বার্লিন: উইকিপিডিয়া এমন এক বিশ্বকোষ যেখানে যে কেউ লেখালেখি করে সহায়তা করতে পারে--ছাত্র হোক বা অধ্যাপক। এই বিশ্বকোষটি প্রতিমুহূর্তেই হালনাগাদ হচ্ছে।
২০০১-এর ১৫ জানুয়ারি জন্ম হয় উইকিপিডিয়ার। অর্থাৎ শনিবার এ বিশ্বকোষটি এক দশক পার করছে।
দশ বছর আগে, যেসময় কোনো অনলাইন কোম্পানিগুলো আসত আর যেত কেউই ভাবতে পারেনি একটি বিশ্বস্ত বিশ্বকোষ অনলাইনে আসতে পারে। সে সময় একটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়া হওয়ার ঘটনাই ঘটত অহরহ।
এখন পর্যন্ত এটি কেবল সাফল্যের উদাহরণই নয়, লাখ লাখ ইউজারের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে।
উইকিপিডিয়ার দুই প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস ও ল্যারি স্যাঙ্গার। বোমিস ডট কম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল চালাতেন জিমি ওয়েলস। এই পোর্টালে পুরুষের বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। এখানে খেলাধুলা, আড্ডা ও নারীর ন্যুড ছবি থাকত। এখান থেকেই রাজস্ব আয় হতো। পরবর্তীতে এই অর্থ তিনি উইকিপিডিয়া তৈরির মূলধন হিসেবে কাজে লাগান।
একসময় ল্যারি স্যাঙ্গারকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন এতে কাজ করার। জিমি ও ল্যারির পরিচয় হয় অনলাইনে দার্শনিক আলাপচারিতায়। ল্যারি একজন পাঁড় দার্শনিক, জন্ম ১৯৬৮ সালে। ন্যুপেডিয়া সম্পাদনা করেছেন। পরে এ থেকেই উইকিপিডিয়ার জন্ম।
ল্যারিও বিশ্বাস করতে পারেননি কয়েক হাজার ইউজারের পক্ষে একটি বিশ্বকোষ লেখা সম্ভব হবে। উইকিপিডিয়ার পূর্বসূরী ন্যুপেডিয়ায় তিনি কিছু কঠোর নিয়ম চালু করলেন। নীতিগতভাবে সবাই সহায়তা (কনট্রিবিউট) করতে পারবে। তবে স্ব স্ব ক্ষেত্রে তাদের বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগবে। সম্পাদকদেরও উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি থাকা লাগবে। ল্যারি সে সময় এগুলোর ওপরই জোর দেন।
প্রতিটি লেখাকে সাতবার পরীক্ষা করা হতো তখন, যা বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো জার্নালেও করা হতো না। আর কারণে দেরী হতো। তাই প্রথম বছরে তাই লেখার সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ২০টি। এ প্রক্রিয়ায় ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়েন ল্যারি। পরে তিনি ভাবলেন, ‘ব্যবহারকারীরা যাতে এতে সহজে অংশ নিতে পারে সেজন্য প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সহজ করা উচিত। ’
এ সমস্যা থেকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে উইকি সফটওয়্যার। এবার ব্যবহারকারীদের জন্য সহজ উপায় বের করা হলো। তারা এমনকি ওয়েবপেজ সম্পাদনাও করতে পারবে। তবে ন্যুপিডিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ইউজারদের জন্য জিমি একটি আলাদা ডোমেইন তৈরি করেন। আর এ থেকেই উইকিপিডিয়ার জন্ম।
পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম এর প্রকাশ ঘটলেও মাত্র এক মাসের মধ্যেই এতে ৬০০টি লেখা জমা হয়, যা ছিল ন্যুপিডিয়ার অনেক বেশি। আর এক বছরের মধ্যে লেখার সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ হাজারে যা এমনকি এর প্রতিষ্ঠাতাদেরও বিস্মিত করে।
দেখা গেছে, যেকোনো বিষয়ে জানার জন্য ‘গুগল সার্চ’ ইঞ্জিনে সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয়েছে উইকিপিডিয়া। এভাবে ক্রমেই তা গুগল সার্চ ইঞ্জিনে শীর্ষ স্থানটি দখল করে নেয় বিশ্বকোষটি।
সবসময় এর লেখা হয়তো বিশ্বাসযোগ্য হয় না বা লেখার গুণগত মানও হয়তো সব সময় তেমন ভাল না। কিন্তু এটা মানুষের সেই আস্থার জায়গাটি দখল করে নিয়েছে, যেখানে ব্যবহারকারী জানে যে একটি মাত্র ‘কিকেই’ তা আমাদের বিশ্বের সব সংবাদ বা বিষয় চোখের সামনে এনে হাজির হবে নিমিষেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১১