জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক শহরগুলোতে বাংলাদেশিসহ সব দেশের শিক্ষার্থীদের প্রধান চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে এখন বাসা খুঁজে পাওয়া। শুধু পছন্দের বিষয় পাওয়া কিংবা ভিসা প্রাপ্তিই নয়, এখন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই নির্ভর করছে শহরের বাসাভাড়ার ওপর।
জার্মানিতে পড়তে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা জানান, জার্মানিতে বাসা পাওয়া এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। আর কমমূল্যে বাসা তো পাওয়াই যায় না। যদিও শেয়ার্ড বাসা পাওয়া যায়, সেটার ভাড়া অনেক বেশি। বাংলাদেশি টাকায় প্রতিমাসে যার ভাড়া প্রায় লাখ টাকা।
জার্মানির গবেষণা সংস্থা এমপিরিসিয়ার এক বিশ্লেষণেও এমন তথ্যও উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, গত এক দশকে শেয়ার্ড বাসার ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। একই সময়ে সাধারণ ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ছিল মাত্র ৩২ শতাংশ।
কী বলছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
২০২৫ সালের শীতকালীন সেমিস্টার শুরু হচ্ছে এই মাসে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার শুরু হবে আগামী মাসে। তবে পড়াশোনা শুরু করার আগে বাংলাদেশিসহ জার্মানির শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তারা কি মিউনিখে পড়বে, না কি ফ্রাঙ্কফুর্টে না কি বার্লিনে, না কি সিগেনে? কারণ, মিউনিখে পড়তে চাইলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ফি নয়, মাসে এক রুমের জন্য ৭৫০ ইউরো ভাড়া গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে, ছোট শহর সিগেনে একই ধরনের শেয়ার্ড রুমের গড় ভাড়া ৩৫০ ইউরো। এই অস্বাভাবিক ব্যবধান শিক্ষার্থীদের শহর নির্বাচনের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দিকটিকে গভীরভাবে চিন্তায় নিতে বাধ্য করছে।
মিউনিখে পড়তে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাকিব ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি অনেক কষ্ট করে ব্লক অ্যাকাউন্ট করে জার্মানিতে এসেছি। কিন্তু বাসা ভাড়া দিতেই আমার বেশি টাকা চলে যাচ্ছে। পার্টটাইম কাজ করে যা পাচ্ছি তা দিয়ে খাবো না কি বাসা ভাড়া দেব এটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি। এমন চিন্তায় পড়াশোনা করাটাও কষ্টের।
এমপিরিসিয়ার গবেষক রেইনার ব্রাউন বলেন, আগে শিক্ষার্থীরা ভাবত, কোথায় ভালো শিক্ষক আছেন, কোথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি থাকা যাবে। এখন ভাবতে হচ্ছে, কোথায় থাকা সম্ভব? কারণ বাসা ভাড়ার চিন্তায় তারা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছেন না।
১২০টি শহরের তথ্য বিশ্লেষণ
এমপিরিসিয়ার গবেষণায় ১২০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক শহরের ১ লাখের বেশি বাসাভাড়ার বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রীক শহর যত ছোট ও কম জনপ্রিয়, সেখানে ভাড়াও ততটাই সহনীয়। প্রত্যেক শহরে শেয়ার্ড অ্যাপার্টমেন্ট ও পুরো বাসার ভাড়া প্রায় সমান হারে বেড়েছে।
বাড়ছে সংকট, বাড়ছে চাপ
প্রতিটি সেমিস্টারের শুরুতে শিক্ষার্থীদের বাসা খোঁজার সমস্যা যেন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। গবেষক ব্রাউন বলেন, মূল সমস্যা হলো, জার্মানিতে নতুন বাসার ঘাটতি। সাশ্রয়ী ছাত্রাবাসের যুগ শেষ। কারণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু তাদের রাখার মতো শেয়ার্ড অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা বাড়েনি। আগে যেসব তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে সেই শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে যেতেন, তারা এখন আগের শহরেই থেকে যাচ্ছেন। এতে শহরের ওপর চাপ আরও বাড়ছে।
ফ্রাঙ্কফুর্টের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান জানান, জার্মানিতে ভাড়া বাসা পাওয়া এখন আর কষ্ট নয়, এটা অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার অনেক বন্ধু এই শহর ছেড়ে অন্য শহরে যাচ্ছে শুধু কম ভাড়ার জন্য। এছাড়া যেসব বাংলাদেশি বা বিদেশি শিক্ষার্থী একবার ছোট অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছিলেন, তারা ১০ বছর ধরে সেই বাসাতেই থাকছেন। তারা এই বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও বেশি বেতনে চাকরি পেলেও যাচ্ছেন না।
গবেষক ব্রাউনের মতে, শেয়ার্ড হাউজিং এক ধরনের গেটওয়ে হয়ে উঠেছে, একবার ঢুকলে অনেকেই আর শহর ছাড়তে চায় না।
নতুন বাড়ি নির্মাণই একমাত্র সমাধান
বাসস্থানের এই সংকট থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ব্রাউন বলেছেন, সমাধান একটাই। বাড়ি নির্মাণ বাড়াতে হবে। তবে শহরের ভেতরে জমির সংকট থাকায়, বিকল্প হিসেবে শহরের পাশের জমিকে কাজে লাগাতে হবে।
এনডি