বাঙ্গালি চিরকালই ভ্রমণ পিপাসু আর ভোজন রসিক। রসনা ঠিক থাকলেও সময় বা সুযোগের অভাবে বিদেশ ভ্রমন হয়ে ওঠেনা।
জেট গতির জীবন- আর সেই জীবনে ক্লান্ত হওয়া একবারেই মানা। অফিসের কাজের চাপ কিংবা ব্যবসার ওঠা পড়া জীবন যুদ্ধের প্রতিটি দিন যেন নিংড়ে নিয়ে যায় সমস্ত জীবনীশক্তি। কিন্তু জীবনে সফল হওয়ার চাবিকাঠি সুস্থ শরীরের সঙ্গে সঙ্গে চনমনে মন। আর সেই মনকেই চনমনে করে নিতে কলকাতার বুকে হাজির পূর্ব ভারতের একমাত্র “ওয়াটার থিম পার্ক” অ্যাকয়াটিকা।
শুধু কলকাতার মানুষদের জন্যই নয় কলকাতায় বেড়াতে এসে যদি কিছুটা সময় এই জলপরীদের রাজ্যে কাটিয়ে না যান তবে একটি বড় সুযোগ হাতছাড়া করবেন, সেটা চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।
কলকাতার বিধান নগরের অদূরে ১৭ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই নীল রঙের দেশ। কোথায় পাহাড় থেকে নেমে আসছে খরস্রোতা নদী আবার কোথাও পাহাড়ের গুহার উপর থেকে সশব্দে নেমে আসছে ঝরনার জল। কিছুটা দূরেই সমুদ্রের ঢেউ। ঠিক যেন আছড়ে পড়ছে সমুদ্র পাড়ের বালিয়াড়িতে।
হঠাত চোখে পড়বে চারিদিকে জলে ঘেরা সবুজ প্রান্তর। ঠিক যেন গঙ্গা-পদ্মার উপর ভেসে ওঠা কোন চর। ফাঁকা, যেন আপনারই অপেক্ষায়। কোথাও দুরন্ত ফোয়ারা তার শত বাহু প্রসারিত করে আপনার অন্তরাত্মাকে সিক্ত করতে উদ্যত। কোথাও কাঁচের মত স্থির শান্ত জলের উপর দিয়ে দেখা যায় তার অভ্যন্তরের জগত। এ এক অন্য পৃথিবী।
যদি ভেবে থাকেন এখানেই শেষ তবে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে চমক। অনেক দিন বৃষ্টিতে ভেজা হয়নি। কিশোর বেলার সেই দিন গুলি কিংবা উত্তাল যৌবনের সেই বিকেল গুলির মত। যদি আর একবার ফিরে যেতে ইচ্ছা করে তবে দাঁড়িয়ে পড়ুন বৃষ্টির মাঝে।
কানে আসতেই পারে জলদ গম্ভীর শব্দ। মধ্যে মধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানি। আর “শ্রাবণের ধারার মত” বৃষ্টি ঝড়ে পড়বে আপনার শরীরে। ধুয়ে দেবে সমস্ত ক্লান্তি, সমস্ত গ্লানী।
আবারও যদি ভাবেন এখানেই সমাপ্তি, তবে বলে রাখি এইতো সবে শুরু। এখনও অনেক কিছুই বাকি। ঢাকার যানজটে আপনি ক্লান্ত। মাঝে মাঝে যদি ইচ্ছে করে বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় দ্রুত গতিতে ছোটাতে আপনার গাড়িটি। তবে শহরের রাস্তায় না পারলেও পূর্ব ভারতের একমাত্র “ওয়াটার থিম পার্ক” কলকাতায় অ্যাকয়াটিকা সফরে এসে আপনার মনের সাধটা পূরণ করতেই পারেন।
অ্যাকয়াটিকা- হাজির করেছে একটি বিশেষ ‘রেসিং ট্র্যাক”। যে বৃষ্টি ভেজা ‘রেসিং ট্র্যাক’-এর মধ্যে দিয়ে আপনি গতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে জয় করতে পারবেন আপনার স্বপ্নের উড়ানকে। যদি নিরাপত্তার কথা ভাবেন তবে জেনে রাখুন এটা পুরোপুরি নিরাপদ।
এই গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে এক বিশেষ ধরেনের গাড়ি। যেটা দেখতে আপনার গাড়ির মত হলেও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা এটিকে বানান হয়েছে একদম নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত। তার উপরে আছে ‘রেসিং ট্র্যাক’-এর বিশেষ নিরাপত্তা।
আছে “ওয়াটার আম্ব্রেলা”। পিচ্ছিল এই বিরাট ছাতার উপর পরীক্ষা করেই নিয়ে পারেন আপনার শারীরিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা। আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে মজাটা আরও বেশি। ছাতার উপরে পড়ছে ফোয়ারার জল আর সেই জল ঝরে পড়ছে নীচের “সুইমিং পুলে”। আপনিও সেই জলের সঙ্গে ফোয়ারার মত ঝরে পড়বেন “সুইমিং পুলের” জলে।
এর পাশেই আছে প্রায় কুড়ি ফুট উঁচু দুটি একচালা ঘর। ঘরে ঢোকার সময় আপনাকে উঠতে হবে একটি সিঁড়ি দিয়ে আর কিন্তু নামার পথটি দারুণ মজার। সেখানে কোন সিঁড়ি নেই আছে একটি সুরঙ্গ। যেটিতে গা ভাসিয়ে দিলেই আপনি অতি দ্রুত গতিতে সরাসরি গিয়ে পড়বেন নীল জলের উপর।
এছাড়াও আছে প্রায় পঞ্চাশ ফুট উঁচু একটি জায়গা যেখান থেকে একটি টিউবে চড়ে ঝড়ের গতিতে আপনি নেমে আসতে পারেন সুইমিং পুলের জলে। ভাসতে পারেন টিউবে চেপে। ভয় পাবেন না, আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। চোখ খুলে রেখে মজা নিতে থাকুন প্রতিটি মুহূর্তের। সাঁতার না জানলেও ক্ষতি নেই। কারণ এখানকার জলের গভীরতা কোন জায়গাতেই ডুবে যাবার মোত নয়।
যদি আপনি কোনদিন বরফের পাহাড়ে স্কেটিং করে না থাকেন তবে একবার হাজির হতেই হবে কলকাতার এই ‘ওয়াটার থিম পার্ক’ অ্যাকয়াটিকাতে। এখানের স্কেটিং-এর অভিঞ্জতার সঙ্গে তুলনা করলে হলফ করে বলা যায় এই আভিঞ্জতা বরফের পাহাড়ে স্কেটিং করার অভিঞ্জতার তুলনায় কম কিছু হবে না।
এখানেই শেষ নয়- আছে প্রায় পঞ্চাশ ফুট উঁচু রোলার ক্লোস্টার। যেটি আপনাকে একটি জলে ভাসমান টিউবে করে দূরন্ত গতিতে অবিশ্বাস্য সব বাঁক ঘুড়িয়ে কখনো সুরঙ্গ কখনো খোলা আকাশের মধ্যে দিয়ে এনে ফেলবে জলে।
বাস্তব আভিঞ্জতার ভিত্তিতে বলা যায় পৃথিবীর যেকোনো রোমাঞ্চকর “রাইড”-এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে এই রোমহর্ষক রাইড।
এছাড়াও ইচ্ছা হলেই আপনি কিছুটা সাঁতার দিতে পারেন। ঘুরে আসতে পারেন জলের মধ্যে থাকা গুহার ভেতর দিয়ে। অথবা সুইমিং পুলে একবার চেষ্ট করে দেখতে পারেন “ওয়াটার পোলো” খেলবার। কিংবা মনের সুখে ঝরনার জলে সেরে ফেলতে পারেন স্নান। আবার ইচ্ছা হলেই একটি সমুদ্রের ঢেউতে শরীর ডুবিয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে স্বাদ নিতে পারেন ডাবের জল।
মনে পড়ে শেষ কবে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বন্ধুদের সং্গে উদ্দাম নাচ করেছেন? যদি সেটা মিলিয়ে গিয়ে থাকে ধূসর স্মৃতির সরণীর কোন বাঁকে তবে অ্যাকয়াটিকা আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারে সেই কিশোর বেলার কিছুটা সময়। অ্যাকয়াটিকার মধ্যেই আছে একটি বৃষ্টি ঝরা “ডিস্ক”। যেখানে সুরের তালে তালে আপনি পা মেলাতে পারবেন আপনার সঙ্গীদের সঙ্গে। কখনও ঝমঝমে কখনও ঝির ঝির বৃষ্টিতে।
এরই মাঝে যদি ক্লান্ত লাগে আছে ফুড পার্ক। সেখানে গিয়ে মন ভরে খতে পারেন দেশি বিদেশি নানা রকমের খাবার। আর যদি মনে করেন একটা রাত কাটাবেন এই জলপরীদের দেশে তবে তার ব্যবস্থাও আছে।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত “কটেজ” গুলিতে কাটাতেই পারেন একটি বিলাসবহুল রাত। তবে তার জন্য আগে থেকে “বুকিং” করে রাখতে হবে। তবে সেই সময় যদি নাও কুলোয় তবে কলকাতায় এলে কলকাতা ভ্রমণের পরিকল্পনায় অবশ্যই রাখবেন জলের রাজ্য অ্যাকয়াটিকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৩
ভিএস/এসএস/জিসিপি