্য দপ্তর এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন জিএইচএফের সহায়তা কেন্দ্রগুলো আসলে সাধারণ মানুষের জন্য ‘মৃত্যু ফাঁদ’। তাদের দাবি, মে মাসে এসব কেন্দ্র চালু হওয়ার পর থেকে অন্তত ৮০৫ জন বেসামরিক মানুষ নিহত ও ৫,২৫০ জন আহত হয়েছেন খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, চলতি সপ্তাহেই বিষয়টি ‘সুসমাধান’ হবে। তার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফও জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালের ফাঁকে কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

তবে হামাসের মিত্র ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের উপনেতা মোহাম্মদ আল-হিনদি বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ, সেনা প্রত্যাহার ও নিরাপদ সহায়তা বিতরণ—এই তিনটি মূল শর্তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয়েই বন্দি বিনিময় আলোচনায় ঢুকতে চায়। আমরা আত্মসমর্পণের কোনো চুক্তিতে সই করব না।

আরএইচ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।