ঢাকা: বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মরদেহ দক্ষিণ আফ্রিকান প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার বাসভবন ‘ইউনিয়ন বিল্ডিং’-এ পৌঁছেছে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য রাজধানী প্রিটোরিয়ায় অবস্থিত এই ভবনেই টানা তিন দিন রাখা হবে বিশ্ব শান্তি আন্দোলনের নেতা ম্যান্ডেলার মরদেহ।
এর আগে, প্রিটোরিয়ার ১ নং সামরিক হাসপাতাল থেকে ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ের দিকে রওয়ানা হয় ম্যান্ডেলার শবযাত্রা। প্রিয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে এ সময় পুরো রাস্তাজুড়ে ‘গার্ড অব অনার’ দিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন লাখো জনতা।
আগামী তিন দিন ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ে আমন্ত্রিত বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতারা ম্যান্ডেলাকে শেষ দেখা দেখতে পাবেন। শিডিউল অনুযায়ী তাকে শেষ দেখার সুযোগ পাবেন সাধারণ জনগণও।
আগামী রোববার শেষকৃত্যানুষ্ঠান শেষে নিজের পৈতৃক গ্রাম পূর্বাঞ্চলীয় ক্যাপে প্রদেশের কুনুতে সমাহিত করা হবে দক্ষিণ আফ্রিকার এই বিস্ময় মানবকে।
এর আগে, মঙ্গলবার জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে আয়োজিত জাতীয় স্মরণানুষ্ঠানে প্রিয় নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতারা।
৯৫ হাজার উপস্থিতি ধারণে সক্ষম স্টেডিয়ামটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় ম্যান্ডেলার স্মরণানুষ্ঠান শুরুর আগ থেকেই। তারপর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় স্মরণানুষ্ঠান।
ম্যান্ডেলাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী, কিউবান প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ট্রো, ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ প্রমুখ।
দক্ষিণ আফ্রিকান প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে বিশ্ব নেতারা বলেন, ম্যান্ডেলার পৃথিবীর সম্পদ ছিলেন। তিনি ইতিহাসের দৈত্য ছিলেন। তাকে হারিয়ে বিশ্ব একজন সত্যিকারের শিক্ষক ও বন্ধুকে হারালো। আর দক্ষিণ আফ্রিকা হারালো তাদের বাবাকে।
স্মরণানুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ঘোষণা দেন, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ভবন ‘ইউনিয়ন বিল্ডিং’য়ের নাম ‘ম্যান্ডেলা অ্যাম্পিথিয়েটার’-এ (ম্যান্ডেলা গ্যালারি) নামান্তরিত করা হবে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় প্রিটোরিয়ার ১ নং সামরিক হাসপাতাল থেকে ম্যান্ডেলার শবযাত্রা করে। শান্তি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতার নিথর মরদেহবাহী কালো রঙা কফিনটি দক্ষিণ আফ্রিকার পতাকা মোড়ানো ছিল।
প্রেসিডেন্ট ভবনে যাওয়ার পথে কগোসি মাম্পুরু সড়ক, মাদিবা সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অতিক্রম করে শবযাত্রা। শবযাত্রায় নেতৃত্ব দেয় সেনাবাহিনীর অশ্বারোহী দল ও সামরিক অ্যাম্বুলেন্স। এই শবযাত্রা আগামী ৩ দিন চলবে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
সমাহিত করার আগ পর্যন্ত গৃহীত কর্মসূচি
• স্মরণানুষ্ঠানের পর ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রিটোরিয়ায় প্রেসিডেন্টের বাসভবন ‘ইউনিয়ন বিল্ডিংয়ে’ রাখা হবে ম্যান্ডেলার মরদেহ। এই তিন দিন বিশ্ব সম্প্রদায়ের নেতা ও আগত ভিআইপি অতিথিরা ম্যান্ডেলার মরদেহ পরিদর্শন করতে পারবেন।
• ১১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এবং ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ ম্যান্ডেলার মরদেহ পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন সাধারণ জনগণ।
• ১৪ ডিসেম্বর শনিবার প্রিটোরিয়ার ওয়াটারক্লুপ বিমান বাহিনীর ঘাঁটি থেকে বিমানে চড়িয়ে পূর্বাঞ্চলীয় ক্যাপে প্রদেশের কুনু গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে ম্যান্ডেলার মরদেহ। সেখানে রাষ্ট্রীয় ও ঐতিহ্যবাহী শেষকৃত্য শেষে পারিবারিক সমাধিস্থলে চির সমাহিত করা হবে ম্যান্ডেলাকে।
• ম্যান্ডেলাকে সমাহিত করার পর ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় ‘পুনির্মিলন দিবসে’ প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ম্যান্ডেলার একটি মানবমূর্তি উদ্বোধন করা হবে।
• গৃহীত সবক’টি কর্মসূচি পালনের সময় সেগুলো পরিদর্শনের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকাজুড়ে ৯০টি বড় বড় প্রজেক্টর পর্দা স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৩