ঢাকা: ফিলিস্তিনের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের ‘মৃত্যুর’ পেছনে ইসরায়েলই জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা। তবে সব তথ্য-উপাত্ত হাতে পাওয়া ছাড়া এ বিষয়ে এখনই সরাসরি অভিযোগ তুলছেন না তারা।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেনসিক প্রতিবেদনে ‘আরাফাতকে পোলোনিয়াম নামক রাসায়নিক পদার্থ সেবন করিয়ে হত্যা করা হয়েছে’ জানানোর পর ইসরায়েলের প্রতি এ সন্দেহের তীর ছুঁড়ছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।
২০০৪ সালে প্যারিসের একটি সামরিক হাসপাতালে আরাফাত ‘স্ট্রোকে মারা গেছেন’ বলা হলেও সুইস ফরেনসিক প্রতিবেদনে বলা হয় ‘আরাফাতের পাঁজর, নিতম্বের হাঁড় ও সমাধিস্থলে পাওয়া অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পোলোনিয়াম নামক রাসায়নিক পদার্থটির মাত্রা ১৮ গুণ বেশি রেকর্ড করা হয়েছে।
এই পদার্থটি আরাফাতের শরীরে ৮৩ শতাংশ বেশি বিষক্রিয়া ছড়িয়েছে বলেও জানায় ব্রিটিশ, ফরাসি ও রাশিয়ান চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ওই ফরেনসিক প্রতিবেদন।
আরাফাতের ‘মৃত্যুর’ বিষয়টি তদন্ত করতে গঠিত ফিলিস্তিনি তদন্ত কমিটির প্রধান তাওফিক তেরাবি সাবেক প্রেসিডেন্টের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়ের সার্বিক তথ্য ও উপাত্ত হাতে পেতে তদন্ত চালিয়ে যাবেন কর্মকর্তারা।
শুক্রবার রামাল্লায় এক সংবাদ সম্মেলনে আরাফাতের মৃত্যুর তদন্ত কমিটির প্রধান তাওফিক বলেন, আমরা মনে করি আরাফাতের হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রধান ও একমাত্র সন্দেহভাজন হলো ইসরায়েল। এ বিষয়ে সার্বিক তথ্য ও উপাত্ত পাওয়ার জন্য এবং আমাদের সন্দেহের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তদন্ত চালিয়ে যাবো।
ফরেনসিক প্রতিবেদনের তথ্য নিজেদের সন্দেহের বিষয়টি আরও জোরদার করলেও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারাও নিশ্চিত নন আসলে, চারপাশে দেহরক্ষী ও ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে সাবেক প্রেসিডেন্টকে রাসায়নিক পদার্থ সেবন করানো হয়েছে।
তবে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির প্রধান তাওফিক বলেন, এ বিষয়ে অনেক ‘সাক্ষাৎকার’ ও ‘গোপন তথ্য’ থাকলেও এখনই এসব তথ্য প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নন তারা।
তবে, আরাফাতের মৃত্যুর সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনের প্রয়াত প্রেসিডেন্টের স্ত্রী সুহা আরাফাত মনে করেন, সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রমাণিত হয়েছে, আরাফাতকে হত্যা করা হয়েছে। অবশ্য কাউকে বিশেষভাবে অভিযুক্ত না করে তিনি বলেন, আরাফাতের বিশ্বব্যাপী শত্রু ছিল, যে কেউই তার হত্যাকাণ্ডের পেছনে কলকাঠি নাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে ২০০৪ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় প্রেসিডেন্সিয়াল ভবনে হঠাৎ অসুস্থতা বোধ করেন আরাফাত। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে প্যারিসের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই ‘স্ট্রোক’ করে মারা যান তিনি।
বেশ কিছু বছর ধরে এ বিষয়টি চাপা থাকলে সম্প্রতি বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রামাল্লার সমাধিস্থল থেকে আরাফাতের দেহাবশেষ উত্তোলন করে ফরেনসিক তদন্ত করেন সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের ফরেনসিক প্রতিবেদনে আরাফাতকে `বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে’ বলা হলে এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে হইচই পড়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৩
এইচএ/জেসিকে