ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

সিরিয়ার সেনা সামর্থ্য

আন্তজাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৩
সিরিয়ার সেনা সামর্থ্য

ঢাকা: পশ্চিমাদের হামলা প্রতিহত করার ঘোষণা দৃঢ়ভাবেই দিয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়ালিদ মুয়াল্লেমও বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চমকে দেওয়ার মতো।



সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ঘনিষ্ট মিত্র রাশিয়া বলেছেন, পশ্চিমারা সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপ চালিয়ে সুবিধা করতে পারবে না। সহজে জয় আসবে না।

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর রুশ কর্তৃপক্ষ বেশ নিশ্চিতভাবে এসব কথা বলেছেন। অবস্থান ও সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে এমন দৃঢ়ভাবে পশ্চিমাদের হুঁশিয়ারি দিতে পারছে সিরিয়া।

অনেকে মনে করতে পারে, লিবিয়ার একনায়ক কর্নেল মোয়াম্মার গাদ্দাফিও তো হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। লিবিয়ার সঙ্গে সিরিয়ার তুলনা করাটা নেহাতেই অমূলক।

পশ্চিমারা মনে করছে, দুই বছর বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজের শক্তি খুইয়েছে সামরিক বাহিনী। তাই হস্তক্ষেপ হলে দ্রুত তাদের পতন হবে।

কিন্তু ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক রিলেশন্সের সশস্ত্র সংকট বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও গবেষণা পরিচালক ফিলিপ মিগাউলট শোনাচ্ছেন অন্য কথা। তিনি বলছেন, সিরিয়ার সামরিক শক্তিকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।

কাগজপত্রে সিরিয়ার এক লাখ ৭৮ হাজার সৈন্য রয়েছে, এদের মধ্যে স্থলবাহিনীতে এক লাখ ১০ হাজার, নৌবাহিনীতে ৫ হাজার এবং বিমান বাহিনীতে ২৭ হাজার আর  আকাশ প্রতিরক্ষায় ৩৬ হাজার সৈন্য নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও সামরিক অতিরিক্ত ৩ লাখ ১৪ হাজার সৈন্যের কয়েক হাজার সৈন্যকে সহিংসতা শুরুর পর মাঠে নামানো হয়েছে, যুদ্ধ শুরু হলে তাদেরকে মাঠে নামানো হবে।

এ সংখ্যার বাইরেও চার হাজার জন্যকে নৌবাহিনীতে, ১০ হাজার জনকে বিমান বাহিনীতে এবং ২০ হাজার জনকে আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে (এয়ার ডিফেন্স ফোর্স) নতুন করে নিয়োগ দিতে পারে সিরিয়া।

গৃহযুদ্ধের কারণে সিরিয়ার আধা-সামরিক বাহিনীর (যারা সেনাবাহিনীর অংশ নয়) সংখ্যা সঠিকভাবে হিসাব করতে পারেনি আইআইএসএস। তবে গত দুই বছরের গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

২০০৯ সালের এক হিসাবে দেখা ‍যায়, আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা এক লাখ ৮ হাজার। এদের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রক্ষী বাহিনী সদস্য রয়েছে ৮ হাজার আর বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টির এক লাখ মিলিশিয়া।

তবে ফ্রান্সের চেয়ে বেশি এই সৈন্য সংখ্যার আকারে দুই বছরের ‍যুদ্ধে বেশ পরিবর্তন এসেছে, এটা বুঝতে হবে। আইআইএসএস বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধের আগে (সিরিয়ার) সেনাবাহিনীর যে শক্তি ছিল তা সম্ভবত কমে অর্ধেকে এসেছে। পক্ষত্যাগ বা যুদ্ধে হতাহত হওয়ায় সরকারি সৈন্য কমেছে।

ফিলিপ মিগাউলট বলেন, সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরিকে আড়চোখে দেখা হয় এবং অনেক সুন্নি যোগদান থেকে বিরত থাকে। ফলত, আসাদের গোত্র আলাওয়েতির সদস্যরা সেসব পদ পূর্ণ করে। সরকার বিরোধীদের বিশেষ করে সুন্নিদের বিরুদ্ধে আড়াই বছর ধরে যুদ্ধ করলেও আলাওয়েতি ও খ্রিস্টানদের আসাদকে সমর্থন দেয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই, এমনকি পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপের মধ্যেও। তাদের অস্থিত্ব নির্ভর করছে এর ওপর।

সিরিয়া ৫০ হাজার অভিজাত সৈন্যের ওপর নির্ভর করতে পারে। ওইসব সৈন্যকে শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল হিসেবে অভিহিত করেছেন মিগাউলট।

গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর মূলত রাশিয়ার তৈরি বা সোভিয়েতের তৈরি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, সেনাবাহিনীর চার হাজার ৯৫০টি ট্যাঙ্ক ছিল। সরকার অনেক ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত।

ফ্রান্সের বিমান বাহিনীর ৩৬৫টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। তবে গৃহযুদ্ধে এ সংখ্যা আরও নিচে নেমে আসতে পারে। মিগাউলট উল্লেখ করেছেন, সিরিয়ার বিমান ও নৌবাহিনীকে পরাস্ত করা পশ্চিমাদের জন্য সমস্যা হবে না। শুধু রানওয়ে ও নগরবন্দরগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাতে হবে।

আগস্টের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক বিশ্লেষক বলেন, সিরিয়ার বিমান বাহিনীকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসমর্থ করতে ‍মাত্র তিনটি জাহাজ আর ২৪টি যুদ্ধবিমানই যথেষ্ট।

তবে এয়ার ডিফেন্স ইউনিটের ওপর গৃহযুদ্ধের প্রভাব তেমনটি পড়েনি, এয়ার ডিফেন্সের কয়েক হাজার ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য রুশ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যেগুলোর অনেকগুলোই সাম্প্রতিক ও কার্যকরী মডেলের।

লক্ষ্যবস্তু থেকে ১২শ বা ১৩শ কিলোমিটার দূর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে মিত্ররা ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারে কিন্তু তাদের হামলার প্রভাব শুধু আপেক্ষিক হবে।

মিগাউলট আরও বলেছে, দামেস্কের সরকারের হাতে অনেক সময় রয়েছে তাদের অস্ত্রশস্ত্র আবাসিক এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার। ওইসব এলাকায় হামলা চালালে তা ব্যাপকহারে বেসামরিক নাগরিক হতাহত ঘটাবে।

সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদকে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে বৃহত্তম মনে করা হয়, যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্য কোনো তথ্য নেই। রাসায়নিক অস্ত্রবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেশনে সই না করা দেশগুলোর একটি সিরিয়া।

ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচিকে মোকাবেল করতে মিশর ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তা সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচি চালায়। ১৯৯০ এর দশকে রাশিয়া এবং ২০০৫ সালে ইরান সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিকে সহায়তা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের মন্টেরির জেম মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রোলিফারেশন স্টাডিজের তথ্য মতে, সিরিয়ার হাতে ‘শত শত টন’ রাসায়নিক অস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্র খুবই শক্তিশালী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১৩
এসএফআই/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।