ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মালয়েশিয়ায় ৩৮৭ বাংলাদেশি আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৩
মালয়েশিয়ায় ৩৮৭ বাংলাদেশি আটক

ঢাকা: মালয়েশিয়ায় রোববার শুরু হওয়া অবৈধ অভিবাসীবিরোধী অভিযানের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৪৩৩ জন বিদেশিকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮৭ জনই বাংলাদেশি নাগরিক বলে জানিয়েছে দেশটির অভিবাসন দপ্তর।



মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি ড. আহমাদ জাহিদ হামিদি সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, রাজধানী কুয়ালালামপুর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ৪০টি অভিযান চালিয়ে মোট ৮ হাজার ১০৫ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে যারা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পেরেছে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ২ হাজার ৪৩৩ জনকে আটক রাখা হয়েছে।

তিনি জানান, আটককৃতদের মধ্যে ৩৮৭ জন বাংলাদেশি, ৭১৭ জন ইন্দোনেশিয়ান, ৫৫৫ জন মিয়ানমারের নাগরিক এবং ২২৯ জন নেপালি নাগরিক রয়েছেন।

আরও রয়েছেন কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, চীন, ‍নাইজেরিয়া ও থাইল্যান্ডের নাগরিক।

আহমাদ জাহিদ জানান, দেশটির বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত নিরাপত্তা বাহিনীর ২ হাজার ২০৭ জন সদস্যের বিশাল বহর সোমবার ভোর পর্যন্ত এ অভিযান চালায়।

অবৈধ অভিবাসীদের স্বদেশে নির্বাসিত করতে এই অভিযান চলতি বছরের শেষ অবধি চলবে বলেও জানান আহমাদ জাহিদ।

এর আগে মালয়েশিয়ায় অবৈধ অবস্থানের দায়ে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের নিয়ে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়, যারা মালয়েশিয়া সরকারের দেওয়া বৈধ হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেননি তাদের আর পেছনে ফেরার সময় নেই। আটক হতে হবে দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু এ অবস্থায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা ছাড়া খুব বেশি কিছু করার নেই বাংলাদেশ সরকারের।

বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও এসব বাংলাদেশিকে বৈধ না করায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ সরকারের উচ্চ পর্যায়। তারা বলছেন, বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে মালয়েশিয়ান সরকার অবৈধদের বৈধকরণের জন্য সুযোগ দেন। কিন্তু সে সুযোগকে যারা কাজে লাগান নি বা পরোয়া করেননি তারা বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যায় করেছেন। তারা নিজেদের ক্ষতি করেছেন, সেই সঙ্গে দেশেরও ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। তাই তাদের ফিরে আসা ছাড়া আর কোনো উপায় এখন নেই।

তবে, আটক হবার পর কর্তৃপক্ষের দেওয়া ১৪ দিন সময়ের মধ্যে যদি তারা বৈধতার কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হন তবেই সেদেশে থেকে যেতে পারবেন। এই সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস যেটুকু সাহায্য করা সম্ভব করবে বলে ‍‌আশ্বাস দিয়েছে।

মালয়েশিয়াতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের আটক করার ব্যাপারে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ সচিব ড. জাফর আহমেদ খান রোববার দুপুরে বাংলানিউজকে  বলেন, এখন আর কিছু করার নেই। সময় থাকতে বৈধ না হওয়াতেই এখন আটক হতে হচ্ছে অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশিদের।

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অনেকবার বৈধ হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। সেদেশের সরকারের দেওয়া সুযোগ গ্রহণ করতে বলেছি। বহুলোকই সে সুযোগ নিয়ে বৈধভাবে বসবাস করছেন। কিন্তু সেকথা আমলে না নিয়ে যারা অবৈধভাবে থেকেছেন তারাই এখন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে আটক হবেন।

রোববার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলানিউজকে জানানো হয়, কতজন বাংলাদেশি মালয়েশিয়াতে আটক হয়েছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস সেটি এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি। নিশ্চিত হওয়ার পর দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রথম দিকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও রোববার দুপুরে প্রবাসীকল্যাণ ভবনে বাংলানিউজের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসীকল্যাণ সচিব বলেন, আমাদের নাগরিকরা যে দেশেই থাকুক না কেন তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা আমাদের দায়িত্ব।

তাই, আটক বাংলাদেশিদের কীভাবে সহায়তা করা যায় সেটি মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশ মিশনের সঙ্গে আলোচনা করে দেখব। এছাড়া এখনও সুযোগ থাকলে বৈধ হতে সেদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান ড. জাফর।

‌উল্লেখ্য, বছর দুই আগে অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষমা করে বৈধতা নিয়ে কাজ করার সুযোগ ও সময়সীমা বেঁধে দেয় মালয়েশিয়া সরকার। কিন্তু সম্প্রতি ওই সময়সীমাও শেষ হয়ে যায়। নির্দির্ষ্ট সময়সীমায় দুই লাখ ৬৮ হাজার বাংলাদেশি বৈধতার কাগজপত্র সংগ্রহ করেন।

উল্লেখ্য, দেশটিতে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং এসব অপরাধে বিদেশিদের ক্রমবর্ধমান সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের কারণে প্রায় পাঁচ লাখ অভিবাসীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘোষণা দেয়  মালয়েশিয়া সরকার।

দ্য স্টার অনলাইন জানায়, আটক অভিবাসীদের বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে ১৪ দিন সময় দেওয়া হবে। এতে ব্যর্থ হলে তাদের ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি রাখা হবে। আর এখানে বন্দি হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশে ফেরত পাঠাতে কোনো সহায়তা করতে পারবে না আটক নাগরিকের নিজ দেশের হাইকমিশন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন দপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) সারাভানা কুমার বলেন, এই অভিযানের প্রথম ধাপ চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। পরিত্যক্ত বাড়ি, খামার, বিনোদনকেন্দ্র এবং ম্যাসাজ পার্লারও এই অভিযান থেকে বাদ যাবে না বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৩/আপডেট ১১৪৭ ঘণ্টা/আপডেট ১২৩০ ঘণ্টা
এইচএ/জেডএম/জেএম/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।