ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হাজিদের পদচারণায় মুখরিত মক্কা-মদিনা

মোহাম্মদ আল-আমীন, সৌদি আরব করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৩
হাজিদের পদচারণায় মুখরিত মক্কা-মদিনা

মক্কা: হজ মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় অনুশাসন। সাম্যর্থবান মুসলমানের জন্য হজ করা ফরজ।

প্রত্যেক মুসলমানেরই স্বপ্ন থাকে জীবনে একবার আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা তাওয়াফ এবং আল্লাহর রাসুলের (স.) রওজা জিয়ারত করার। অনেকের স্বপ্ন আবার স্বপ্নই থেকে যায় অর্থের অভাবে।

১৪ অক্টোবর (চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল) এবার অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ। এরমধ্যে সুন্দর, সুশৃঙ্খলভাবে হজ সম্পন্ন করার জন্য সৌদি সরকার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

পবিত্র মক্কার সম্প্রসারণ কাজ চলমান থাকায় শেষ মুহূর্তে পূর্বে অনুমোদিত হাজিদের মধ্য থেকে বিদেশি ২০ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ ৫০ শতাংশ হাজির অনুমোদন বাতিল করেছে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়।
 
এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজিরা সৌদি আরবে আসতে শুরু করেছেন। ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে হাজি বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের প্রথম ফ্লাইট জেদ্দায় অবতরণ করে।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, কনসাল (হজ) আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ হজ মিশন মক্কার দলনেতা হাসান জাহাঙ্গীরের পাশাপাশি সৌদি সিভিল এভিয়েশনের মহাপরিচালক (ডিজি) আব্দুল হামিদ, সৌদি হজ উপ-মন্ত্রী হাতীম কাজীসহ দুদেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে হজযাত্রীদের স্বাগত জানান।

এবারই প্রথম সৌদি সরকারের প্রভাবশালী কোন ব্যক্তি বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশি প্রত্যেক হাজিকে উপঢৌকন প্রদান করার মাধ্যমে গ্রহণ করেন। এটা দুদেশের সুসম্পর্কের কারণেই সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। এ বছর সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি হাজি আনার অনুমতি পায় বাংলাদেশ। এটাও বাংলাদেশের জন্য বিরাট পাওয়া বলে মত প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।

মূলত এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজিরা জেদ্দা এবং মদিনায় আসতে শুরু করেছেন। হাজিদের আগমন অব্যাহত থাকবে ৬/৭ অক্টোবর পর্যন্ত। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ২০ অক্টোবর থেকে।

জেদ্দা থেকে মক্কায় এসে হাজিরা প্রথমেই কাঙ্ক্ষিত কাবা শরিফ দর্শনের পাশাপাশি সেরে নিচ্ছেন উমরাহ হজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি সময় পেলে তাওয়াফ করছেন বাইতুল্লাহ শরীফে।

কথা হয় সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে আসা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সাত্তার মোল্লা দুলালের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। আরও ভালো লাগতো যদি বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারতাম। সব কিছু চূড়ান্ত করার পরেও ফ্লাইটের কয়েক ঘণ্টা আগে স্টোক করার কারণে বাবাকে মেডিকেলে রেখে একাই আসতে হয়েছে। ’

৪৫ বছর বয়সী বগুড়ার শাহানাজ পারভীন সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে ৭ সেপ্টেম্বর মক্কায় এসেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো হজ করবো। আল্লাহ এবার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকর আদায় করছি এবং আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি যেন শেষ পর্যন্ত সুস্থ থেকে সুন্দরভাবে হজ সম্পন্ন করতে পারি। ’
 
প্রতিবছরের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী প্রযুক্তি নিয়ে হাজিদের সেবার জন্য প্রস্তুত মক্কা, জেদ্দা এবং মদিনায় অবস্থিত বাংলাদেশ হজ মিশনের আইটি ডেস্ক। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা এবার যুক্ত করেছে মোবাইল ফোনে হজ গাইড সফটওয়ার। এই সফটওয়ারের মাধ্যমে হাজিরা পথ চেনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

অক্টোবরের আগে সৌদি আরবে আসা হাজিরা হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেই মদিনা জিয়ারত করবেন বলে জানিয়েছে হজ সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। ১৫ থেকে ৪৫ দিন মেয়াদী বিভিন্ন প্যাকেজে হাজিরা এসেছেন। হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ৮ জিলহজ (১৩ অক্টোবর), মক্কা থেকে হজের নিয়তে মিনা’র উদ্দেশ্যে রওনা করার মাধ্যমে। এর আগে সাধারণত হাজিরা গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক স্থান সমূহ তাওয়াফ করেই সময় পার করেন।

হজের গুরুত্বপূর্ণ ৩ দিন যা করতে হয়:
৮ জিলহজ: ইহরাম বাঁধা অবস্থায় (এসময় ইহরাম বাঁধা ফরজ) মক্কা থেকে মিনা’র উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। এবং মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় শেষে পরদিন অর্থাৎ ৯ জিলহজ ফজরের পর আরাফাতের ময়দানের দিকে রওনা করবেন। স‍ূর্য হেলা অর্থাৎ দুপুর ১২টা থেকে স‍ূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করতে হবে। এটা হজের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ।
 
সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ আদায় না করে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা করবেন হাজিরা। সেখানে গিয়ে এক ইকামতে মাগরিব এবং ইশার নামাজ আদায় করে শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য ৭২টি কংকর সংগ্রহ করতে হবে।
 
১০জিলহজ: এদিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ, কোরবানি করা, মাথা মুণ্ডন (ন্যাড়া) করা এবং মক্কায় তাওয়াফে জিয়ারত করা।

উল্লেখ্য, ৯ জিলহজ সংগ্রহ করা ৭২টি কংকর থেকে ১০, ১১, ১২ জিলহজ যথাক্রমে প্রথম দিন ৭টি, দ্বিতীয়দিন ২১টি এবং তৃতীয়দিন ২১টি, মোট ৪৯টি কংকর প্রতীকি শয়তানকে লক্ষ করে নিক্ষেপ করতে হবে। (ভুল হওয়ার সম্ভাবনার কারণে ৭২টি কংকর সংগ্রহ করে রাখা সুন্নত)।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৩
এমএএ/এমজেএফ/এমজেডআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।