ঢাকা: সিরিয়া ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হওয়াকে কূটনীতির জয় বলেই উল্লেখ করলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
শুক্রবার রাতে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস সংক্রান্ত প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের সম্মতিক্রমে নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়।
কেরি বলেন, সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র ত্যাগ করতে বাধ্য করিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দেখিয়ে দিয়েছে কূটনীতি কতোটা শক্তিশালী হতে পারে। এই প্রস্তাব পাসে প্রমাণিত হলো কূটনীতি শান্তিপূর্ণভাবে যুদ্ধের সবচেয়ে জঘন্য অস্ত্রকেও নির্মূল করতে পারে।
অনেক আগেই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে চিহ্নিত হলেও এর বিরুদ্ধে বিশ্ব এই প্রথমবারের মতো একসঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি।
কেরি বলেন, বিশ্বের অধিবাসী হিসেবে আমরা আবারও জোর দিয়ে বলছি, নিরাপত্তাহীনদের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আজ একসঙ্গে, এক স্বরে বিশ্ববাসী আসাদ সরকারকে রাসায়নিক অস্ত্র অপসারণে বাধ্য করছে। এই বাধ্যবাধকতা আরোপ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বিশ্বনেতাদের ঐক্যমত্যেরই প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বিশ্ববাসীকে এজন্য আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্রের সক্ষমতা ধ্বংস করা। সে লক্ষ্যে সামরিক অভিযানের বিবেচনা সামনে রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামাও। কিন্তু আজ রাতে (শুক্রবার) তার চেয়েও অনেক বেশি অর্জন করলাম আমরা। সবচেয়ে বড় কথা হলো, রাসায়নিক অস্ত্র বা যেকোনো নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে এই প্রথম শান্তিপূর্ণ পথই সফল হলো।
বক্তব্যে কেরি জানান, প্রস্তাব অনুযায়ী নভেম্বরেই সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র গুদামজাত শুরু হবে। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাসায়নিক অস্ত্রগুলো অপসারণ ও ধ্বংস করা হবে।
কেরি আরও বলেন, গত ২১ আগস্টের রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালানোর জন্য আসাদ সরকারকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ভয়ানক হামলাকারীদেরও জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হবে। এছাড়া, প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে সিরিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচিত হওয়ার পথও সুগম হবে বলে উল্লেখ করেন কেরি।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী এখন পর্যবেক্ষকদের সকল জায়গায় প্রবেশের অনুমতি দিতে বাধ্য থাকবে সিরিয়া। তবে বিশ্ববাসীর হাতে এখনও পরবর্তী পদক্ষেপ বিবেচনায় রয়েছে।
যদি প্রস্তাবের বাধ্যবাধকতা সিরিয়ার সরকার লঙ্ঘন করে তবে জাতিসংঘ সনদের সপ্তম ধারা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন কেরি।
কূটনীতিকে জয়ী করার জন্য আবারও পাঁচ সুপার পাওয়ার ও জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে কেরি বলেন, অথচ দু’সপ্তাহ আগেও রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যাপারে তথ্য দিতে চায়নি সিরিয়া সরকার।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও বিশ্বের ঐকমত্যের ভিত্তিতে পাস হওয়া প্রস্তাবটি আসাদ সরকারকে মানতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো লঙ্ঘন সহ্য করা হবে না। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের ব্যতিক্রম হলে সিরীয় জনগণের প্রাণ বাঁচাতে বিশ্ববাসীর যে দায়িত্ব তা পালন করা হবে।
কেরি তার বক্তব্যে বলেন, আমরা এক স্বরে বলেছি, এই ধরনের ভয়ানক হামলা কখনো সহ্য করা হবে না। যদি ফের এই নিয়ম ভাঙা হয়, তবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আবারও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে এক হবে। এবং সেটা কেবল সিরিয়াকেই নয় পুরো বিশ্বকেও নিরাপদ করার অভিযান হবে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস সংক্রান্ত প্রস্তাব শুক্রবার সর্বসম্মতিক্রমে নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে খসড়া প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করে।
সিরিয়ার আড়াই বছরব্যাপী অচলাবস্থায় এই প্রথম সমঝোতায় পৌঁছালো বিশ্বের পাঁচ শক্তিধর রাষ্ট্র। প্রস্তাবটি পাশের পর এটিকে ‘ঐতিহাসিক‘ সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
সিরীয় সরকার বিদ্রোহীদের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে, এমন অভিযোগ এনে দেশটির ওপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু পরে রাশিয়ার পরিকল্পনায় রাজি হয়ে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার প্রস্তাবে বলা হয়, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তার রাসায়নিক অস্ত্র হস্তান্তর করবে।
প্রস্তাবে নিজেও সম্মতি জানিয়েছেন বাশার আল-আসাদ। রাশিয়ার ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, রাসায়নিক অস্ত্র সংক্রান্ত চুক্তি যথাযথভাবে মেনে চলবে সিরিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৩
এইচএ/আরআই/এমএমকে/জেসিকে