নয়াদিল্লি: সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ ও মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির মধ্যস্থলে উদযাপিত হয়েছে দেশটির ৬২তম প্রজাতন্ত্র দিবস। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ছোট-বড় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে ভারতবাসী।
জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুরু করে কেরালা, গুজরাট থেকে আসাম, সব জায়গায় হাজার হাজার মানুষ এ দিনটিতে পতাকা উত্তোলনসহ সেনা, পুলিশ ও স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থীদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির রাজপথ এভিনিউয়ে ১০০ মিনিটের নিখুঁত কুচকাওয়াজ হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশটির সেনা শক্তি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শন করা হয়।
৮ কিলোমিটারের এ কুচকাওয়াজ রাইসিনা হিল থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন হয়ে রেড ফোর্ডে গিয়ে শেষ হয়। হাজার হাজার মানুষ রাস্তা থেকে এবং আরও আরও লাখ লাখ মানুষ টেলিভিশনে এ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।
এ দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইয়োধোয়ুনু এ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার স্ত্রী অ্যানিও অনুষ্ঠানে ছিলেন।
সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডর ইন চিফ এবং প্রেসিডেন্ট প্রতিভা পাতিল সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর অভিনন্দন গ্রহণ করেন।
এসময় সেনাবাহিনীর সংগীত দল ‘সারে জাহা সে আচ্ছা’, ‘গাঙ্গত্রি’, ‘জয় ভারতী’ এবং ‘কাদাম কাদাম বাধায়ে জাও’ এর মতো দেশাত্মবোধক গানগুলোর সুর তোলেন।
আকাশে বিমান বাহিনীর ২৮টি বিমান ও হেলিকপ্টারের জমকালো প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষ হয়।
কুচকাওয়াজ শুরুর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ইন্ডিয়া গেটে অমর জওয়ান জয়তি স্মৃতিসৌধে অজ্ঞাত পরিচয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
দিনটিকে কেন্দ্র করে সারা ভারতজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এখনও পর্যন্ত কোথাও বড় ধরনের কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি।
এমনকি কাশ্মীরে সহিংসতার আশংকায় কারফিউর সমপর্যায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সেখানেও এখন পর্যন্ত সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তবে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজিপি) সমর্থকরা পতাকা হাতে কাশ্মীরের লাল চক থেকে পদযাত্রা শুরু করলে তাৎক্ষণিকভাবে সাত কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কাশ্মীরের শ্রীনগরের বকশী স্টেডিয়ামে প্রজাতন্ত্র দিবসের মূল কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী আবদুল রহিম রাথের। পরে একে একে পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী, বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি।
কুচকাওয়াজের পর স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল রাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানের পর মন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, ‘বর্তমান সমস্যা সমাধানে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই এবং আমি সকলকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ’
প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে স্টেডিয়ামে যাওয়ার সব সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বিশেষ ব্যবস্থায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে বুধবার সকাল থেকেই কাশ্মীর উপত্যকায় মোবাইলের সব নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
এদিকে, অন্যান্য জেলায়ও প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয় এবং নিজ নিজ অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১১