ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর হামলার হুমকির মুখে এবার জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার। সোমবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানায়, যেকোনো ধরনের আগ্রাসন প্রতিরোধে জাতিসংঘের মহাসচিবকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে সিরিয়ার সরকার।
সিরিয়া সরকার জাতিসংঘের হস্তক্ষেপকে নিরাপদ মনে করছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সিরিয়ার ওপর সামরিক হামলা চালানোর অনুমোদন না দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি কেননা পরিষদের দুই সদস্য চীন ও রাশিয়া তাদের মিত্র সিরিয়ার বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপের তীব্র বিরোধী।
সোমবার সিরিয়ার সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, জাতিসংঘে নিযুক্ত সিরিয়া দূত বাশার জাফরি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট মারিয়া ক্রিস্টিনা পারসিভালের কাছে মার্কিন হামলা থামাতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে একটি চিঠি দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষে ওই চিঠিতে বাশার জাফরি লিখেছেন, সিরিয়ার ওপর কোনো ধরনের আগ্রাসন প্রতিরোধে এবং সিরিয়া সংকটের রাজনৈতিক সমাধান বের করতে জাতিসংঘের মহাসচিবের এগিয়ে আসা উচিত।
আন্তর্জাতিক বৈধতা লঙ্ঘন করে শক্তির অপব্যবহার রোধে নিরাপদ ঢাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেছেন, ‘শান্তির পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দায়িত্ব পালন করা’ উচিত।
কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরোধিতা করলে সেদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলা চালানো উচিত নয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন জাফরি।
সিরিয়ার সরকার বিরোধীদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালিয়েছে-এমন অভিযোগে দেশটিতে হামলা চালানোর হুমকি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হামলা অংশ নেওয়ার কথা জানান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। কিন্তু পার্লামেন্টে সিরিয়ায় হামলার প্রস্তাব নাকচ হলে পিছিয়ে আসেন ক্যামেরন। তবে যুক্তরাজ্য পিছিয়ে এলেও ফ্রান্স সিরিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপের পক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ২১ আগস্ট বিদ্রোহীদের ওপর সরকারি বাহিনী রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে এর যথোপযুক্ত প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। ওই হামলায় এক হাজার ৪শ’র বেশি লোক নিহত হয়েছে বলে মার্কিন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেসামরিক লোকদের ওপর নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে সিরিয়া আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে, তাই তার যথোপযুক্ত শাস্তি পাওয়া উচিত বলে মনে করে মার্কিন প্রশাসন।
প্রথম হামলা চালানোর হুমকি দিলেও কি পরিমাণে এ হামলা হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। যুক্তরাজ্য পিছিয়ে যাওয়ায় তিনি সিরিয়ায় ‘সীমিত আকারে’ হামলা চালাতে চান। এ বিষয়ে কংগ্রেসের অনুমোদন চাচ্ছেন ওবামা। তবে কংগ্রেস অনুমোদন দিক বা না দিক তাতে ওবামার হামলা চালানো নাও আটকে থাকতে পারে।
সিরিয়ায় পশ্চিমাদের হামলাকে সমর্থন জানিয়েছে সৌদি আরব। শুধু তাই নয়, আরব দেশগুলোর সংগঠন আরব লীগও সিরিয়ায় সামরিক হামলার পক্ষে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
শনিবার চারদিন তদন্ত শেষে দামেস্ক ছাড়ে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল। সোমবার গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানোর কথা। এরপরেই জাতিসংঘ জানাবে, আসলে দামেস্কে ২১ আগস্ট রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে কিনা।
২০১১ সালের মার্চ থেকে অব্যাহত সহিংসতায় সিরিয়ায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। এছাড়াও লাখো লাখো লোক গৃহছাড়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ আপডেটেড: ১৭২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৩
এসএফআই/জিসিপি