ঢাকা: বন্ধুদের সঙ্গে একটি ক্যাফেতে বসে আয়েশ করে কফি খাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎই নির্বিচার গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ।
কে, কোন দিকে ছুটছে সেটা বোঝা না গেলেও এটা স্পষ্ট ছিল যে, নাইরোবির জনাকীর্ণ ও অভিজাত শপিং মল ওয়েস্টগেটে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি নিথর মৃতদেহ পড়ে গেছে মেঝেতে। আর তাই প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটি সবার।
আতঙ্ক তার মধ্যেও কাজ করলো, কিন্তু তিনি সাবধানী এবং বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিলেন। লাইসেন্সকৃত একটি পিস্তল ছিল তার কাছে। সেই পিস্তল নিয়েই একে-৪৭ ধারী ১২/১৫ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনি। বাঁচিয়েছেন কমপক্ষে ১০০ জনের প্রাণ। এই বীর হলেন কেনিয়ার রাজকীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাজী।
কেনিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে এই দুঃসাহসী বিপদের কাণ্ডারি এখন স্বাভাবিকভাবেই হিরো খেতাব পেয়েছেন। বাহবা পাচ্ছেন হোয়াইট হাউস থেকে শুরু করে কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের পক্ষ থেকেও।
কেনিয়া ও পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত আবদুল হাজীর ওই দুঃসাহসী অভিযানের কিছু চিত্র ফুটে ওঠে। শপিং মলের ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ, নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী জানা যায়, সন্ত্রাসীরা হামলা করলে পিস্তলটি মেঝে, দরজা, সিঁড়ি বা দেওয়ালের দিকে তাক করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেসামরিক লোকজনকে শপিং মল থেকে নিরাপদে বের করেছেন তিনি। একজন, দু’জন নয়, ১০ কিংবা ২০ জনও নয়। একশ’ জনের বেশি সাধারণ নাগরিককে শপিং মল থেকে নিরাপদে সরিয়ে এনেছেন তিনি।
সন্ত্রাসীদের গুলি ও বিস্ফোরণের মুহুর্মুহু শব্দে যখন খোদ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও আত্মরক্ষায় ব্যস্ত, তখন হাতেগোনা ক’টি বুলেট লোড করা পিস্তলটি নিয়েই প্রাণঘাতী শপিং মলটিতে ১২ বার প্রবেশ করেন তিনি।
সন্ত্রাসীদের গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে মার্কেটের একটি টেবিলের তলায় আশ্রয় নেন মার্কিন নাগরিক ক্যাথেরিন ওয়ালটন। তিনি বলেন, গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দের পর আতঙ্কিত হয়ে আমি আমার ছোট মেয়ের কথা ভুলে যাই। সন্ত্রাসীদের গুলি বিস্ফোরণের শব্দে ভয় পেয়ে মার্কেটের মেঝেতে ঠাঁয় দাঁড়িয়েছিল মেয়েটি। আমরা বুঝতে পারছিলাম না ওকে সেখান থেকে কিভাবে আমাদের কাছে নিয়ে আসবো। তারপর মেয়েটিকে আমাদের কাছে নিরাপদে নিয়ে আসেন বীর হাজী।
মার্কেটের টেবিলের তলায় আটকা পড়ার পর ক্যাথেরিন কল্পনাও করতে পারেননি নিরাপদে বেরোতে পারবেন ওই মৃত্যুপুরী থেকে। তবে শেষ পর্যন্ত বীর আবদুল হাজী তাদের নিরাপদে বের করে এনেছেন।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর পক্ষ থেকে হিরো খেতাব পেলেও নমনীয় স্বরেই আবদুল হাজী বলেন, আমি মনে করি আমার অবস্থায় থাকলে অন্য যেকোনো কেনিয়ান নাগরিকই দেশের স্বার্থে এই কাজটি করতেন। এখানে কোনো দেশ, সম্প্রদায় বা বর্ণ বিবেচ্য নয়, বিবেচ্য ছিলো মানুষের প্রাণ বাঁচানো। আমিও মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৩
এইচএ/জেসিকে