তিউনিশ: বাহরাইনের ব্লগার মোহাম্মদ আল-মাসকাতি টুইটারে লেখেন, ‘আমার জীবদ্দশায় সত্যিই এমনটি ঘটছে! আরবের একটি দেশ জেগে উঠেছে এবং এরইমধ্যে অনেক কিছুই বলে ফেলেছে। ’
এখানে তিনি মূলত প্রেসিডেন্ট বিন আলির দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিই উল্লেখ করেছেন।
মাসব্যাপী চলা এ বিক্ষোভ একসময়ের যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট এ শাসকের ২৩ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে।
মোহাম্মদ বাউয়াজিজি নামের (২৬) এক তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটে শেষ করে ফল ও সবজি বিক্রির কাজ পায়। এছাড়া তার দেশে আর কোনো উপায় ছিল না। ঠেলাগাড়িতে করে তিনি সেই কাজে নেমে গেলেন। গত ডিসেম্বরে পুলিশ তার সেই ঠেলাগাড়িই কেড়ে নেয় এবং তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এর প্রতিবাদে ওই ওই তরুণ নিজের গায়ে ধরিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সেই ঘটনাটিই স্ফূলিঙ্গের মতো কাজ করেছে। মুখেমুখে অনলাইনে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে।
তিউনিশিয়ার জনগণের দুঃখ-দুর্দশা খুবই দিবালোকের মতো পরিষ্কার--দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং রাষ্ট্রের দমনপীড়ন সেখানে লেগেই থাকে। সব ভিন্নমতাবলম্বীকেই নাশকতা সৃষ্টিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিন আলি সৌদি আরব পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই লেবাননের এক টিভিতে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি কবিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেন এভাবে, ‘এবং জনগণ জীবন চেয়েছিল, আর এখন শৃঙ্খল ভেঙে গেছে। ’
তিউনিশিয়ার এ জেগে উঠা আরব বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত এবং তা এ অঞ্চলের অন্যান্য স্বৈরশাসকের জন্য হুমকি বলেও অনেকে ধারণা করছেন।
শুক্রবার রাজধানী তিউনিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে প্রতিবাদরত চিকিৎসক জাইদ মিহিরশি (৩৩) বলেন, ‘এখানে যা ঘটছে তা পুরো আরব বিশ্বের ওপর প্রভাব রাখবে। ’
আরও কিছু বিষয় দেশটিকে আলাদা করেছে--এটি আরব বিশ্বের একদম প্রান্তে অবস্থিত, তুলনামূলক সম্পদশালী এবং এর আছে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। প্রতিবাদকারীদের অধিকাংশই ছিলেন চিকিৎসক, আইনজীবী, তরুণ পেশাদার এবং অন্যান্য যারা আগে কখনো প্রতিবাদ করেননি বলে জানান। আর এবারই প্রথম মাসব্যাপী এ আন্দোলনে বহুসংখ্যক নারী অংশ নেন, যাদের প্রায় কেউই তখন নেকাব পড়েননি।
অর্থাৎ তিউনিশিয়ার এ প্রতিবাদ একটি জনপ্রিয় অভ্যুত্থান যেখানে ধর্ম, আদর্শের সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে এবং ভিন্নমতের এমন এক মডেল হাজির করেছে যেখানে মুসলিম অনুসারীদেরই ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১১