ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার এড়াতে বাংলাদেশিরা জঙ্গলে

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৪
মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার এড়াতে বাংলাদেশিরা জঙ্গলে

ঢাকা: অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে মালয়েশিয়ার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, দোকান-পাট কোথাও অবৈধ অভিবাসীদের খুঁজতে বাদ রাখছে না তারা।



আর এ গ্রেফতার এড়াতে দেশটিতে অবস্থানরত হাজারো অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীরা মৃত্যুকে ভয় না করে দেশটির বন-জঙ্গলে অবস্থান নিয়েছেন। আর আটকৃতদের রাখার কারণে  ভরে গেছে মালয়েশিয়ার ডিটেনশন সেন্টার ও থানাগুলো।
 
গত কয়েক দিনের অভিযানে বাংলাদেশিসহ বহুসংখ্যক অবৈধ অভিবাসী আটক হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আটক বাংলাদেশির সংখ্যা ২৭৫ জন বলে জানায় মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস।
 
মালয়েশিয়া থেকে আমাদের প্রতিনিধি আমজাদ চৌধুরী জানান, কুয়ালালামপুর ও এর আশপাশের এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে, অফিসে, কারখানায়, দোকানে অভিযান চালিয়ে অভিবাসীদের আটক করা হয়েছে। এমনকি অবৈধ শ্রমিকরা যাতে এলাকা ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য বিভিন্ন রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশিসহ হাজার হাজার অভিবাসী দেশটির বিভিন্ন বন-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে অনাহার, অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
কুয়ালালামপুরসহ ক্লানমেরু, আপমাং পয়েন্ট, কোপারিয়া মাইডিনসহ প্রায় দেড়শ স্থানে ব্যাপক তল্লাশি চালায় পুলিশ। কুদুবালাই, চেরাসবালাই, চুঙ্গাভুলু, ডাংওয়ানজি, হাংটুয়া, ডুকিটআমান, স্টেডিয়ানবালাইসহ আরো অনেক ডিটেনশন সেন্টার ও থানা ঘুরে হাজার হাজার আটক অভিবাসী দেখতে পাওয়া যায়।

পলাতক শ্রমিকরা এ গ্রেফতার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে নিজ দেশের সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন উল্লেখ করে সরকারের সহায়তা কামনা করেন।

আমজাদ চৌধুরী  জানান, দেশটির অভিবাসন বিভাগ, পুলিশ ও পিপলস ভলান্টিয়ার কোরের (রেলা) প্রায় ১০ হাজার সদস্য সোমবার মধ্যরাত থেকে রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ পুরো দেশজুড়ে এই অভিযান শুরু করেছে। এর আগে দেশটিতে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হতে দুই ধাপে প্রায় দুই বছর সময় দেয় মালয়েশিয়ায় সরকার। দ্বিতীয় ধাপে বৈধতার প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের ২১ অক্টোবর; এই কার্যক্রম শেষ হয় সোমবার। বাংলাদেশি ছাড়াও ইন্দোনেশীয়, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, চীন, নাইজেরিয়া ও থাইল্যান্ডের অসংখ্য নাগরিক এ অভিযানে আটক হয়েছেন।

মালয়েশিয়া সরকার জানিয়েছে, আটকৃত অভিবাসীদের সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান বা নিজ দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হবে।

এদিকে বাংলাদেশ সরকার আটকৃতদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কোনো খরচ বহন করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী জানান, তারা যদি নিজ খরচে দেশে ফিরতে চায় তাহলে সরকার সাহায্য করবে। অন্যথায় মালয়েশিয়ার আইন ভঙ্গকরার অপরাধে সাজা খেটেই ফিরতে হবে তাদের।
বারবার সুযোগ পাওয়া স্বত্ত্বেও এসব বাংলাদেশি শ্রমিকরা বৈধ না হওয়ায় ক্ষেপেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। তারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম বিষয়ক কাউন্সিলর মন্টু কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৭৫ জন বাংলাদেশি শ্রমিক আটক হয়েছে। অবৈধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকরা ইচ্ছা করেই অবৈধ আছে বিষয়টি এমন নয়। অনেক সময় তাদের ইচ্ছা থাকলেও তারা বৈধ হতে পারে না নানান জটিলতায়। এমন অনেক মালিক আছে যাদেরই কোনো নিবন্ধন নেই। যে মালিকের নিবন্ধন নেই সেই মালিক কিভাবে শ্রমিককে বৈধতা দেবে। এমন নানা জটিলতার কারণেই বহু শ্রমিক অবৈধ থেকে যায়।

তিনি বলেন, আটক এসব শ্রমিকদের দেশে পাঠানোর জন্য সরকার কোনো নির্দেশনা দেয় নি। তাদেরকে নিজ খরচেই দেশে ফিরতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।