ঢাকা, বুধবার, ২ আশ্বিন ১৪৩২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু, জেন-জি বিপ্লব এরপর কোথায়?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৮, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫
কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু, জেন-জি বিপ্লব এরপর কোথায়? কাঠমান্ডুতে পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সের বাইরে তরুণ বিক্ষোভকারীদের উচ্ছ্বাস

জনতার ভিড় সামনে এগিয়ে গেল। লোহার গেটে ঠকঠকাল।

ঢোলের মতো শব্দ ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে। হাজার হাজার মানুষ ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ল। অথচ কয়েক ঘণ্টা আগেও সেই ব্যারিকেড ক্ষমতার রক্ষকের ভূমিকায় ঠাঁই দাঁড়িয়েছিল।

কদিন আগেই এমন দৃশ্য দেখা গেল নেপালে। এর আগে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে এবং ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায় একই ঘটনা ঘটেছিল। এসব দেশে সরকারপ্রধানের বিলাসবহুল বাড়ি ছিল দুর্ভেদ্য ক্ষমতার এক প্রতীক, যা সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে সাময়িকভাবে সেই বাড়ির মালিক হয়ে ওঠে জনগণ।

নেপালে তিন কোটি মানুষের বাস। চীন ও ভারতের মধ্যে অবস্থিত এক পাহাড়ি দেশ। এখন দেশটি ভবিষ্যৎ এমনভাবে সাজাচ্ছে, যা প্রচলিত নির্বাচনী গণতন্ত্রের ধারা থেকে আলাদা। দক্ষিণ এশিয়ায় তরুণদের বিক্ষোভ-আন্দোলনে একাধিক সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এই ঘটনা বিস্তৃত এক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ঘনবসতি দক্ষিণ এশিয়া কি জেনারেশন জেড (জেন-জি) বিপ্লবের গ্রাউন্ড জিরো বা বিপ্লবের কেন্দ্র?

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক সহিংসতা এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলছিলেন, এটি নিঃসন্দেহে চোখে পড়ার মতো ঘটনা। এখানে এক ধরনের নতুন অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ধারা দেখা যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, প্রায় ১০ হাজার নেপালি তরুণ নতুন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীকে ভোট দেন। তবে এই ভোট বাস্তব কোনো ব্যালটে নয়। এই ভোট হয় ডিসকর্ড নামে এক অনলাইন যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মে। এটি মূলত গেমারদের ব্যবহৃত একটি প্ল্যাটফর্ম।

নেপালে দুর্নীতি ও নীতিনির্ভরতার বিরুদ্ধে তিন দিনের বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। নিরাপত্তা বাহিনীর দমন অভিযানে ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার আগামী মার্চে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে।

তরুণদের বিক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলিকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। কদিন আগেই তিনি আন্দোলনকারীদের জেনারেশন জেড পরিচয়কে উপহাস করেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার একের পর এক দেশে বিক্ষোভ দেখিয়ে দিচ্ছে যে, হতাশ তরুণরা যখন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নিজেদের দাবির সঙ্গে বেমানান মনে করছে, তখন তারা নিজেরাই ক্ষমতার লাগাম টেনে নিচ্ছে এবং নেতৃত্বের আসনে বসছে।

‘এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি নাটকীয় পরিবর্তন’, আল জাজিরাকে বলেন স্ট্যানিল্যান্ড। তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চল বড় বড় রাজনৈতিক বিক্ষোভ-আন্দোলনের সাক্ষী হলেও খুব কম ক্ষেত্রেই সরকার পতনের ঘটনা ঘটেছে। ’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটি একেবারেই ভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ধারা। যেখানে আগে রাজনৈতিক সংকট মানেই ছিল সামরিক অভ্যুত্থান বা অন্য ধরনের সংঘাত, সেখানে এখন একেবারে নতুন ধারা দেখা যাচ্ছে। ’

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপাল— প্রতিটি দেশেরই আন্দোলন নিজস্ব ইতিহাসের শিকড়ে প্রোথিত এবং প্রত্যেকটির পেছনে দেশভেদে আলাদা ঘটনা কাজ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দেশগুলোর বিস্ফোরিত ক্ষোভের ভেতর দিয়ে একটি সাধারণ সূত্র প্রবাহিত হয়েছে। এটি এমন এক প্রজন্ম, যারা ভাঙা প্রতিশ্রুতির ধ্বংসস্তূপ নিয়ে আর বাঁচতে রাজি নয়। এসবই তাদের ক্ষোভকে উসকে দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আন্দোলনগুলো একে অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী নিজেদের কৌশল তৈরি করছে।

কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু

কাঠমান্ডুতে জেন-জিদের আন্দোলন শুরু হয় সরকারের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে। সরকারের দাবি ছিল, এসব প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার হচ্ছে এবং নিয়ম মেনে কেউ নিবন্ধনও করেনি। তবে এই আন্দোলনের শেকড় আরও গভীরে। বৈষম্য, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ছিল তরুণদের অসন্তোষের প্রধান কারণ। বিদেশে থাকা নেপালিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশের জোগান দেয়।

হাজার হাজার কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী নেপালের সড়কে নেমে আসে। অনেকে আন্দোলনে অংশ নেয় স্কুলের ইউনিফর্ম পরে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৭০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ যায়। বহু মানুষ আহত হয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। কিছু বিক্ষোভকারী পার্লামেন্ট ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। অনেকে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, নেতার বাড়ি এবং নেপালের সবচেয়ে বড় গণমাধ্যমের ভবনে আগুন দেয়। এমনকি বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী ওলির বাড়িতে ঢুকেও তছনছ করে, তাণ্ডব চালায়। এক দিন পর তিনি পদত্যাগ করেন।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। সেখানে বৈষম্যমূলক চাকরির কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন তরুণরা। নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নের কারণে শত শত বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পর আন্দোলন ভিন্নদিকে রূপ নেয়। একপর্যায়ে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটায়।

বিক্ষোভের নেতৃত্ব ছিল কিছুটা অগোছালো। শিক্ষার্থী নেতারা সরকারের কাছে দাবির তালিকা দিয়ে আলটিমেটাম দিতেন। বিরোধীরা তাতে সমর্থন দিত। হাসিনা সরকার শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা থেকে টেলিযোগাযোগ বন্ধ পর্যন্ত করেছে। কিন্তু তা কেবল পরিস্থিতিকে কেবল আরও জটিলই করেছে। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে ভারতে চলে যান।

বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কাও একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। সেখানে বিক্ষোভ শুরু হয় অর্থনৈতিক ধসের কারণে। তখন দেশটি ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়ে। ২০২২ সালের মার্চ নাগাদ দৈনন্দিন জীবন হয়ে ওঠে চরম দুর্বিষহ। দিনে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জ্বালানি ও রান্নার গ্যাসের জন্য মাইল-লম্বা লাইন, আর মুদ্রাস্ফীতি পঞ্চাশ শতাংশের ওপরে ওঠে।
 
এ অবস্থায় শ্রীলঙ্কার গর্জে ওঠে ‘আরাগালায়া’ আন্দোলন। সিংহলি ভাষায় এর অর্থ ‘সংগ্রাম’। তরুণ অ্যাক্টিভিস্টরা কলম্বোর প্রেসিডেন্ট সচিবালয়ের সামনে একটি বিক্ষোভশিবির গড়ে তোলেন। তারা এর নাম দেন ‘গোতাগোগামা’ (অর্থাৎ ‘গোতা গ্রামে যাও’)। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে উদ্দেশ্য করে এই নামকরণ করা হয়। তার পরিবার বিগত ১৮ বছরের মধ্যে ১৫ বছর দেশ শাসন করে। সেই স্থানটি পরিণত হয় সমাবেশ, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও স্লোগান আর বক্তৃতার কেন্দ্রে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে বিক্ষোভকারীরা তার সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়লে রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

ফারাকটা বিশাল

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলীর মতে, দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশে তরুণদের আন্দোলনে সরকার পতনের পেছনে একটি সাধারণ ভিত্তি রয়েছে। তা হলো অমীমাংসিত সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য আর রাজনৈতিক অভিজাতদের দুর্নীতি, যা তাদের তরুণ প্রজন্মের বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল।

জেন-জিদের অনেকেই জীবনে দুটি বড় অর্থনৈতিক মন্দার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। প্রথমটি ২০০৮-০৯ সালে এবং দ্বিতীয়টি কোভিড-১৯ মহামারির সময়। গাঙ্গুলি বলেন, এ প্রজন্মকে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বছর কাটাতে হয়েছে একাকিত্বে, সহপাঠী ও বন্ধুদের থেকে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে। তবে সেই মহামারির সময়ই তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাত্রা নজিরবিহীনভাবে বেড়ে যায়।

দক্ষিণ এশিয়ার তরুণদের মনে অসন্তোষ তৈরি হয়, কারণ তাদের দেশ চালাচ্ছিলেন অনেক বয়স্ক নেতা। নেপালের ওলি ছিলেন ৭৩, বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ৭৬ আর শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে ৭৪ বছর বয়সী।

গাঙ্গুলি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার তরুণরা তাদের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। ফারাকটা খুব বেশি হয়ে গেছে। তিনি আরও যোগ করেন, তরুণদের জীবন আর রাজনীতিক ও তাদের সন্তানদের জীবনের বিশাল ফারাকই এই ক্ষোভকে উসকে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে দেশে স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তরুণদের ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় গত কয়েক সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যায় #নেপোকিড ট্রেন্ডে। এটি নেপালেও বেশ সাড়া ফেলে।

স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় তরুণদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলনের সবচেয়ে সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো— একটি ভালো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের কল্পনা করার ক্ষমতা, আর তাদের স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার বিশাল ফারাকটা দেখতে পাওয়া।

আল জাজিরাকে তিনি আরও বলেন, তরুণদের শক্তি ছিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা, বাস্তবতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা, আর একে অপরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুভূতি।

এই দেশগুলোর জনসংখ্যাগত চিত্রেও মিল আছে। তিন দেশেরই প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ ২৮ বছরের নিচে। তাদের মাথাপিছু আয় বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় অনেক কম, তবে সাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশের বেশি।

দক্ষিণ এশিয়ার তরুণদের আন্দোলনগুলো কেবল কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর দাবি বা বিচ্ছিন্নতাবাদের মতো সীমিত ইস্যুতে ছিল না। বরং তারা জোর দিয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, বেকারত্ব, দুর্নীতি ইত্যাদি সবার জন্য প্রাসঙ্গিক সমস্যার ওপর। ফলে দেশের ভেতরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এই আন্দোলনগুলো বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছে।

স্ট্যানিল্যান্ডের বক্তব্য হলো, যখন সরকার এমন আন্দোলনের মুখে পড়ে, তখন তাদের পক্ষে তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যায়। কারণ, একদিকে সমাজে বৈষম্য (ধনী-দরিদ্রের ফারাক), অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া— এমন পরিস্থিতিতে সরকারের হাতে আন্দোলন থামানোর মতো কার্যকর উপায় খুব সীমিত হয়ে পড়ে।

জেন জি’র এগিয়ে থাকা

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স ইন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স প্রোগ্রামের ফ্যাকাল্টি ডিরেক্টর রুমেলা সেন আল জাজিরাকে বলেন, এসব দেশের বিক্ষোভে ক্রোধের চিত্রের বাইরে তাকালে বোঝা যায়, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহির প্রতি একটি অত্যন্ত গণতান্ত্রিক ও আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

তিনি বলেন, তরুণপ্রধান জনসংখ্যা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার জেন জি প্রজন্ম সহজভাবেই কমিউনিটি, সংগঠন ও আত্মপ্রকাশের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগাতে পেরেছে।

এসব দেশের সরকার ইন্টারনেট বা নির্দিষ্ট যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করার চেষ্টা করলেও, তা উল্টো ফল বয়ে এনেছে।

রুমেলা সেন বলেন, তরুণ জনগোষ্ঠী, ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার এবং দক্ষতার কারণে  দক্ষিণ এশিয়ার জেন-জিরা অনায়াসে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে ‘কমিউনিটি গঠন, সংগঠন এবং আত্মপ্রকাশের জন্য কাজে লাগাতে পেরেছে। ’

তিনি বলেন, নেপালের তরুণ প্রজন্ম দেখছিল যে কিছু সুবিধাভোগী পরিবার বা রাজনৈতিক অভিজাতদের সন্তানেরা (নেপোকিড) বিলাসী জীবনযাপন করছে, বিদেশে পড়াশোনা করছে। কিন্তু এই সুযোগ-সুবিধার ভিত্তি গড়ে উঠেছে সাধারণ তরুণদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে। তাই তারা এসব অন্যায় আর চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যেতে চায়নি।

সেন ব্যাখ্যা করেন, প্রজন্মভিত্তিক যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেটি একেবারে স্বতঃস্ফূর্ত ও সত্যিকারের অনুভূতি। তরুণরা মনে করছে, আগের প্রজন্ম তাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের নৈতিক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ন্যায়বিচার, কাজ আর ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের দাবিগুলো প্রযুক্তি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করেছে।

তরুণরা কি একে অন্যের কাছ থেকে আন্দোলন করতে শিখছে?

গবেষণার কাজে কাঠমান্ডুতে থাকা দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক রাজনৈতিক নৃবিজ্ঞানী জীবন শর্মা বলেন, তরুণদের এসব আন্দোলন একটি আরেকটি থেকে শিখেছে। যেমন ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশের তরুণেরা বৈশ্বিক আন্দোলন থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে।

তিনি বলছেন, নেপালের তরুণরা শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের আন্দোলন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অনুসরণ করছে। জেন-জিদের এই রাজনৈতিক আন্দোলন কোনো আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা হতাশা ও অসন্তোষ থেকেই জন্ম নিয়েছে।

স্ট্যানিল্যান্ডও শর্মার সঙ্গে একমত। নিশ্চিতভাবেই, এই আন্দোলনগুলো একটি আরেকটিকে পর্যবেক্ষণ করছে, শিখছে এবং অনুপ্রাণিত হচ্ছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনের কথা হলো, নেপালসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোতে তরুণেরা সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইন করছেন। বিকেন্দ্রীকৃতভাবে আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে। এই কৌশল ডিজিটাল আন্দোলনের নতুন পদ্ধতি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।

এখন শেষ এবং একমাত্র প্রশ্ন হলো—এরপর কোথায়? 

আল-জাজিরা অবলম্বনে

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।