ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নেপাল সীমান্তে আটক ভারতীয় মুজাহিদীন প্রতিষ্ঠাতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৩
নেপাল সীমান্তে আটক ভারতীয় মুজাহিদীন প্রতিষ্ঠাতা

কলকাতা: ভারতের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী, মোস্ট ওয়ান্টেড ভারতীয় মুজাহিদীন প্রধান ইয়াসিন ভাতকলকে (৩০) ভারত-নেপাল সীমান্তের সোনৌলি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ভারতের একটি বিশেষ তদন্তকারী দল ভাতকলকে গ্রেফতার করে।



ভাতকলকে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর কাছে হস্তান্তর করা হবে। তার সাথে ভারতীয় মুজাহিদীনের আরেক সদস্য আসাদুল্লাহ আক্তারকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের তদন্ত দল ইয়াসিন ভাতকালকে ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করেছে। ’  

কয়েকদিন আগে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার বোমা বিশেষজ্ঞ আব্দুল করিম টুন্ডাকে গ্রেফতারের পর কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন ও ভারতীয় মুজাহিদীনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা  ইয়াসিন ভাতকলকে গ্রেফতারের ঘটনাকে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাফল্যের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
গ্রেফতারের সময় ভাতকল নিজেকে নেপালে কর্মরত একজন প্রকৌশলী বলে দাবি করে। এরপর আবার একজন আয়ুর্বেদিক ডাক্তার হিসেবে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সূত্র জানায়, তাকে ধরার ক্ষেত্রে তথ্য ও ছবি খুবই কম ছিল।

ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড ১২ জনের মধ্যে ভাতকাল অন্যতম। দিল্লি, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, পুনে ও হায়দ্রাবাদে সন্ত্রাসী হামলার অপরাধে ভাতকালকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি এই আট শহরে নিষিদ্ধ জঙ্গি কর্মকাণ্ডের প্রধান হোতা। কমপক্ষে এই আট শহরে সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।

২০১১ সালে ভাতকলকে গ্রেফতার করার জন্য ১৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। সম্প্রতি তার এক সহযোগি আনোয়ার মল্লিককে নদিয়া থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আনোয়ারের কাছ থেকে তার ব্যাপারে তথ্য পেয়ে এই তল্লাশি চালিয়ে ভাতকলকে গ্রেফতার করা হয়।

ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, ভাতকলকে গ্রেফতারের ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে। এ মুহূর্তে তাকে বিহার পুলিশের হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এনআইএ ধারণা করছে, ভাতকালই ২০১০ সালে পুনের জার্মান বেকারিতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়। এ সময় ধারণ করা একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে ভাতকল ক্যাপ পরে তার মুখ আড়াল করে রেখেছে।

গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ভারতীয় মুজাহিদীনকে নিয়মিত অর্থ দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করত।

বিভিন্ন ছদ্মবেশধারী ভাতকলের আসল নাম মোহাম্মদ আহমেদ সিদ্দিবাপ্পা। তিনি ২০০৮ সালে তার ভাই রিয়াজ ভাতকাল ও আব্দুল সুবহান কুরায়েশিকে সাথে নিয়ে ভারতীয় মুজাহিদীন প্রতিষ্ঠা করে। জার্মান বেকারি বিস্ফোরণের মামলায় রিয়াজকেও সন্ধান করছে পুলিশ।

ধারণা করা হয়, উচ্চশিক্ষিত ভাতকল, বোমা বানানোয় বিশেষভাবে দক্ষ। ছদ্মবেশ ধরে পালিয়ে যেতেও তার জুড়ি নেই। এর আগে বিভিন্নভাবে সে তার এ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ভাতকল সৌদি গিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের তত্ত্বাবধানে বিশেষ মতবাদে দিক্ষীত হয় এবং প্রশিক্ষণ নেয়।

 ২০০৯ সালে একটি চুরির ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কিছুদিন পর সে শেকসপীয়ার সরণি থানা বের হয়ে যায়। সে পুলিশকে বোঝাতে সম্মত হয় যে তার নাম বুল্লা মল্লিক। সে কলকাতার নিবাসী। এর কিছুদিন পরেই সে আবার হামলা চালায়।

কলকাতা পুলিশের এসটিএফ ২০১০ সালে তাকে জালনোট কাণ্ডে গ্রেফতার করে। কিন্তু প্রকৃত পরিচয় জানা না থাকায় এবং উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে সে জামিনে ছাড়া পায়।  

২০১০ সালে পুলিশ তাকে ভেবে তার ভাইকে মাঙ্গালোর বিমান বন্দর থেকে গ্রেফতার করে।
 
২০১০ সালে ভারতীয় মুজাহিদীনকে জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করে ভারত। পরে যুক্তরাষ্ট্রও সংগঠনটি সম্পর্কে একই ঘোষণা দেয়। মুম্বাইয়ে ২৬/১১ হামলাকারী জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে ভারতীয় মুজাহিদীনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, ২৯ আগস্ট, ২০১৩/আপডেটেড: ১৭৩৫ ঘণ্টা  
ভিএস/কেএইচকিউ/এসএস/জেসিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।