ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

নিলামে পাওয়া যাবে ব্রিটিশ ভিসা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪
নিলামে পাওয়া যাবে ব্রিটিশ ভিসা!

ঢাকা: সাধারণত কেউ দেউলিয়া হয়ে গেলেই তার সম্পত্তি নিলামে তোলা হয়। তবে এবার সম্পত্তি নয় নিলামে উঠছে ব্রিটেনের ভিসা।



তবে কি ব্রিটিশরা দেউলিয়াই হয়ে গেল?

ঘটনা তা না হলেও, রকম সকম অনেকটা সে রকমই।

আগ্রহী বিদেশি ধনীদের জন্য এবার ভিসা নিল‍ামে তোলার পরিকল্পনা করছে ব্রিটিশ অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। অবশ্য আগে থেকেই ‘টিআইইআর’ ভিসার ছদ্মাবরণে এ রকম ‘ফেল কড়ি মাখো তেল’ পদ্ধতি আগে থেকেই আছে দেশটিতে।

নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিদেশি কোটিপতিরা নিলামে ব্রিটেনের ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন, অনলাইনে যে কোনো পণ্য কেনার মতই।

এর মাধ্যমে নিজেদের পরিবার সহ তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্রিটেনে বসবাসের সুযোগ পাবেন।

ব্রিটিশ অভিবাসন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘মাইগ্রেশন অ্যাডভাইসরি কমিটি’ (ম্যাক) একটি পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে পাঠিয়েছে।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রবি নাকি এক সময় অস্তাচলে যেত না, কিন্তু রাণী ভিক্টোরিয়ার যুগও নেই, ব্রিটেনের সেই রমরমা অবস্থাও নেই। অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত দেশটির জন্য তাই প্রয়োজন বিদেশি অর্থের প্রবাহ।

এজন্য গত কয়েক বছর ধরেই ব্রিটিশরা ছলে বলে বিদেশি ধনীদের নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে, এবং অবশ্যই উপযুক্ত সেলামির বিনিময়ে।

২০০৮ সাল থেকে এ ধরণের ভিসা দেয়া হয়েছে মোট ১ হাজার ৬৪৭টি। যার বেশিরভাগই পেয়েছেন রাশিয়ান ও চীনারা, যথাক্রমে ৪৩৩ এবং ৪১৯।

তাদের পেছনেই আছেন যুক্তরাষ্ট্র (৯৩), মিশর (৪৬), ভারত (৪৪), কাজাখস্তান (৪১), ইরান (৩৮),অস্ট্রেলিয়া (৩৬) এবং কানাডার (৩৬) নাগরিকরা।

১৯৯৪ সালে প্রথম ব্রিটেনে চালু হয় এ ধরনের ভিসা। তখন থেকেই বিনিয়োগের অঙ্কটি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রিটিশ সরকার নাকি এখন ভেবে দেখছে অঙ্কটা বাড়িয়ে দেয়া যায় কি না? ন্যূনতম বিনিয়োগের অঙ্ক দ্বিগুণ বাড়িয়ে ২ মিলিয়ন পাউন্ড করার পরিকল্পনা পেশ করেছে ম্যাক।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে টিআইইআর-১ ভিসা ব্যবস্থায় বিদেশিরা দুই থেকে ৫ বছরের জন্য যুক্তরাজ্যে বসবাস করতে পারবেন। তবে সেটা নির্ভর করছে, বিনিয়োগ কত টাকা!

গত বছরের সেপ্টেম্বরের আগের ১২ মাসে ৫৬০ জন বিদেশি কোটিপতি আবেদন করেছিলেন ওই ভিসার জন্য। ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে মাত্র ৫০ জনকে।

তবে নতুন এই পরিকল্পনার সমালোচনা উঠছে খোদ ব্রিটেন থেকেই। ভিসা নিলামের এই প্রক্রিয়াকে তীব্র আক্রমণ করেছেন অভিবাসন আইনজীবীরা। তাদের মতে এর ফলে নতুন ‘ই-বে সংস্কৃতি’র জন্ম নেবে।

সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। অনেকেই বলছে এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুর্নীতি পরায়ন রাজনীতিকদের সুবিধা হবে। লুটপাট করে তারা সহজেই টাকার বিনিময়ে আশ্রয় নিতে পারবেন যুক্তরাজ্যে।

অনেকেই ঠাট্টা করে বলছেন ব্রিটেনের অর্থকষ্ট এতই বেড়ে গেছে যে নিজেদের মাতৃভূমিকে তারা এভাবে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছেন।
 
ব্রিটিশরা এর ফলে তাদের অতীত গৌরববোধ ও আভিজাত্য হারিয়ে ফেলবে, এমন শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেকেই। শুধু টাকা থাকলেই যে কোনো ধরনের লোক যুক্তরাজ্যে প্রবেশ ও বসবাস করতে পারবে, বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না অনেক ব্রিটেন বাসীই।

অনেকে আবার পরিহাস করে বলেছে এর ফলে টাকার জোরে খুব শিগগিরই ব্রিটিশদের হটিয়ে চীনারা যুক্তরাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে।

তবে সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছেন ম্যাকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডেভিড মেটকাফ। তিনি বলেন, অনেকে বলবেন ভিসা বিক্রি খুবই জঘন্য, কিন্তু আগ্রহীদের ফিরিয়ে দেয়ার বদলে, এটাই কি ভালো নয়। আমরা সেটাই করছি।

‘ব্রিটিশ বেনিয়া বুদ্ধি’ আর যাকে বলে !

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।