কায়রো: চরম বিক্ষোভের মুখে মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক তার মন্ত্রিপরিষদ ভেঙে দিয়েছেন। শনিবার নতুন মন্ত্রিপরিষদ
ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এছাড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মুখে মিশরের সব প্রাদেশিক শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট কারফিউ জারির আদেশ দেন।
টানা পাঁচদিন ধরে মিশরে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছে। দেশটির প্রধান শহরগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ ও সহিংসতায় অন্তত ২৬ জন নিহত এবং কয়েকশ লোক আহত হয়েছে।
কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া এবং অন্যান্য শহরে হাজার হাজার লোক বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সরকারি দল এনডিপির প্রধান কার্যালয়, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং বিদেশি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে। শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সুয়েজ এলাকায় ১৩ জন, কায়রোতে ৫ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে।
সিএনএন টেলিভিশন জানিয়েছে, দেশটির গণতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনের নেতা নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মোহাম্মদ এলবারাদিকে গৃহবন্দী করা হয়েছে।
গভীর রাতে বিবিসির খবরে বলা হয়, কারফিউ ভেঙে কায়রোর কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভকারীরা আবার জড়ো হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ রাষ্ট্রীয় টিভি, রেডিও ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবনের বাইরে অবস্থান নিয়েছে। সেনাবাহিনী এখন রাষ্ট্রীয় টিভি ভবন পাহারা দিচ্ছে।
এর আগে বিক্ষোভকারীদের জড়ো হওয়া ঠেকাতে ইন্টারনেট যোগাযোগ, মোবাইল ফোনের কার্যক্রম এবং সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেইসবুক ও টুইটার বন্ধ করে দেয় মিশরীয় কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু জুমার নামাজের পরপরই হাজার হাজার মানুষ রাজধানী কায়রোর রাজপথে নেমে এসে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা মোবারকের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে- "সরে যাও, সরে যাও, হোসনি মোবারক`।
সুয়েজ, আলেক্সান্দ্রিয়া, ইসমাইলিয়াসহ অন্য বড় শহরগুলোতেও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরাও পুলিশের দিকে পাথর ছুড়ে পাল্টা জবাব দেয়।
সন্ধ্যায় কায়রোয় মতাসীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদরদপ্তরসহ অন্যান্য শহরের শাখা অফিসগুলোতে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। স্কাই নিউজ সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
গুরুত্বপূর্ণ শহর সুয়েজ কার্যত রণক্ষেত্র পরিণত হওয়ায় রাস্তায় ট্যাংক নামানো হয়। সেখানে টিয়ার শেলের আঘাতে নিহত হন এক নারী বিক্ষোভকারী।
পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে সন্ধ্যায় কারফিউ জারির ঘোষণা দেয় মিসর সরকার।
রাষ্ট্রীয় টিভিতে জানানো হয়, কায়রো, সুয়েজ ও আলেক্সান্দ্রিয়া শহরে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে কারফিউ বলবৎ থাকবে।
কিন্তু রাতের আঁধার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতা কারফিউ ভেঙে আবার রাস্তায় নামে। ফলে অন্য প্রাদেশিক শহরগুলোতেও কারফিউ জারি করা হয়। একইসঙ্গে সারা দেশে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় সরকার।
রাতে কায়রোর আকাশে সামরিক হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। এর আগে মোহাম্মদ এলবারাদি দুপুরে জুমার নামাজের পর মসজিদ ত্যাগ করার সময় পুলিশ তাকে বাধা দেয়।
হোসনি মোবারককে মতা থেকে সরানোর আন্দোলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফেরেন। জনগণ চাইলে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত আছেন বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন এলবারাদি।
একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, এলবারাদিকে গৃহবন্দী করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র তার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মিসরের ঘটনাপ্রবাহে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন রাতে এক বিবৃতিতে অবিলম্বে মৌলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের জন্য মিশরীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে শুক্রবার রাতে মিশরে ফাইট চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কুয়েত এয়ারওয়েজ।
এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন সহিংসতা এড়াতে মিশরের নেতৃবৃন্দ ও বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।
আন্দোলন শুরুর পর থেকে এক হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১১