ঢাকা, শুক্রবার, ৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২২ আগস্ট ২০২৫, ২৭ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

মরার পরও বিষ ছড়াচ্ছে ভারতীয় সাপ!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২২, আগস্ট ২১, ২০২৫
মরার পরও বিষ ছড়াচ্ছে ভারতীয় সাপ!

সাপ মারা মানেই বিপদ কেটে গেছে, দীর্ঘদিন এমনই ধারণা প্রচলিত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, ভারতের কয়েকটি ভয়ংকর সাপ মৃত্যুর ঘণ্টাখানেক পরও বিষ ছড়াতে পারে! এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গোখরা ও কালো ক্রাইট।

ভারতের আসামে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ফ্রন্টিয়ার্স ইন ট্রপিক্যাল ডিজিজে। গবেষণাটি করেছেন নামরূপ কলেজের অধ্যাপক সুশমিতা ঠাকুরের নেতৃত্বে একদল গবেষক।

তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব সাপের শরীরে এমন এক বিশেষ ধরনের বিষ নিঃসরণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা মৃত্যুর পরও সক্রিয় থাকে। অর্থাৎ সাপ মরে গেলেও তার বিচ্ছিন্ন মাথা বা দেহে চাপ পড়লে দাঁতের ফাঁপা নল দিয়ে বিষ বের হতে পারে। এতে জীবিত সাপের কামড়ের মতোই ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

গবেষণায় নথিভুক্ত তিনটি বাস্তব ঘটনার বর্ণনা রীতিমতো শিহরণ জাগায়—

ঘটনা ১: আসামের এক গ্রামে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মুরগির ওপর হামলা করা মনোকল্ড গোখরাকে কেটে ফেলেন। সাপটি মৃত ভেবে ফেলার সময় বিচ্ছিন্ন মাথা তার বুড়ো আঙুলে কামড় দেয়। মুহূর্তেই তীব্র ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে কাঁধ পর্যন্ত। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বমি, অসহ্য যন্ত্রণা ও কালো হয়ে যাওয়া ক্ষতস্থানের চিকিৎসা চলে টানা ২০ দিন। অবশেষে সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন।

ঘটনা ২: ধানক্ষেতে কাজ করার সময় ট্র্যাক্টরের নিচে চাপা পড়ে এক গোখরা মারা যায়। কয়েক ঘণ্টা মৃত পড়ে থাকার পরও সেটি পাশ দিয়ে যাওয়া কৃষকের পায়ে কামড় দেয়। তীব্র ব্যথা, ফোলা ও রঙ পরিবর্তনের পাশাপাশি ক্ষতস্থানে আলসার দেখা দেয়। যদিও স্নায়ুতে বিষক্রিয়া হয়নি, তাকে অ্যান্টিভেনম ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত চিকিৎসা নিতে হয়।

ঘটনা ৩: একটি কালো ক্রাইট সাপকে হত্যা করে উঠোনে ফেলে রাখা হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা পর এক প্রতিবেশী সেটির মাথা হাতে নিতেই আঙুলে কামড় দেয়। ধীরে ধীরে তার চোখের পাতা ঝুলে পড়ে, গিলতে অসুবিধা হয় এবং অচেতন হয়ে পড়েন। ২০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম দেওয়ার পরও অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে। অবশেষে টানা ৪৩ ঘণ্টা লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হন। ছয় দিন চিকিৎসার পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

গবেষকদের ব্যাখ্যা, সাপের বিষগ্রন্থি দাঁতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে। তাই সাপ মরে গেলেও বা মাথা বিচ্ছিন্ন হলেও চাপ পড়লে দাঁতের ফাঁপা নল দিয়ে বিষ বেরিয়ে আসতে পারে। এতে জীবিত সাপের কামড়ের মতোই মারাত্মক উপসর্গ দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সাপ মেরে ফেলার পরও সরাসরি হাত না দেওয়া উচিত। নিরাপদ দূরত্বে ফেলে রাখা বা মাটিতে পুঁতে ফেলা শ্রেয়। নইলে ‘মৃত সাপের’ কামড়ও জীবন কেড়ে নিতে পারে।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।