ঢাকা: প্রেসিডেন্ট মুরসির মুক্তি ও তাকে স্বপদে বহালের দাবিতে কায়রোতে অবস্থান নেওয়া তার সমর্থকদের হটিয়ে দিতে দেশটির বর্তমান সেনা সমর্থিত সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানে বহু হতাহতের ঘটনার পর দেশটির সরকার জরুরি অবস্থার ঘোষণা দিয়েছে।
দেশটির রাজধানী কায়রোতে চালানো ওই অভিযানে নিহতের সংখ্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানা ধরণের খবর আসছে।
দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, অভিযানে ৯৫ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিম ব্রাদারহুড জানিয়েছে, অভিযানে কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় অনুসারে রাত ৮টা থেকে মিশরে জরুরি অবস্থা কার্যকর হবে।
গত ৩ জুলাই বিরোধীদের ব্যাপক গণবিক্ষোভের মুখে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিশরের প্রথম প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত ও আটক করে দেশটির সেনাবাহিনী। সেই থেকে দেশটির শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করছে সামরিক বাহিনী সমর্থিত একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার। তবে মুরসিকে উৎখাতের দিন থেকেই তার হাজার হাজার সমর্থক রাজধানী কায়রোর দু’টি স্থানে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান করছে।
সামরিক অভ্যুত্থানে মুরসির পতনের পর ঘাঁটি গেড়ে থাকা মুরসির সমর্থকদের উৎখাত করতে বুধবার ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অভিযান চালায় মিশরের সেনাবাহিনী। এসময় বুলড্রোজার দিয়ে মুরসি সমর্থকদের দুইটি ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সময় বুধবার ভোর ছয়টার কিছু পরে কায়রোর পূর্বাঞ্চলীয় নাহদা স্কয়ারে অবস্থিত মুরসি সমর্থকদের অস্থায়ী ক্যাম্পে অভিযান শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী। একই সঙ্গে নাসর সিটিতে অবস্থিত রাবা আল আদাইয়া স্কয়ারে মুরসি সমর্থকদের ক্যাম্পেও অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীকে লক্ষ্যে করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটে প্রকাশিত লাইভ ফুটেজে নাহদা স্কয়ার ও রাবা আল আদাইয়া স্কয়ার থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। সেখানে অবস্থানরত সাংবাদিকরাও মুরসি সমর্থকদের জমায়েত লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। নাহদা স্কয়ারের ওপর দিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারকে চক্কর দিতে দেখা গেছে।
নিহতদের মধ্যে দুইজন সাংবাদিক এবং মুসলিম ব্রাদারহুদের শীর্ষস্থানীয় নেতা মোহাম্মদ এল- বেলটাজির ১৭ বছর বয়সী কন্যা আসমা এল বেলটাজিও রয়েছে। নিহত দুই সাংবাদিকের মধ্যে একজন স্কাই নিউজ চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান মাইক ডিন।
টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটে প্রকাশিত লাইভ ফুটেজে নাহদা স্কয়ার ও রাবা আল আদাইয়া স্কয়ার থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। সেখানে অবস্থানরত সাংবাদিকরাও মুরসি সমর্থকদের জমায়েত লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। নাহদা স্কয়ারের ওপর দিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারকে চক্কর দিতে দেখা গেছে।
নাহদা স্কয়ারে অবস্থানরত মুরসিপন্থি গণতান্ত্রিক জোট অ্যান্টি ক্যু অ্যালায়েন্সের সদস্য লায়লা একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘ইতিমধ্যেই অনেক লোককে হত্যা করা হয়েছে। এখানে যা ঘটছে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। ’
এদিকে অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে সেনা নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে।
অভিযান চালানোর আগে মুরসির সমর্থকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিশরের নিরাপত্তা বাহিনী। সোমবার ভোর থেকেই এ অভিযান শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে অবশ্যাম্ভাবী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের কথা চিন্তা করে অভিযান ওই সময়ে স্থগিত করা হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের ৩০ বছরের স্বৈরশাসনের অবসানের পর ২০১১ সাল থেকেই মিশরের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে আবার এ ঘটনার ফলে আরব বিশ্ব বহুদিন পর দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেল।
বাংলাদশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৩
সম্পাদনা: কামরুল হাসান কাইউম ও কবির হোসেন, নিউজরুম এডিটর- eic@banglanews24.com