জাতিসংঘ: পরমাণু অস্ত্র কেনাবেচা বন্ধের পাশাপাশি বিলাস পণ্য আমদানির বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সোমবার আলোচনায় বসছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপ কমিটি।
এমন এক সময় এ ধরনের বৈঠক হতে যাচ্ছে যখন গত সপ্তাহে উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে গোলাগুলির পর দুই দেশের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এর আগে ২০০৬ ও ২০০৯ সালে পরীক্ষামূলক পরমাণু অস্ত্র বিস্ফোরণের দায়ে উত্তর কোরিয়ার উপর কঠোর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
চলতি মাসেই প্রকাশিত জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার পরও উত্তর কোরিয়া নিষিদ্ধ পরমাণু অস্ত্র ও অন্যান্য বিলাস পণ্যের কেনাবেচা অব্যাহত রেখেছে।
নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে এর আগের প্রতিবেদনটি চীনের বাধার কারণে কয়েকমাসের জন্য নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন এই প্রতিবেদনটি নিয়ে সোমবারের বৈঠকে ব্যাপক বিতর্ক হবে।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী গ্র্যাণ্ড পিয়ানো, হাতঘড়ি, মার্সিডিজ গাড়ি এবং আই পডের মতো বিলাসবহুল পণ্যগুলো উত্তর কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিম জং ইলের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। পরমাণু অস্ত্রের মতো এগুলোও নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা শুরু করতে দেশটির প্রতি আরও চাপ সৃষ্টির উদ্দেশে বিলাসবহুল পণ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
প্রচলিত রয়েছে, দেশটিতে চরম খাদ্যাভাবের মধ্যেও কনিয়াকের মতো পানীয় এবং পশ্চিমা জীবনযাপনের প্রতি কিমের দুর্বলতা রয়েছে।
সর্বশেষ এই প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, যেসব জাপানী কোম্পানি উত্তর কোরিয়ায় ৩৪ টি পিয়ানো, ৪ টি মার্সিডিজ বেঞ্জ লিমুজিন এবং প্রসাধন সামগ্রী রপ্তানি করেছিল তাদের জন্য শাস্তি অপেক্ষা করছে।
একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া অস্ত্র কোম্পানীগুলোকে ব্যবহার করে অস্ত্র ছাড়াও ঘড়ি, শ্যাম্পেনের মতো বিলাসবহুল পণ্য সামগ্রী তাদের চাহিদা মতো আনিয়ে নেয়।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার উপর প্রতিবেদন বৈষম্যমূলক।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি হিসাব মতে, উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার গত দুই বছরে ৩ দশমিক ৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে যা নিষেধাজ্ঞার কারণে নিম্নগামী ছিল। উত্তর কোরিয়াতে চীনের রপ্তানির পরিমাণ ২০০৯ সালে ১ দশমিক ২ বিলিয়নে নেমে এসেছে যা ২০০৮ সালে ছিল ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন। চীনে উত্তর কোরিয়ার রপ্তানিও ৭৫৪ মিলিয়ন থেকে ৫০১ মিলিয়নে নেমে আসে।
চীন সব সময়ই উত্তর কোরিয়ার উপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে আসছে।
কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মত হচ্ছে, উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু আলোচনায় ফিরিয়ে আনার প্রচারণার কারণেই বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তেমনভাবে কার্যকর হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১০