ঢাকা, সোমবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২০ রবিউস সানি ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

জেন-জি বিক্ষোভের মুখে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:২৩, অক্টোবর ১৩, ২০২৫
জেন-জি বিক্ষোভের মুখে পালালেন মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা

জেন-জি বিক্ষোভের মুখে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা ও সরকারি কর্মকর্তারা। সোমবার (১৩ অক্টোবর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তারা।

খবর রয়টার্সের।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর রবিবার রাজোয়েলিনা দেশ ত্যাগ করেন। বিরোধীদলীয় নেতা ও সংসদের বিরোধীদলীয় প্রধান সিটেনি র‍্যানড্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি বলেন, আমরা প্রেসিডেন্টের দপ্তরে ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তারা জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়েছেন। সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট দেশ ত্যাগ করেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করলেও তবে রাজোয়েলিনার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি সিটেনি র‍্যানড্রিয়ানাসোলোনিয়াইকো।  

রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা একটি ফরাসি সামরিক বিমানে করে দেশ ছেড়েছেন। সরকারি ও সামরিক সূত্র মারফত তারা এ তথ্য জেনেছে। ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়ে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ‘সমঝোতার’ পর তিনি দেশত্যাগ করেন। রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনালও (আরএফআই) একই তথ্য দিয়েছে।  

সামরিক সূত্রটি জানিয়েছে, গতকাল রোববার মাদাগাস্কারের সান্ত মেরি বিমানবন্দরে ফরাসি সেনাবাহিনীর একটি কাসা বিমান অবতরণ করে। কিছুক্ষণ পর সেখানে একটি হেলিকপ্টার অবতরণ করে। বাহনটিতে থাকা এক যাত্রীকে ফ্রান্সের ওই সামরিক বিমানে তোলা হয়। পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই যাত্রী ছিলেন প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা।

এদিকে, সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার। কিন্তু তিনি কোনো ভাষণ দেননি। এ ব্যাপারে তার দপ্তর কোনো মন্তব্য করেনি।  

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জেন-জি প্রজন্মের তরুণদের বিক্ষোভে মাদাগাস্কারের সরকার টালমাটাল হয়ে পড়ে। দেশটিতে সাম্প্রতিক এই বিক্ষোভে সেনাবাহিনীর একাংশও বিক্ষোভকারীদের পক্ষে চলে যাওয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও গভীর হয়ে ওঠে। সংকটের সূচনা হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। পানি ও বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে রাজধানী আন্টানানারিভোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও মৌলিক সেবার ঘাটতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে জেন-জি আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে।  

রাজোয়েলিনা সেনাবাহিনীর সমর্থন হারানোর পর ক্রমবর্ধমানভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে ক্যাপস্যাট নামে একটি অভিজাত ইউনিটের সমর্থন হারিয়ে ফেলা তার গদি নড়ে যাওয়ার কারণ। এই ক্যাপস্যাট ২০০৯ সালের অভ্যুত্থানে তাকে ক্ষমতায় আসতে সহায়তা করেছিল। এ ঘটনার পর রোববার প্রেসিডেন্ট সতর্ক করেছিলেন, ক্ষমতা দখলের একটি ষড়যন্ত্র চলছে।

ক্যাপস্যাট জেন-জি আন্দোলনে যুক্ত হয় এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকার করে। আন্তানানারিভোর প্রধান স্কয়ারে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকেও পাহারা দেয়। এরপর সংগঠনটি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ দেয়। একই সঙ্গে প্যারামিলিটারির একটি অংশও বিক্ষোভকারীদের পক্ষে অবস্থান নেয়।

এ ছাড়া জনগণের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সিনেটের সভাপতিকেও তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে জ্যঁ আন্দ্রে ন্দ্রেমাঞ্জারি নামে এক কর্মকর্তাকে সিনেটের সভাপতি হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়।  

মাদাগাস্কারের নিয়ম, দেশে প্রেসিডেন্ট না থাকলে সংবিধান অনুযায়ী সিনেটের সভাপতি সে দায়িত্ব নেন, যতক্ষণ না নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় তরুণদের আন্দোলনে দ্বিতীয় সরকার পতন। এর আগে নেপালে তরুণদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তার আগে বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট খ্যাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালান।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।