ঢাকা: অপ্রাপ্তির বড় আফসোস থেকে গেলেও প্রাপ্তির খাতায় কিছু সাফল্য যোগ করে বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর। মহাকালের গহ্বরে ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে ২০১৩ সাল।
আনন্দ-বিরহের বছরটি সময় কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিলো পৃথিবীর ধ্রুপদী নক্ষত্র নেলসন ম্যান্ডেলা, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা হুগো চাভেজ, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লৌহমানবী খ্যাত মার্গারেট থ্যাচার এবং উপমহাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে’র মতো মহান মানুষগুলোকে।
দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরের গৃহযুদ্ধ চলাকালে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর শাস্তি নেওয়ার হুমকির পর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসে আংশিক সমঝোতা চুক্তি ছিল এ বছরের উল্লেখযোগ্য শীর্ষ ঘটনা।
এছাড়া, ২০১৩ সালের প্রথম দিন আইভরি কোস্টে নববর্ষ উদযাপনকালে পদপিষ্ট হয়ে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি, পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের অব্যাহতি ও পোপ ফ্রান্সিসের দায়িত্ব গ্রহণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ভারতীয় লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকারের অশ্রুসিক্ত ও আবেগী বিদায়, মিশরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির ক্ষমতাচ্যুতি, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সেবাখাতের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ (শাটডাউন), সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১১ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি, ফিলিপাইনে ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানের আঘাতে প্রায় ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি, দীর্ঘ ৪৩ বছরের অপেক্ষার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধের রায় কার্যকর, কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির ওয়েস্টগেট শপিং মলে সন্ত্রাসী হামলা, পাকিস্তানের স্বাধীনতার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতার মেয়াদ শেষে নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি গণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতাগ্রহণ, ইউক্রেন ও থাইল্যান্ডে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, রাশিয়ায় উল্কাপিণ্ডের আঘাতে সহস্রাধিক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা, উত্তর কোরিয়ার বিতর্কিত তৃতীয় পরমাণু পরীক্ষা, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ম্যারাথনে বোমা হামলা, চাঁদে চীনের প্রথমবারের মতো চন্দ্রযান প্রেরণ, জেনেভায় ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর এবং বছরের শেষ দিকে ভারতের দিল্লিসহ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনে নতুন রাজনৈতিক দল আম আদমি পার্টির (এএপি) নিরঙ্কুশ জয়লাভের ঘটনা ছিলো এ বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
আলোচিত-সমালোচিত ২০১৩ সালের শীর্ষ ১৩টি ঘটনা বাংলানিউজের পাঠকদের বছরের শেষ দিকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে আরেকবার।
নেলসন ম্যান্ডেলাকে হারালো বিশ্ব
শৈশব থেকেই মানবতার জন্য আন্দোলন করতে থাকেন ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই জন্ম নেওয়া নেলসন ম্যান্ডেলা। পরিণত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন করায় কথিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মামলায় দীর্ঘ ২৭ বছর কারাগারে কাটাতে হয় ম্যান্ডেলাকে।
কারামুক্তির পর ১৯৯৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির পিতা প্রিয় মাদিবা। ১৯৯৯ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অব্যাহতির পর কিছুটা অপ্রকাশ্যে থাকা ম্যান্ডেলা ২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপে শেষ প্রকাশ্য ভাষণ দিয়েছিলেন। প্রায় দু’বছর ধরে বিভিন্ন সংক্রমণে ভোগা ম্যান্ডেলা বছরের গত ৫ ডিসেম্বর জোহানেসবার্গের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
৯৫ বছর বয়সী ম্যান্ডেলার জীবনাবসানে শোকে বিহ্বল হয়ে যায় পুরো বিশ্ব। ১০ ডিসেম্বর তার স্মরণানুষ্ঠানে যোগ দেন বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান। ১৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় ও সাম্প্রদায়িক শেষকৃত্য শেষে তাকে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ক্যাপের শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত কুনু গ্রামে সমাহিত করা হয়।
সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি
বিশ্বের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সাভারের রানা প্লাজা ধসের মর্মান্তিক ঘটনা ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে নিলো। ২৪ এপ্রিলের শান্ত সকালে ৮ তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজার ৫টি কারখানায় শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো কাজ করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ধস। পুরো ভবনটি ধসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অকাল মৃত্যু ঘটে সহস্রাধিক মানুষের। অর্ধমাসেরও বেশি সময় ধরে উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর বিশ্ব অবাক হয়ে দেখে কীভাবে কারখানায় জীবন্ত প্রবেশ করা এগারো শতাধিক মানুষ লাশ হয়ে বের হয়, পঙ্গু ও আহত হয় কয়েক হাজার মানুষ!
এই ঘটনায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের কারাখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি নিন্দার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর কর্মক্ষেত্রের এমন দুর্দশা খোদ পোপ ফ্রান্সিসকেও মর্মাহত করে। তিনি এ ব্যবস্থাকে ‘শ্রম দাস’ প্রথা বলেও আখ্যা দেন। অনেক আলোচনা-সমালোচনা সত্ত্বেও কিছু বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সাভারের রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিতে এবং বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে কর্মক্ষেত্রের মান বৃদ্ধির লক্ষে তহবিল গঠনে কার্যক্রম শুরু করে।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের রায় কার্যকর
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। হত্যা, ধর্ষণ মানবতাবিরোধী ৬টি অভিযোগে কাদের মোল্লার জড়িত থাকার অভিযোগ ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নৃশংস যুদ্ধাপরাধ সংগঠনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত কাদের মোল্লাকে কেবল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে জড়ো হতে থাকেন সাধারণ জনগণ। ৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শাহবাগে জড়ো হওয়া জনগণের এই সমাগমের নাম দেওয়া হয় ‘গণজাগরণ মঞ্চ’।
গণজাগরণ মঞ্চের অব্যাহত প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলের চাপে সরকার যুদ্ধাপরাধ আইন সংশোধন করতে বাধ্য হয়। কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগে যে গণঅভ্যুত্থান হয় এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোও মুহূর্তে মুহূর্তে সংবাদ পরিবেশন করে। শাহবাগ আন্দোলনের খবর নিজেদের তথ্যভাণ্ডারে যুক্ত করে উইকিপিডিয়াও। শাহবাগ আন্দোলনের দাবানল জ্বলে ওঠে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাঙালি কমিউনিটিগুলোতেও।
গণজাগরণ মঞ্চের চাপে সরকারের আপিলের পর শেষ পর্যন্ত একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সেই সুবাদে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর কলঙ্কমুক্তির সুযোগ পায় বাংলাদেশ। অনেক নাটকীয়তার পর গত ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।
তার রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশের কলঙ্কমুক্তির শুভ সূচনা হয়। আর এই শুভ সূচনাকে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বদৌলতে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা অর্জন বলে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।
এনএসএ’র গোয়েন্দা নজরদারির তথ্য ফাঁস
বিশ্বমোড়ল পৃথিবীর ওপর নজরদারি করছে। ফোনোকল ও ইন্টারনেট কার্যক্রমে এ নজরদারি চালাচ্ছে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসএ)। ১০ জুনের আগে এ ব্যাপারে কেউ কিছুই জানতো না।
১০ জুন যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম গার্ডিয়ান সর্বপ্রথম এ গোয়েন্দা নজরদারির কথা জানায়। আর গার্ডিয়ানকে এ তথ্য জানান মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক এডওয়ার্ড স্নোডেন।
তার এ তথ্য ফাঁসের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে এনএসএ ও মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। আর স্নোডেন মাকির্নবিরোধীদের কাছে হয়ে উঠেন ‘হিরো’ হিসেবে।
গার্ডিয়ানের তথ্য ফাঁসের পর ‘গোপন’ সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নেতাদের ওপর এনএসএ’র গোয়েন্দা নজরদারির তথ্য ফাঁস করতে থাকে অন্য সংবাদ মাধ্যমগুলোও। সারা বছরজুড়ে একেরপর এক গোয়েন্দা নজরদারির তথ্য ফাঁসের ঘটনায় এখনও নিজ দেশের নাগরিক, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দা হজম করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে।
লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচারের চির বিদায়
লৌহমানবী খ্যাত যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের জীবনাবসান ছিলো এ বছরের অন্যতম শীর্ষ বিয়োগাত্মক ঘটনা। ১৯২৫ সালের ১৩ অক্টোবর গ্রানথামে জন্মগ্রহণ করা থ্যাচার এ বছরের ৮ এপ্রিল মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত কারণে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কনজারভেটিভ পার্টির দায়িত্ব পালন করা থ্যাচার ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষমতায় থাকাকালে কঠোর আইনে রাষ্ট্র পরিচালনা, বিভিন্ন বাঁধা অগ্রাহ্য করে তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক সংস্কার আনয়ন এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতাকে খাটো করতে ব্যঙ্গ করার সাহস দেখানোর জন্য তাকে লৌহমানবী খেতাব দেওয়া হয়। তার প্রভাব দেশ ও কালের সীমানা পেরিয়ে সারাজীবন অক্ষত থাকবে, শত্রু-মিত্র সবাই একবাক্যে একথা স্বীকার করেন। থ্যাচারের বিদায়ের পর যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দেশটির মিত্র দেশগুলোও শোকাহত হয়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন থ্যাচারকে ‘যুক্তরাজ্যের সম্পদ’ বলে উল্লেখ করেন।
সেনাঅভ্যুত্থানে মুরসির পতন
২০১১ সালের শেষ দিকে আরব বসন্তের ঢেউ লাগে মিশরে। টানা প্রায় দু’মাস গণবিক্ষোভের পর ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পতন ঘটে দেশটির স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন নির্বাচনের মাধ্যমে জয়লাভ করে ২০১৩ সালের ৩০ জুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন মুসলিম ব্রাদারহুডসমর্থিত ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির নেতা মোহাম্মদ মুরসি।
কিন্তু ক্ষমতাগ্রহণের পরই কট্টর ইসলামপন্থি আইন প্রণয়ন ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার অভিযোগে বিক্ষোভে নামে দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলো। অচলাবস্থা নিরসনে প্রেসিডেন্ট একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেও সঙ্কট সমাধানের আলটিমেটাম দিয়ে সময় শেষ হওয়ার আগেই মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রেসিডেন্ট।
২০১৩ সালের ৩ জুলাই রাতে তার ক্ষমতাচ্যুতির মধ্য দিয়ে মিশরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের পতন ঘটে মাত্র এক বছরেরই মাথায়। মুরসির পতন ঘটিয়ে তার দল ব্রাদারহুডের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার। মুরসির ক্ষমতাচ্যুতিকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্রাদারহুড সমর্থকদের সংঘাতে দেশটিতে এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায়।
সেনাঅভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ জানালেও সেনাবাহিনীই এখন পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এছাড়া, মুরসিসহ তার দল ব্রাদারহুডের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ বেশ কিছু মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং সেগুলোর বিচারকার্যও চলছে।
সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসে চুক্তি
২০১১ সালের শেষ দিকে আরব বসন্তের ঢেউ লেগে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের স্বৈরশাসকদের যে পতন শুরু হয় সে আন্দোলনের ঢেউ লাগে সিরিয়াতেও। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ক্ষমতা ধরে রাখতে এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানে রয়েছে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্টের পতনে যে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয় তাতে লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানায় জাতিসংঘ। এর মধ্যে গত ২১ আগস্ট রাজধানী দামেস্কের উপকূলে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ১৪ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয় বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাহিনী সরাসরি বিদ্রোহীদের দায়ী করলেও এজন্য আসাদের অনুগত সেনাবাহিনীই দায়ী বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মোক্ষম জবাব দেওয়ার জন্য সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো।
সিরিয়া উপকূল ঘেঁষে ভূ-মধ্য সাগরে জড়ো হতে থাকে ফরাসি, ব্রিটিশ ও মার্কিন রণতরী। সিরিয়াকে রক্ষায় রণতরী পাঠায় রাশিয়াও। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন মিত্রদের পিছুটান ও রাশিয়ার হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে পিছু হটে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পিছু হটলেও সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের দাবি জানায় পশ্চিমারা। এ বিষয়ে আসাদের ইতিবাচক বার্তা পেয়ে রাশিয়া প্রস্তাব ওঠালে তিন দিনব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর ১৪ জুলাই সেটিতে সমর্থন জানায় যুক্তরাষ্ট্র। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবটি জাতিসংঘে উত্থাপিত হলে সিরিয়ার সরকারের কাছে থাকা সকল রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের প্রস্তাবনা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সিরিয়ার কাছে থাকা সব রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস বা অপসারণ করা হবে। এরইমধ্যে এ কার্যক্রম শুরুও হয়েছে। যদিও সিরিয়ার বিদ্রোহীরা প্রধান এই চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে, তথাপি এই চুক্তি এ বছরের শীর্ষ অর্জন হিসেবে মনে করে থাকেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বজয়ী বিপ্লবী চাভেজের মহাপ্রয়াণ
সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন যখন পুরো বিশ্বকে চোখ রাঙিয়েছে তখন কিউবা, ইরান, লিবিয়া কিংবা ভেনিজুয়েলার মতো আগ্রাসনবিরোধী দেশগুলো সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের বরাবরই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। স্বদেশের অর্থনীতিকে গড়ে তুলেছে স্বয়ং-সম্পূর্ণরূপে। আরেকটি সার্বভৌম দেশ থেকে তেল, গ্যাস লুটপাটের ঘটনা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর কাছে পান্তা ভাতের মতো হলেও এসব বিপ্লবী রাষ্ট্রের নাম নিতেই হাঁটু কাঁপে সাম্রাজ্যবাদীদের। আর নিজ দেশকে এমন প্রতিবাদী ও বিপ্লবী অবস্থানে যারা নিয়ে গেছেন তাঁরা চিরভাস্মর হয়ে থাকেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, যুদ্ধ ও লুটপাটতন্ত্র-বিরোধী বিপ্লবীদের হৃদয়ে। ভেনিজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ সেই চিরভাস্মর বিপ্লবীদের একজন।
ল্যাটিন আমেরিকার জুনিয়র ফিদেল কাস্ত্রো বলা হতো তাঁকে। বিশ্বজয়ী আরেক বিপ্লবী চে’ গুয়েভারার প্রতিকৃতি ভাসতো চাভেজের অগ্নিমূর্তিমান চেহারায়। সেই বিপ্লবী চাভেজ দীর্ঘ দু’বছরের চিকিৎসা প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে এ বছরের ৫ মার্চ মাত্র ৫৮ বছর বয়সে ইহধাম ত্যাগ করেন। তার আগে ফেব্রুয়ারিতে নিজ দেশের সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এখানে অবস্থার অবনতি হলে কিউবায় নিয়ে যাওয়া হয় চাভেজকে। কিন্তু পরলোকের ডাক পাওয়া চাভেজ নিজ দেশে ফেরার জন্য আকুলতা প্রকাশ করলে তাকে কারাকাসে নিয়ে আসা হয়। কারাকাসে নিজে পরিবারের আলিঙ্গনে থেকেই চির ঘুমে চোখ বোজেন চাভেজ। তার বিদায়ে যেন নিপীড়িত বিশ্বের ক্রন্দন আরও বেড়ে যায়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত ও প্রচারিত আলোকচিত্র ও ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, প্রিয় নেতার মৃত্যুতে শিশুদের মতো হাউমাউ করে কেঁদেছেন ভেনিজুয়েলার জনগণ। ১৯৫৪ সালের ২৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করা চাভেজ সাম্রাজ্যবাদের চোখ রাঙানিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের দেশকে গড়েছেন জনগণের ইচ্ছেমতো অর্থনীতিসমৃদ্ধ ও জনবান্ধব। সামরিক বাহিনীর শাসক হলেও চাভেজের ক্ষমতাকালে গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি অধিকার ও সুবিধাভোগ করেছে ভেনিজুয়েলানরা। নিপীড়িত বিশ্বের অকৃত্রিম বন্ধু চাভেজের জীবনাবসানকে এ বছরের অন্যতম শীর্ষ বিয়োগাত্মক ঘটনা বলে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।
পদত্যাগ করে ইতিহাসে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট
বার্ধক্যজনিত কারণ দেখিয়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চের সর্বোচ্চ ধর্মীয় প্রধানের পদ থেকে এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি অব্যাহতি নেন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট। ভ্যাটিকানের রাজপ্রাসাদের ৬০০ বছরের ইতিহাস ভেঙে এই অব্যাহতি নেন তিনি।
বেনেডিক্টের আগে জীবিত থাকতেও পোপের ক্যাথলিক চার্চ ছাড়ার ঘটনা ঘটে ১৪১৫ সালে। স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি নিলেও বেনেডিক্টের এই পদত্যাগে বিশ্বজুড়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যম উল্লেখ করে, ভ্যাটিকানের রাজপ্রাসাদের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় স্বেচ্ছা অব্যাহতি নেন ২০০৫ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পলের স্থলাভিষিক্ত হওয়া বেনেডিক্ট। পোপ বেনেডিক্টের হঠাৎ অব্যাহতি যেমন আলোচিত ছিলো, তেমনি বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হন নবনির্বাচিত পোপ ফ্রান্সিসও। কারণ পোপ ফ্রান্সিস রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রথম অ-ইউরোপীয় পোপ।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন যুগান্তকারী ও সাহসী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি। বিশেষ করে চার্চে নারী নেতৃত্ব, সমকামিতার ব্যাপারে অপেক্ষাকৃত উদার অবস্থান এবং দারিদ্র্য ও সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে তিনি আলোচিত হন। এছাড়া ভ্যাটিকান সিটির আর্থিক বিষয়গুলোর স্বচ্ছতার ওপর জোর দেওয়ার জন্যও ব্যাপক প্রশংসিত হন তিনি। প্রভাবশালী টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে চলতি বছরের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বও নির্বাচিত হয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। পূর্বসুরী পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দিলে গত ২০ মার্চ রোমান ক্যাথলিকদের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতার পদে অভিষিক্ত হন পোপ ফ্রান্সিস। তার আসল নাম কার্দিনাল হোর্হে মারিও বেরগোগলিও। ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেসে জন্ম নেন তিনি।
পাকিস্তানে গণতন্ত্রের বিজয়
চলতি বছর পাকিস্তানেরতো বটেই, গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য যোগ হয়। অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানে সামরিক শাসনে পিষ্ট পাকিস্তানে গত ১১ মে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এই নির্বাচনে জয়লাভ করে ১৪তম সংসদ গঠন করে নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লিগ।
নওয়াজের নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমেই মূলত পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের পূর্ণ মেয়াদ শেষে গণতান্ত্রিক পন্থায় আরেকটি গণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতাগ্রহণের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। মুসলিম লিগ সরকারের আগে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সরকার।
পিপিপির সরকারের আগে দেশটিতে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার দায়িত্ব পালন করলে হয়তো মেয়াদ শেষ হওয়ার অনেক আগেই বা সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই সেনাঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, অথবা সামরিক শাসক ক্ষমতায় থেকে পাতানো নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতা দখলে রেখেছে। ১১ মে’র জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে পাকিস্তানে যেমন ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে, তেমনি দেশটির গণতন্ত্রের ইতিহাসে যুক্ত হয়েছে নতুন ধারা।
ফিলিপাইনে হাইয়ান, ঝড়ে যায় ১০ হাজার প্রাণ
২০১০ সালে ইন্দোনেশিয়ায় এবং ২০১১ সালে ভূমিকম্প পরবর্তী সুনামি আঘাত হানার পর চলতি দশকের মধ্যে ফিলিপাইনে টাইফুন হাইয়ানের আঘাতকে সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ মনে করা হয়। ৫ নম্বর ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার সময় এর ঘণ্টায় গতিবেগ ছিলো ২৭৫ কিলোমিটার। ৮ নভেম্বর ভোরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ ফিলিপাইনে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানের তাণ্ডবে অন্তত ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয় বলে জানায় রেডক্রস। যদিও সরকারিভাবে প্রাণহানির সংখ্যা ৬ হাজারোধিক বলা হয়।
দেশটির লিতি প্রদেশের তাকলোবান শহরসহ উপকূলীয় অঞ্চল হাইয়ানের তাণ্ডবে মহাপ্রলয় পরবর্তী ধ্বংস উপত্যকায় পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার পর বিশ্ব সম্প্রদায়কে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের নেতারা। ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এখনও সংগ্রাম করছে মৃত্যু উপত্যকায় বেঁচে যাওয়া ফিলিপিনোরা।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডা...’র গায়ক মান্না দে’র বিদায়
চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর ভোরে বিশ্ব সংগীতাঙ্গন থেকে ঝরে পড়ে আরেকটি নক্ষত্র। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় দীর্ঘদিন ভোগার পর ৯৪ বছর বয়সে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে মারা যান উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী মান্না দে। ডায়ালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু মাস ধরে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।
১৯১৯ সালের ১ মে কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে বাবা পূর্ণ চন্দ্র এবং মা মহামায়া দে’র ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন মান্না দে। আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র দে হলেও দীর্ঘ ষাট বছরের সংগীতময় জীবনে ‘মান্না দে’ ডাকনামেই খ্যাতি লাভ করেন তিনি।
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ শীর্ষক বিখ্যাত গানের এই গায়ক বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, আসামিসহ বিভিন্ন ভাষায় অজস্র গান গেয়ে বিশ্ব সংগীতাঙ্গনে নিজের স্থান করে নিয়েছেন। বৈচিত্র্যের বিচারে তাঁকেই হিন্দি গানের ভুবনে সবর্কালের সেরা গায়ক হিসেবে স্বীকার করে থাকেন অনেক সংগীতবোদ্ধা।
সংগীতাঙ্গনে তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী, ২০০৫ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে সম্মাননায় ভূষিত করে ভারত সরকার। এছাড়া, ২০০৪ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০০৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ডি.লিট সম্মাননা লাভ করেন।
মান্না দে’র মহাপ্রয়াণ এ বছরের অন্যতম শীর্ষ বিয়োগাত্মক ঘটনা বলে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।
ভারতের রাজনীতিতে নতুন শক্তি এএপি
ভারতের রাষ্ট্রপরিচালনায় মূলত ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টিই (বিজেপি) বদল হয়ে থাকে। কিছু রাজ্যে চীনা কিংবা রাশিয়ান বামপন্থিরা সরকার গঠন করলেও অধিকাংশ রাজ্যেই কংগ্রেস অথবা বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়লাভ করে রাজ্য সরকার পরিচালনা করে চলছেন, তবে কেন্দ্রীয় সরকার কংগ্রেস বা বিজেপির মধ্যেই থেকে গেছে।
কিন্তু এক বছর বয়সী আম আদমি পার্টি (এএপি) প্রথাগত ক্ষমতার পালা বদলে সূচনা করেছে পরিবর্তনের। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন গড়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠা দলটি প্রথমবারের মতো নির্বাচন অংশগ্রহণ করে বাজিমাত করেছে।
গত ৫ ডিসেম্বর দিল্লি বিধান সভা নির্বাচনে ৭০ আসনের মধ্যে ২৮টি আসনে জয় পেয়েছে। ক্ষমতাসীন কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৮টি। আর বিজেপি ৩২টি আসন পেয়ে প্রথম স্থান দখল করে। সরকার গঠনের প্রয়োজন ৩৬ আসন।
বিরোধী দল হিসেবে পার্লামেন্টে ভূমিকা রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেও সমর্থক আর সুশীল সমাজের চাপাচাপিতে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে সাবেক সরকারি আমলা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের এএপি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে এএপির উত্থান সত্যিই বিস্ময়কর। তাও একেবারে কংগ্রেস-বিজেপির লড়াইয়ের ময়দান দিল্লিতে। দিল্লি জয়ের পর এখন আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও ভাবছে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন এএপি। কেজরিওয়ালের ভাষ্য অনুযায়ী ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ কংগ্রেস-বিজেপির বাইরে জনবান্ধব কোনো দলকে খুঁজে আম-জনতা। এএপির এই উত্থান সে হিসেবে বেশ আলোড়নই তুলেছে বিশ্বের পরাশক্তি হয়ে ওঠা দেশটিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর