কলকাতা: পৃথক গোর্খা ল্যান্ড’র দাবী থেকে সরে এলো গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজিএম)। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক পাহাড় সফরে সব থেকে বড় সাফল্য এলো শুক্রবার।
মুখ্যমন্ত্রী জিজিএম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠক থেকে বেড়িয়ে জিজিএম নেতা এবং প্রাক্তন জিটিএ সভাপতি বিমল গুরুং জানিয়ে দেন পাহাড়ে বন্ধের রাজনীতি থেকে তারা সরে আসছেন। বিমল গুরুং এই কথাও জানান যে পৃথক রাজ্য গঠন তাদের “সিলেবাসে নেই”।
পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গল মহলকে মাওবাদী মুক্ত করার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সাফল্য তার রাজ্য পরিচালনার সময় কালের অন্যতম বড় সাফল্য বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সাফল্যের ফলে প্রশাসক হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব আরও অনেকখানি বেড়ে গেল।
শুধু তাই নয় ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে এই সাফল্য রাজনীতির ময়দানে তৃনমূল কংগ্রেসকে বেশ কিছুটা শক্তি জোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে গত কয়েকদিন আগে পর্যন্ত অনড় জিজিএম‘র জি এম-এর এই পরিবর্তন রাজনৈতিক মহলের কাছে এক অবাক করা বিষয়।
গত কয়েকদিন আগেও জিজিএম তরফ থেকে পরিষ্কার জানান হয়েছিল- তারা কোনভাবেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন না। তারা একমাত্র ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত।
এই অবস্থা থেকে একে বারে বিপরীতে এসে শুক্রবার বৈঠক থেকে বেড়িয়ে জিজিএম তরফ থেকে জানান হয় পৃথক রাজ্য গঠন তাদের ইস্যু নয়- তাদের প্রাথমিক এবং প্রধান ইস্যু পাহাড়ের উন্নয়ন।
আমরা যদি একটু গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের ইতিহাসের দিকে তাকাই তবে দেখতে পাব সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু গোর্খা নেতা সুভাষ ঘিসিং এর সঙ্গে চুক্তি করে আলাদা রাজ্যের দাবির সাময়িক সমাধান করেছিলেন।
কিন্তু সুভাষ ঘিসিং এখন পাহাড়ে তার রাজনৈতিক কাজকর্ম চালাতে পারেন না। তিনি জিজিএম দ্বারা পাহাড় থেকে বিতারিত।
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তার সময় কালের শেষ দিকে পাহাড়ে আলাদা রাজ্যের দাবী নিয়ে নাজেহাল ছিলেন। তিনি এই সমস্যাকে কোনভাবেই সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে পারেন নি।
বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এই সমস্যাকে সমাধানের রূপ দিলেন। পাহাড়ের রাজনীতিতে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গোর্খা ল্যান্ডের এই রাজনৈতিক পরিবর্তনে পাহাড়ে পৃথক রাজ্যের দাবী সরগরম থাকলেও সেই দাবী জাতীয় রাজনীতির অঙ্গণে হালে পানি পায়নি।
যদিও এর মধ্যেই আলাদা রাজ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে তেলেঙ্গানা।
কংগ্রেস বা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কোন দলই সরাসরি এই ইস্যুকে সমর্থন করেনি। ভারত সরকারের তরফ থেকেও কোন সদুত্তর পায়নি জিজিএম।
অন্য দিকে রাজ্য সরকারের কড়া অবস্থান জিজিএম-এর নেতাদের গ্রেপ্তার এবং পুরানো মামলাকে নতুন করে বার করে আনার ফলে কিছুটা পিছু হটেছে জিজিএম।
শুধু তাই নয় বিদেশি সাহায্য নেওয়ার অভিযোগের আঙ্গুল উঠেছিল জিজিএম–এর বিরুদ্ধে।
এই সময় বহুদিন বাদে পাহাড়ে হাজির হন সুভাষ ঘিসিং। যদিও তিনি এটাকে তার ব্যক্তিগত সফর বলেছেন কিন্তু পাহাড়ে রাজনীতিতে এটা একটি লক্ষ্যণীয় ঘটনা।
অপর দিকে অন্যান্য উপজাতি দল গুলিও তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় ধীরে ধীরে হাল্কা হচ্ছিল জি জি এম –এর পায়ের তলার মাটি।
সেই সুযোগেই বেশ কিছু গোর্খা সমর্থক যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেস দলে। ফলে ভাঙ্গন ধরে জি জি এম-এর সংগঠনে।
জি জি এম –এর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় কংগ্রেস। সি পি এম-এর তরফে সাধুবাদ জানিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে আগামী দিনে যে পাহাড়ে আবার সমস্যা শুরু হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়।
পাহাড়ে এই শান্তির পর আবার পর্যটক যাবে পাহাড়ে। এটাই পাহাড়ের অর্থনীতি এবং সমাজ জীবনের ক্ষেত্রে সব থেকে সুখের খবর।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৩
ভিএস/ এসএস/বিএসকে