ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৯ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ওবামার সম্মতিতে মেরকেলের ফোনে নজরদারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৫১, অক্টোবর ২৭, ২০১৩
ওবামার সম্মতিতে মেরকেলের ফোনে নজরদারি

ঢাকা: জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেলের ফোনে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসএ) নজরদারির কথা ২০১০ সাল থেকেই জানতেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনএসএ’র শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এমন প্রতিবেদন করেছে জার্মানির প্রভাবশালী পত্রিকা ‘বিল্দ অ্যাম সোনতাগ’।



পত্রিকাটি জানায়, মেরকেলের ফোনে অভিযানের ব্যাপারে ২০১০ সালে ওবামাকে ব্রিফ করেছিলেন এনএসএ’র তৎকালীন প্রধান কেইথ আলেক্সান্ডার।

এনএসএ’র ওই কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, কেইথ জানানোর পর ওবামা এই গোয়েন্দা নজরদারি থামাতে বলেননি, বরং অব্যাহত রাখতে বলেন।

এর আগে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মেরকেলের ফোনে এনএসএ গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে আসছে বলে দাবি করে জার্মানির প্রভাবশালী সাময়িকী ডের স্পিগেল।

সংবাদ মাধ্যমটির দাবি, মেরকেল চ্যান্সেলর নির্বাচিত হওয়ার আগে ২০০২ সাল থেকেই তার ফোনে এনএসএ নজরদারি চালিয়ে আসছে বলে তাদের কাছে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তার ফোনে এনএসএ এ নজরদারি চালিয়ে আসছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে, মেরকেলের ফোনে নজরদারি কী ধরনের ছিল এ ব্যাপারটি তথ্য প্রমাণে পরিষ্কার নয় বলে স্বীকার করেছে ডের স্পিগেল।

অবশ্য, মেরকেলের কথোপকথন রেকর্ড অথবা সেটি সহজেই এনএসএ হস্তগত করে থাকতে পারে বলে জানায় সংবাদ মাধ্যমটি।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন নজরদারির কথা ফাঁস হয়ে ‍যাওয়ার পর জার্মানিজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করতে ওয়াশিংটনে শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে জার্মানি।

গত শুক্রবার জার্মানি ও এনএসএ’র গোয়েন্দাগিরির শিকার আরেকটি রাষ্ট্র ফ্রান্স জানিয়েছে, এ বছরের শেষ নাগাদই আর কোনো ধরনের গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হবে না মর্মে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায় তারা।

এর আগে, বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম দাবি করে, মেরকেলের ফোনে নজরদারি ছাড়াও জার্মানি ও ফ্রান্সের লাখো জনগণের ফোনোকলে আঁড়ি পাতে এনএসএ।

এনএসএ’র গোয়েন্দাগিরির প্রতিবাদে জার্মানি-ফ্রান্সছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক গোপন নজরদারির কথা ফাঁস হওয়ায় একটু বেকায়দায়ই পড়ে গেছে বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রটি। সবশেষে ফ্রান্স ও জার্মানির মতো বন্ধুরাষ্ট্রের ফোনে আড়িপাতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কে টান টান অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে আঙ্গেলা মেরকেল বলেন, একবার যদি অবিশ্বাসের বীজ বপন হয় তাহলে গোয়েন্দামূলক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৈঠকের প্রথমদিনের শেষের দিকে জার্মানি ও ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নজরদারি নিয়ে ‘একটি ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি করতে চান।

যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক ইইউর বৈঠকে ছায়া ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নিশ্চয়তা চেয়েছেন মেরকেল। আর এটি শুধু ক্ষমা চাওয়ামূলক বাক্যে নয়-এমনটিও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, এতেই ভবিষ্যত পরিষ্কার হবে..কিছু অবশ্যই পরিবর্তিত হবে এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে।

এনএসএ মেরকেলের ফোনে আড়ি পেতেছিল মর্মে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরই বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ফোনে আলাপ করেন মেরকেল।  

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নজরদারির কথা ফাঁস করে দেন দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন। এরপর থেকে নিজ দেশের লাখো ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নাগরিক, সরকারি কর্মকর্তা, কূটনীতিক ও সরকার-রাষ্ট্রপ্রধানদের ফোনো যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আড়ি পাতার খবর প্রকাশ পেতে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৩
এইচএ/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।