ঢাকা: পশ্চিমাদের সামরিক হস্তক্ষেপের হুঁশিয়ারির মুখে নিজের শক্তির কথা প্রকাশ করলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। তিনি বলেছেন, তার দেশ যেকোনো বিদেশি হামলা প্রতিহত করবে।
বাশার বলেছেন, সিরিয়া যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের মুখে নিজেকে রক্ষা করবে এবং হুমকি শুধু তার নিজস্ব মূলনীতি ও স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধতাকে বাড়িয়ে দেবে।
বৃহস্পতিবার সিরিয়া সফরত ইয়েমেনি রাজনীতিকদের একটি প্রতিনিধি দলকে তিন এ কথা জানান বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে।
২১ আগস্ট দামেস্কে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর সিরিয়ার ওপর পশ্চিমাদের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সামরিক হস্তক্ষেপ চালানোর হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এ হুঁশিয়ারি দিলেন বাশার আল-আসাদ।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানান, তারা ‘সিদ্ধান্তে’ এসেছে যে সিরিয়ার সরকার ওই হামলা চালিয়েছে। এর উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তবে ওবামা, এখনও সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ চালানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেননি।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স আর যুক্তরাজ্যের হুঁমকির মুখে সিরিয়ার একমন্ত্রী জানান, তাদের যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে তা চমকে দেয়ার মতো।
অভিযোগ রয়েছে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পূর্বাঞ্চলীয় উপকূল ঘৌতায় ওই রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৩৫৫ জন নিহত হয়েছে এবং ৩ হাজার জনের মতো আহত হয়েছে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওবামা জানান, তিনি তখনও নির্দিষ্ট ফরমেটের কোনো সামরিক আক্রমণ চালানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেননি। তবে এ ধরনের আক্রমণ নিয়ে তার সন্দেহের মাত্রা খুবই কম।
ওবামা বলেন, প্রকাশ্যে সিরিয়া দ্বন্দ্বে জড়ানোর বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তার। কিন্তু যারা রাসায়নিক অস্ত্রের মতো অস্ত্র ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা তাদের জন্য অবশ্য পালনীয়।
ওবামার শঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্র ইসরায়েল, তুরস্ক, জর্ডান ও ওই অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটিগুলোর জন্য বিপজ্জনক রাসায়নিক অস্ত্র। সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র দুষ্টুদের হাতে গেলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের জন্য ঝুঁকি হয়ে পড়বে।
এদিকে দামেস্কে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগটি মাঠপর্যায়ে তদন্ত করছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, তিনি শনিবার পর্যবেক্ষক দলের কাছ থেকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে প্রতিবেদন পাবেন।
সিরিয়া ইস্যু নিয়ে যুক্তরাজ্যের আহ্বানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে বসলেও সদস্যরা একমত হতে পারেনি। নিরাপত্তা পরিষদের কাছে সামরিক হামলা চালানোর অনুমোদন বিষয়ে খসড়া প্রস্তাব রেখেছিল যুক্তরাজ্য।
তবে রাশিয়ার বিরোধিতার মুখে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। মতানৈক্য নিয়েই শেষ হয় নিরাপত্তা পরিষদের সভা।
বৃহস্পতিবার চীনের সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রকাশ করে, যেকোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নিয়মকে লঙ্ঘন করবে। ’
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাতিসংঘের মিত্র দেশগুলোকে ছাড়াই হামলা চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশন আহ্বান করেছেন। জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত সিরিয়ার ওপর সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন না বলে জানিয়েছেন ক্যামেরন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয় ওলাঁদ বলেছেন, সিরিয়ার সংকট সমাধানে রাজনৈতিক সমাধানটাই লক্ষ্যে রয়েছে, তবে ‘সাময়িকভাবে সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপে’র মাধ্যমে তা কেবল আসতে পারে।
ফরাসি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা প্রেসিডেন্টের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। নির্দেশ পেলেই সিরিয়ায় হানা দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৩
এসএফআই/আরআইএস